হাওর বার্তা ডেস্কঃ জলবায়ুযুদ্ধে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনের এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ঐক্যবদ্ধ না হলে জলবায়ুযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত।
শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা ৪৮ উন্নয়নশীল দেশের জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) নেতা। তিনি ওই নিবন্ধে পৃথিবীকে বাঁচাতে এ বছরের শেষ দিকে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৬) বসার আগেই উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা প্রত্যাশা করেছেন। ওই জলবায়ু সম্মেলনকে অর্থবহ করতে তিনি সিভিএফ-কপ২৬ ঐক্যেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কপ২৬ সম্মেলনের আগে আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল একটি জলবায়ু সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জন বিশ্বনেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ পৌঁছে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি আগামী ৯ এপ্রিল কয়েক ঘণ্টার সফরে ঢাকায় আসছেন।
ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘প্রকৃতির রুদ্ররোষের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ না হলে আমাদের পরাজয় নিশ্চিত। যে প্রকৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে, খুব সচেতনভাবে আমরা তাকে ধ্বংস করে চলেছি।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘গ্রেটা থুনবার্গ অথবা বাংলাদেশের কোস্টাল ইয়ুথ অ্যাকশন হাবের তরুণ পরিবেশকর্মীদের আমরা কোন পৃথিবী রেখে যাব? কপ২৬-এ তাদের ভবিষ্যৎ আমরা জলাঞ্জলি দিতে পারি না।’
প্রধানমন্ত্রী গত বছর দ্বিতীয়বারের মতো সিভিএফ সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার কথা স্মরণ করে নিবন্ধে লিখেছেন, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলডা হাইন ২০১৯ সালে অভিযোজনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন। সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের সঙ্গে শেখ হাসিনা ছিলেন সেই সম্মেলনের ‘কো-চেয়ার’। ওই সম্মেলনে তাঁরা সতর্ক করে বলেছিলেন, জলবায়ুর কারণে কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হলেও তাদের কেউ আশ্রয় দিতে চায় না। অভিযোজনের পদক্ষেপ খুবই কম।
হাসিনা লিখেছেন, ‘আমরা তাদের হুঁশিয়ার করে বলেছিলাম, প্রকৃতির রোষ থেকে সুরক্ষার চূড়ান্ত নিশ্চয়তা কোনো দেশ বা কারো নেই।’
প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, বাংলাদেশকে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ‘গ্রাউন্ড জিরো’। জলবায়ু পরিবর্তন এ দেশের বহু মানুষের জন্য অস্তিত্বের সংকট।
তিনি লিখেছেন, ‘এরই মধ্যে ৬০ লাখ বাংলাদেশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুহারা হয়েছে। তার পরও আমরা এক কোটি ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছি, আর সে জন্য আমাদের পরিবেশগত মূল্যও দিতে হচ্ছে। এর ক্ষতিপূরণ আমাদের কে দেবে?’
প্রধানমন্ত্রী সিভিএফের সদস্যদের জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়ার বড় ঝুঁকি প্রসঙ্গে লিখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের ভূমিকা সবচেয়ে কম। জলবায়ু অবিচার বন্ধের জন্য উদ্যোগী হওয়ার এখনই সময়। সিভিএফে নেতৃত্ব নেওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, বড় অর্থনীতির দেশগুলো ২০২০ সালের শেষ সময়ের আগে তাদের উষ্ণায়ন কমাতে পরিবেশগত কার্যক্রমের রূপরেখা হালনাগাদ করতে হিমশিম খাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, প্যারিস সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি মিললেও বাস্তবে তহবিল পাওয়া গেছে এর চেয়ে অনেক কম। জি-২০ দেশগুলোর বিশ্বের মোট কার্বন গ্যাস নিঃসরণের ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী হলেও তারা জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
শেখ হাসিনা কভিড মহামারির কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, এই মহামারির কারণে জলবায়ু, স্বাস্থ্য ও প্রকৃতি ত্রিমুখী সংকটে পড়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘সিভিএফ-কপ২৬ শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নভেম্বর মাসে জলবায়ু সম্মেলনে আমরা ঢাকা-গ্লাসগো-সিভিএফ-কপ২৬ ঐক্যের ঘোষণা চাই।’ সম্মেলনের আগে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর রূপরেখার পাশাপাশি জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করারও আহ্বান জানিয়েছেন।