রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন পরিকল্পিত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। রোহিঙ্গা পরিবারগুলো গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত না হওয়ায় গ্যাস থেকে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে বলে জানানো হয়। কিন্তু গত সোমবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এটিসহ ইতিপূর্বের সকল অগ্নিকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত’ বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ রোহিঙ্গারা। বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার ও ওপারের ষড়যন্ত্রে পরিকল্পিতভাবে এসব অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গারা।

মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. অনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, এটি নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীনকেও তার ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটি এসব বিষয় খতিয়ে দেখবে।

এদিকে গতকাল বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এ আগুনে স্থানীয় অনেক পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদেরকেও সহযোগিতার আওতায় আনা হবে। যাতে তারাও দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগুন লাগার পেছনে যদি রোহিঙ্গারাও জড়িত থাকে তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

অসমর্থিত রোহিঙ্গা সূত্র জানায়, মিয়ানমার সামরিক জান্তা কৌশলে ক্যাম্পে থাকা লোভী বিপথগামী কিছু লোকজনকে হাত করে ক্যাম্পে মারামারি, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করায়। এসব নিয়ে মিয়ানমারের অর্থায়নে কিছু গণমাধ্যমকর্মী দ্রুত প্রতিবেদন তৈরি করে প্রচার করে। এসব প্রতিবেদন আবার সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করছে মিয়ানমারের জান্তারা। রোহিঙ্গা নির্যাতন ও তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার করা মামলায় রোহিঙ্গাদের অপরাধী ও উগ্রবাদী হিসেবে প্রমাণের লক্ষ্যে মিয়ানমার এসব অপকর্ম করাচ্ছে বলে সূত্রটি দাবি করেছে। মিয়ানমারের সেই ইন্ধন ছাড়াও ক্যাম্প কেন্দ্রিক চলমান বিশাল বাজার ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেও স্বার্থান্ধ রোহিঙ্গারা নিজেদের সর্বনাশ করছে বলে দাবি সচেতন রোহিঙ্গাদের। এ সব বিষয় নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, বিপথগামী কিছু রোহিঙ্গা কেরোসিন দিয়ে নিজেদের ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে শুনেছি। শুনেছি ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা দুই গ্রুপে বিভক্ত। তাদের এক গ্রুপ বিপথগামী এবং অপর গ্রুপ সাধারণ নিরীহ। অস্ত্রধারী বিপথগামীরা মিয়ানমার ফিরতে নারাজ। তারা বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নস্যাৎ ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায়। এসব রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে আমার কাছে যেসব খবরাখবর এসেছে তাতে মনে হচ্ছে ঘটনাটি ‘পরিকল্পিত’। সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, একই সঙ্গে কয়েকটি স্থানে আগুন ধরার কারণেই দ্রুত আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই আগুন সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর