রোজাদারের বিশেষ পুরস্কার ও করণীয়

হাওর বার্তা ডেস্কঃআল্লাহপ্রেমে বিভোর হয়ে রহমত ও মাগফিরাত লাভের মাস রমজান। আত্মসংযম, আত্মত্যাগ ও আত্মউন্নয়নের এ মাস সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে গোটা বছরের জন্য ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)।

রমজানের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোজাদার যেমন নিজের ভেতরে আল্লাহর ভয় এবং তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার অভ্যাস রপ্ত করেন, তেমনি পারস্পরিক প্রেম, ভালোবাসা, পরোপকার, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের মতো অতিমানবিক গুণাবলি অর্জন করেন। মোট কথা রোজাদার সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এজন্যই রোজাদারকে অনেক সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম।

হাদিসে এসেছে “জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামে একটি দরজা আছে। রোজাদার ছাড়া আর কেউ সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে যেতে পারবে না।” এটি রোজাদারের বিশেষ মর্যাদা। ‘রাইয়ান’ শব্দের অর্থ হলো খুবই তৃপ্তিসহ পান করা। রোজাদার ব্যক্তি জান্নাতে গিয়ে এমন সুস্বাদু পানীয় পান করবে, যে আর কোনোদিনই সে তৃষ্ণার্ত হবে না। এ বিশেষ পুরস্কার এজন্য যে, সায়েম ক্ষুধার চেয়েও পিপাসায় কষ্ট করে অনেক বেশি।

হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘আমি নবিজির (সা.) কাছে জানতে চাইলাম, হে রাসূল (সা.), আমাকে এমন একটি কাজের আদেশ দিন, যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তখন নবিজি (সা.) বললেন, তুমি সিয়াম সাধনা করো। কারণ এর কোনো তুলনা হয় না।’ ইতিহাস থেকে জানা যায়, এরপর সাহাবি আবু উমামার ঘরে দিনের বেলায় আর কোনোদিন খানাপিনা হয়নি।

রোজাদার আল্লাহর কাছে যেমন মহাসম্মানিত, রোজার প্রতিদান যেমন অকল্পনীয় তেমনি রোজা পরিত্যাগের শাস্তিও ভয়াবহ। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম, একটি সম্প্র্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে! তাদের গলা ফাড়া। গলা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? বলা হলো, এরা সেসব ব্যক্তি, যারা বিনা কারণে রমজান মাসের রোজা ভঙ্গ করেছিল’ (ইবনে খুজাইমা)।

রোজা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইচ্ছায় একটি রোজা ভঙ্গ করে সারাজীবন রোজা রাখলেও একটি ফরজ রোজার সমান হওয়ার নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি প্রয়োজন ও রোগ ছাড়া রমজানের একটি রোজা ভেঙে ফেলল, তার সারাজীবনে এ কাজা আদায় হবে না, যদিও সে সারাজীবন রোজা পালন করে’ (বুখারি, হাদিস : ১৮১১)। তাই সিয়াম সাধনার এ মাসে শরিয়তের পরিপূর্ণ হুকুম মেনে প্রতিটি রোজা যথাযথভাবে আমাদের পালন করা উচিত। তাহলেই আল্লাহ আমাদের মহাসম্মানে ভূষিত করবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর