যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষক বাংলাদেশি তাহমিনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তাহমিনা বেগম। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৩ বছর বয়সী এই তরুণী যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তাহমিনা যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের ফরেস্ট গেট সেকেন্ডারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। একাডেমিক টিউটর হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে স্যার জন কাস সেকেন্ডারি স্কুলে। এরপর ফরেস্ট গেট স্কুলে ইংরেজির সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১৭ সালে ইংরেজির ইনচার্জ হিসেবে সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে ডেপুটি হেড ইনচার্জ এবং বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

৩৩ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাহমিনা বেগম। তাহমিনা বর্তমানে পূর্ব লন্ডনের ফরেস্ট গেট সেকেন্ডারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মনোবিজ্ঞান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের স্যার জন কাস সেকেন্ডারি স্কুলে একাডেমিক টিউটর হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ এই প্রধান শিক্ষক রোজ সাড়ে ৫টায় বিছানা ছেড়ে ভোরের আলো গায়ে লাগান। সকালের নাশতা খেতে খেতে দেখেন ই-মেইল। এরপর ২০ মিনিট ড্রাইভ করে পৌঁছে যান নিজের স্কুলে। তারপর কাজে ডুব দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফাঁকা ক্যাম্পাস ভালো লাগে না তার।

মনে পড়ে প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের মুখ। এই তো, তারা যেন বারান্দায় হৈ-হুল্লোড় করছে। মাঠজুড়ে তাদের উল্লাস! কিন্তু না, করোনা উলট-পালট করে দিয়েছে বিশ্ব। তবু তাহমিনা দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন নিজের স্কুল। তিনি বলেন, ‘লকডাউন বদলে দিয়েছে রুটিন। পরিবর্তন এসেছে আমার দিনের কর্মসূচিতে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন বাড়িতে। কিন্তু আমি এখনও প্রতিদিন স্কুলে যাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করি। অচিরেই আমি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের দেখতে পাব। খেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাব। তাদের কলকাকলিতে ভরে উঠবে প্রাঙ্গণ।’

অ্যাইম ইন লাইফ
সেই এটুকুন বয়স থেকেই তাহমিনা শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের কথা মনে করিয়ে দিতে তিনি বলেন, ‘আমার অ্যাইম ইন লাইফ ছোটবেলা থেকেই ঠিক করে নিয়েছিলাম। শিক্ষক হওয়াই ছিল আমার স্বপ্ন। স্কুল আমার কাছে অনেক মজার বিষয়। স্কুলে আমি বিতর্ক ও প্রেস টিমে ছিলাম। এই প্রেস টিম বন্ধুদের অসাধারণ একটি গ্রুপ। আমার মতো আমার পরিবারও বিশ্বাস করে যে, শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। আসলে পরিবার থেকেই আমি নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠেছি। তাই শিক্ষক হওয়া আমার কাছে অসাধারণ একটি ব্যাপার। কারণ আমার বড় ভাই এবং বোনও শিক্ষক। 
প্রধান শিক্ষকের দৌড়

পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় বেড়ে ওঠা তাহমিনার। প্রথমে নিজ এলাকার স্যার জন কাস সেকেন্ডারি স্কুলে একাডেমিক টিউটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। স্কুলটি বর্তমানে স্টেপনি অল সেইন্টস স্কুল নামে পরিচিত। এই স্কুল সম্পর্কে তাহমিনা বলেন, ‘আমি এমন এক স্কুলে সুযোগ পাই যেটি আমারই এলাকার। শুধু তাই নয়, এরা আমার হৃদয়ের খুবই কাছের মানুষ। ছাত্রছাত্রীরাও অসাধারণ। আর শিক্ষকরা প্রচণ্ড মেধাবী। তাই শিক্ষক হওয়ার জন্য আমার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই। স্যার জন কাস স্কুলে শ্যাম উদ্দীন ছিলেন আমার প্রথম মেন্টর। শুধু তাই নয়; তিনি আমার ইচ্ছে ও আগ্রহকে প্রশ্রয় দিতেন বন্ধুর মতো। পরে শ্যাম ইংরেজির প্রধান শিক্ষক হিসেবে ফরেস্ট গেট স্কুলে যোগ দেন। আমিও চলে যাই তার স্কুলে। যোগ দিই ইংরেজির দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে। ২০১৭ সালে শ্যাম মারা যান। বিষয়টি খুবই কষ্টের ছিল আমার জন্য। নিজের অভিভাবক যেন হারিয়ে ফেলেছি আমি। শ্যাম চলে যাওয়ার পর দায়িত্ব এসে পড়ে আমার ওপর। যদিও তার অসুস্থ অবস্থায়ও আমি ইংরেজির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করি। ২০১৮ সালে আমি স্কুলের ডেপুটি হেড ইনচার্জ অব টিচিং অ্যান্ড লার্নিংয়ে নিযুক্ত হই। এরপর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব লাভ করি।’

২০২১ সালের চ্যালেঞ্জ

করোনা উলট-পালট করে দিয়েছে বিশ্ব। বদলে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রুটিন। তবু তিনি ছাত্রছাত্রীদের কাছেই আছেন। নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন তাহমিনা। তবে সেটি দৈনিক থেকে গিয়ে সপ্তাহে ঠেকেছে। সপ্তায় একটি ক্লাস নিচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই প্রধান শিক্ষক। ২০২১ সালকে তিনি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। স্কুল নতুন করে শুরু করতে চান। বিশ্বাস করেন, বদলে যাবে বিশ্ব। সব শুরু হবে ফের নতুন করে। করোনা তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের। তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্কুলের প্রিয় বাচ্চাদের গুড মর্নিং বলতে পারছি না। তাদের সঙ্গে বারান্দায় গল্প করতে পারছি না। তবু আমি সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় স্কুল পরিচালনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এখন সে পথেই আগাচ্ছি।’

যত ব্যস্ততা…

তাহমিনার সব ব্যস্ততা এক শিক্ষকতাকে কেন্দ্র করেই। রোজ রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সাড়ে ৫টায় ওঠেন। সপ্তায় একটি ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন তিনি। যেই ক্লাসের ছাত্র তিনি; শিক্ষক নন। মানে এখনও শেখেন তিনি। সকালে রুটিন করে স্কুলে যান। স্কুল থেকে ফিরে ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য জিসিএসই স্টাডি গ্রুপ পরিচালনা করেন। নিয়মিত স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক এবং কর্মীদের খোঁজ-খবর নেন। ওজন কমানোর জন্য ভর্তি হয়েছেন জিমে। সপ্তাহে দু’দিন নিয়ম করে যান জিমে। এতকিছুর পরও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভুলেন না তিনি। পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খান। সকালের নাশতাটাও করেন পরিবারের সঙ্গে। তবে গুরুত্বপূর্ণ মেইল দেখতে দেখতে। ছুটির দিনে ঘুরতে যান পরিবারের সঙ্গে। আর স্বপ্ন দেখেন অচিরেই খুলবে স্কুল। তাহমিনার মতো আমরাও স্বপ্ন দেখি, সব স্বভাবিক হয়ে যাবে। খুলে যাবে স্কুল। নতুন করে জেগে ওঠবে বিশ্ব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর