হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরিশাল নগরীর খান সড়কে স্ত্রী ও স্বামী হারা দুই দরিদ্র বৃদ্ধের ধুমধামে বিয়ে দিয়েছে যুব সমাজ। সেখানে আনন্দ উল্লাসের কোন কমতি ছিল না। খানাপিনাও হয়েছে স্বাভাবিক বিয়ে বাড়ির মতই। আর এসব কিছুর আয়োজনে ছিলেন এক ঝাঁক তরুণ। ৪০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ে শেষে ঘোড়ার গাড়িতে কনেকে বরের বাড়ি পাঠানো হয়।
বর হচ্ছেন বজলু খান (৬৩), মৃত আমির আলীর ছেলে। বর্তমানে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। নগরীর দরগাহবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। দুই বছর পূর্বে স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ওই ঘরে থাকা ১ ছেলে ও ২ মেয়ে তাদের বিয়ের পর পিতার দেখাশুনা করেন না।
কনে হচ্ছেন বকুল বেগম (৫৭), মৃত ইসমাইল আলী খানের মেয়ে। ১০ বছর পূর্বে স্বামী মারা যায়। ওই ঘরে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর তারাও মায়ের কোন খোজখবর রাখেন না। বর্তমানে বকুল খান সড়ক এলাকায় বসবাস করার পাশাপাশি ডিম বিক্রি করেন।
বিয়ের উদ্যোক্তা নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মুন্না, মিলন, মিলা ও ইমান আলী জানান, বরকনের ছেয়েমেয়ে থেকেও না থাকার মত। তাদের দেখাশুনার কেউ নেই। তাদের একাকিত্ব দূর করা এবং অসুস্থ হয়ে পড়লে খবরাখবর রাখতেই এ বিয়ে। এ জন্য বরের পক্ষ থেকে একজন ঘটক পাঠানো হয়। সে প্রথমে কনের সাথে কথা বলেন। এভাবে কিছুদিন চলার পর উভয় পক্ষ রাজী হয়। কিন্তু বিয়ে করার মত তাদের টাকা ছিল না। এমনকি মসজিদে বিয়ে পর জেলাপী খাওয়াবে সেই টাকা নেই। বিষয়টি আমরা জানতে পেরে বর ও কনের সাথে কথা বলি।
এরপর উভয়ে সম্মতিতে শুক্রবার খান সড়ক জামে মসজিদে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে ৩০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য্য করা হয়। বিয়ে পড়ান কাজী মো. আবুল। বিয়ের পর উপস্থিত সকলকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এরপর আয়োজন চলে তাদেরকে ধুমধামে বিয়ে দেয়ার। এ জন্য ৪০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়।
শনিবার দুপুরে ছিল কনে তুলে দেয়ার অনুষ্ঠান। সেখানে বরসহ ৬০ জনকে আপ্যায়িত করা হয়। খাবারের মধ্যে ছিল পোলাউ, রোস্ট, ঝাল মাংস, ইলিশ মাছ এবং মিষ্টি ও দধি। আপ্যায়ন শেষে বরকনেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে খান সড়ক এলাকায় গোড়ানো হয়। এরপর কনেকে নিয়ে দরগাহ বাড়ি ভাড়া বাসায় চলে যান বর।
বর বজলু খান বলেন, আমি কাঠমিস্ত্রির কাজ করে যা পাই তা দিয়ে প্রতিদিনের সংসার চলে যায়। কিন্তু আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একা হয়ে পড়ি। আমার ছেলেমেয়ের বিয়ের পর তারা আর খোজখবর রাখে না। বয়স হয়েছে বেশীরভাগ সময় রোগে বিছানায় পড়ে থাকতে হয়। কেউ যে রান্না করে খাওয়াবে সেই লোক পাওয়া যায় না। এ কারনে এমন একজন মেয়ে খুজছিলাম। যার অবস্থা আমার মতই। তাহলে সে আমার অবস্থাটা বুঝতে পারবে।
বকুল আর আমার একই অবস্থা। দুইজনকেই একাকি বাস করতে হয়। এ জন্য আমি ঘটক পাঠিয়ে তাকে প্রস্তাব দেই। সে রাজী হলে খান সড়কের যুবকরা চাঁদা তুলে ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে দেন। আমি এবং বকুল ভীষন খুশী। এখন বাকী জীবনটা দুজন দুজনের একাকিত্ব গোচানোর সাথে সাথে বিপদআপদেও একজন অপরজনের সাহায্য করতে পারবো।
শনিবার বিয়ের আয়োজনে এলাকাবাসীর মধ্যেও ছিল ব্যাপক উৎসাহ। তারাও বিয়ের আনন্দে যোগ দিয়ে যে যার মত উপহার দিয়েছেন বরকনেকে।
নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেদী পারভেজ খান আবীর বলেন, ওই বিয়েতে আমারও দাওয়াত ছিল। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য অংশগ্রহন করতে পারিনি। তবে নব দম্পত্তিকে দোয়া করেছি। তারা যে আশা নিয়ে এ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তা যেন পরিপুর্ণ হয়।