গৌরনদীতে ফলেছে দুর্লভ ফল জাবুতিকাবা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর চাঁদশি গ্রামের সৌখিন কৃষক সাবেক ইউপি সদস্য নজরুল হাওলাদারের মিশ্রফল বাগানে ফলেছে দুর্লভ উপকারী ফল জাবুতিকাবা। ফলটি যেমন মূল্যবান তেমনি পুষ্টিকর এবং ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ।

এ ছাড়া নজরুলের বাগানে রয়েছে ব্লাক বেরি,পার্সিমনসহ বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ ফলের গাছ। জাবুতিকাবার ফলন্ত গাছ দেখার জন্য প্রতিদিন তাঁর বাগানে আসছেন দর্শনার্থীরা।

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুর অঞ্চলে চাষযোগ্য জাবুতিকাবা ব্রাজিলিয়ান আঙ্গুর গাছ হিসেবেও পরিচিত। জাবুতিকাব ম্যারাটেসি পরিবারের সদস্য হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় ফলটিকে। এটি ব্রাজিলের স্থানীয় চিরসবুজ গাছ যা ঘন চামড়াযুক্ত বেগুনি ফলের উৎপাদন করে, যা বড় আঙ্গুর ফলের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই ফল ব্রাজিলের অন্যতম জনপ্রিয় ফল।

ব্রাজিলিয়ান আঙ্গুর গাছ নামে পরিচিত হলেও প্রচলিত আঙ্গুর গাছের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। তবে মিল আছে ফলের রং ‌ও আকৃতিতে। গাছের কাণ্ড ফেটে ফলন হয়। এর ফুলের মিষ্টি ঘ্রান খুব আকর্ষণীয়।

 

গবেষকদের মতে, ব্রাজিলের মিনাস গেরেইস অঞ্চলে জাবুতিকাবার উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

জাবুতিকাবার আরো কয়েকটি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায় উরুগুয়ে, বলিভিয়া, পেরু, উত্তর-পূর্ব আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়েতে। ১৯৯৪ সালের দিকে জাবুতিকাবা প্রথম আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় সান্তা বারবারায় চাষ হয়। বর্তমানে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি সান ফ্রান্সিসকো এবং সান জোসে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় এর চাষ হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া এবং ব্রাজিলের গাছগুলো ৪৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, গাছ সাধারণত গড়ে ১০ থেকে ১৫ ফুটও বাড়ে। গাছ খুব ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং বীজ রোপণের পর থেকে ফল উৎপাদন করতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় নেওয়ার কারণে অনেকে চাষ করতে আগ্রহী হন না। তবে ফলন্ত গাছের গুটি কলমের চারা রোপণ করলে দুই বছরের মাথায় ফল ধরা শুরু করে।

কৃষক নজরুল ইসলাম হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকা বাণিজ্য মেলা থেকে জাবুতিকাবার দুটি কলম চারা  সংগ্রহ করে আমার মিশ্র ফলবাগানে রোপণ করলে দুই  বছরেই একটি গাছে ফল আসে। প্রথম দিকে ফল একটু কম আসলেও গতবছর ভালো ফলন হয়েছিল। সে ফল আমি  বিক্রি করিনি। আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করেছি। এ বছরও আশাতিত ফলন হয়েছে।’

 

নজরুল চলতি বছর এ গাছ থেকে কলম চারা তৈরি করে ৫০ শতক জমিতে বাণিজ্যিক চাষ করার জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। তাঁর মতে হাতেগোনা কয়েকটি জায়গায় জাবুতিকা ফলের গাছ আছে কিন্তু ফলন্ত গাছ নেই। ময়মনসিংহ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে একটি ফলন্ত জাবুতিকা আছে আর দ্বিতীয়  ফলন্ত গাছটি আমার। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের আবহাওয়ায় চাষযোগ্য জাবুতিকা একটি সম্ভাবনাময় পুষ্টিকর ফল।’

পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন ‘জাবুতিকাবার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যকর উপাদান বিচারে পৃথিবীর উৎকৃষ্ট ফলের মধ্যে এটি একটি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পেন্টাটিন, আয়রন, ফসফরাস, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ভিটামিন ‘ই’ ও ‘বি’ রয়েছে। এ ছাড়া ভিটামিন ‘সি’-এ ভর্তি। রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ক্যানসার প্রতিরোধক উপাদানও।

আইয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ প্রিন্সিপ্যাল নিখিল রায় চৌধুরী বলেন, ‘অসাধারণ ঔষধি ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল জাবুতিকাবা। আইয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রমতে এটিকে দ্রাক্ষা ফলও বলা হয়।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর