লাউ নিয়ে বিপাকে কৃষক, খাচ্ছে গরু

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে লাউয়ের বাম্পার ফলনে হতাশ কৃষক। লাউয়ের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় লাউ এখন গরুর খাদ্যে পরিণত হয়েছে। বাজারে লাউয়ের দাম কমে যাওয়ায় শ্রমিক ও পরিবহন খরচ দিয়ে বিক্রি করলে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনছেন কৃষকরা। আর এ কারণে লাউ এখন জমিতেই ফেলে রাখা হয়েছে।

প্রতিটি লাউ পাইকারি বাজারে ৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে যা খরচের তুলনায় দাম খুব কম। উপজেলার শেখরনগরের কৃষকরা বলছেন যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে সবজি চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে। একদিকে সড়ক অন্যদিকে খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় লাউ, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য সবজি বাজারজাত করতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। আবার নদী পথে লাউ নিতে অনেক সময় ৪ থেকে ৫ দিনও সময় লেগে যায়। আর এ কারণে ফইনপুর, পাউসার, সিংগারডাক, ঘনশ্যামপুর এলাকার খাল গুলো সরকারিভাবে খনন ও সড়ক মেরামত করে দেয়ার দাবি জানান কৃষকরা। এখন পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য সবজি নিলে শ্রমিক ও পরিবহন খরচেই শেষ হয়ে যায় বিক্রির টাকা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৪৪ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩৬ হেক্টর কম।

ফইনপুর গ্রামের লাউ চাষি নুর ইসলাম বলেন, এ বছর আমি ১৮ বিঘা জমিতে একসঙ্গে লাউ ও মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। এতে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত আমি পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছি। এখন তো লাউ ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হয় না। এবার আমার ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লোকসান হবে।

লাউ চাষি আব্দুর রহিম বলেন, তিন গন্ডা জমিতে আমার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার  লাউ বিক্রি হয়েছে। এখন গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাইকারি বাজারে প্রতিটি লাউ ৫ টাকা করে বলায় আমার দোকানের সামনে কিছু টাকা বেশি দামে বিক্রি করার জন্য রেখেছি।

শেখরনগরের সিংগারডাকের লাউ চাষি আবু সাঈদ বলেন, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছি। ১৫ বছর ধরে এ চাষাবাদ করছি। দাম কম থাকায় কোনো মতে খরচ পেয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ পাইনি। লাউয়ের দাম কম থাকায় শ্রমিক ও গাড়ি ভাড়া দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে নিলে লোকসান হচ্ছে। তাই বিক্রি না করে লাউয়ের জমিতেই গরু দিয়ে রেখেছি।

শেখরনগর ও পাউসার ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নমিতা রানী বলেন, আমাদের পরামর্শে বাড়ির আঙিনায় সবজি আবাদ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সবজি বেশি হওয়ায় সবজির দাম কম। ফইনপুর, পাউসার, সিংগারডাক, ঘনশ্যামপুর এলাকায় বিশেষ করে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো চাষে কৃষকরা যে পরিমাণ ফলন পায় সে পরিমাণে বাজার ব্যবস্থা করতে পারে না। স্থানীয়ভাবে বিক্রি করলে পানির দামে বিক্রি করতে হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকার পরেও অনেক কৃষক কষ্ট করে ঢাকায় পাঠায়। তখন খরচ দিয়ে কিছুই থাকে না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর