দক্ষিণ সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধের বেহাল দশা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করার কথা আজ থেকে দেড়মাস আগে। কিন্তু দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওরের বাঁধ পরিদর্শন করে বেহাল দশা পরিলক্ষিত হয়েছে।

উপজেলার পূর্বরীরগাঁও ও দরগাপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওর ঘোরে দেখা যায়, এখনো কোনো বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছেন, যারা কাজ শুরু করেনি তাদের পিআিইসি বাতিল করা হবে।

পিআইসির লোকজন বলছেন, ওয়ার্ক অর্ডার না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

আর দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষেদ চেয়ারম্যান বলছেন, শনবার থকে কাজ শুরু হবে।

শুক্রবার হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কমিটির উদ্যোগে হাওরের বাঁধ পরিদর্শন করতে গিয়ে হাওরের কোথায় বাঁধ হচ্ছে, তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবারও কলমে মাটি কাটবে কী না সন্দেহ করছেন হাওর নেতারা।

দুপুরে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ, সহ-সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইজাজা হোসেন চৌদুরী মাহফুজ, বাঁধ বিষয়ক সম্পাদক ডা. নজরুল ইসলাম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল ইসলাম মিলন, নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান তালুকদার, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আল, সৈয়দ আসাদুজ্জামান আসাদ, শিমুলবাঁক ইউনিয়ন আহ্বায়খ জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকেই পরিদর্শনে যান।

খাই হাওর উপ-প্রকল্পের কি.মি ৬.৮৬৬ হতে কি.মি. ৮.৮৭৬ ডুবন্ত বাঁধের ভাঙা বন্ধকরণ ও মেরামত কাজের পিআইসি নং ২৫ এ গিয়ে দেখা যায়, বাঁধে কাজ শুরু হয়নি। এ প্রকল্পের সভাপতি হচ্ছেন, জুনেদ আহমদ ও সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান। এ প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

একই হাওরের পিআইসি নং ২৬ এ গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাঁধে কাজ শুরু হয়নি। এ প্রকল্পের সভাপতি হচ্ছেন, ফজলুর রহমান ও সেক্রেটারী সজিব নূর। এ প্রকল্পে বরাদ্ধা ধরা হয়েছে ২১ লাখ ১ হাজার টাকা।

দরগা পাশা ইউনিয়নের কাঁচিভাঙ্গা হাওর কি.মি ০.১৫০ হতে ২.৯৬৭ কি.মি বাঁধের পিআইসি নং ৬ এ গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও বাঁধে কাজ শুরু হয়নি, তবে দুর্বাঘাস পরিষ্কার করা হয়েছে ১০ গজ জায়গায়। এ প্রকল্পের সভাপতি হচ্ছেন, আবু খালেদ চৌধুরী ও সেক্রেটারি মিসবাহ উদ্দিন। এ প্রকল্পে বরাদ্ধা ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা।

জামখলার হাওর পিআইসি নং ২ এর সভাপতি আফরোজ মিয়া, সেক্রেটারি রাহেল চৌধুরী। বাঁধের বরাদ্দ ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

পিআইসি নং ৩ এর সভাপতি জগলু, সেক্রেটারি বাচ্চু মিয়া। এ প্রকল্পে বরাদ্দ ১৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

কাঁচিভাঙ্গা হাওরের পিআইসি নং ৭ এর সভাপতি বদরুল ও সেক্রেটারি জবর আলী। এ প্রকল্পে বরাদ্দ ৭ লাখ ৩৩ হাজার।

খাইর হাওর পিআইসি নং ২৭ এর সভাপতি ঝয়জুল হোসেন সেলাল ও সেক্রেটারি ইয়াওর মিয়া চৌধুরী। এ প্রকল্পে বরাদ্দ ১২ লাখ ৬৯ হাজার।

পিআইসি নং ২৮ এর সভাপতি মঈনুল ইসলা, সেক্রেটারি হারুন মিয়া। এ প্রকল্পে বরাদ্দ ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে কোথাও কাজ শুরু হয়েছে এমন চিত্র দেখো যায়নি। বিশেষ করে খাইর হাওরের কোনাডুবি ও চাতলি ভাঙাগুলো বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে।

কৃষকরা জানিয়েছে, এ ভাঙাগুলো বন্ধ না হলে ফাল্গুন মাসে নদীতে পানি একটু বৃদ্ধি পেলেই হাওরের প্রবেশ করবে। জামখলা হাওরের বাঁধ তথা রাস্তা ছয়হারা সলফ অংশ নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে, এদিকেও বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে জামখলা হাওর।

কাঁচিভাঙ্গা হাওরের ৬ নং পিআিইসিতে গিয়ে দেখা যায়, ১০ গজ জায়গায় দুর্বাঘাস পরিস্কার করা হয়েছে। এ সময় কৃষকরা প্রতিনিধি দলের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক জানান, আমরা এখনও ওয়ার্ক অর্ডার পাইনি। কিভাবে কাজ শুরু করবো। এরপরও আমরা দুর্বাঘাস পরিস্কারের কাজ শুরু করেছি।

খাই হাওরের কোনাডুবি ভাঙা থেকে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেবুন নাহার শাম্মীকে ফোন দিলে তিনি জানান, আমরা গতকালের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা কাজ শুরু করবে না সেসব পিআইসি বাতিল করে নতুন পিআইসি করা হবে।

দরগাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন জানান, এখনো আমার ইউনিয়নের কোনো বাঁধে কাজ শুরু হয়নি। আশা করি শনিবার থেকে কাজ শুরু হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর