খরচের তিনগুণ লাভ, সরিষায় আগ্রহ প্রান্তিক কৃষকদের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফেনীতে প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। আবাদী-অনাবাদী জমিতে কৃষকরা এখন সরিষা চাষ করছেন। তাদের ভাষ্য, ধানের তুলনায় সরিষায় খরচ তিন ভাগের একভাগ, খরচের তুলনায় লাভ প্রায় তিনগুণ।

বিগত বছরগুলো থেকে চলতি মৌসুমে ফেনীতে বেড়েছে সরিষার আবাদ। কৃষি বিভাগ বলছে উৎপাদনও বেশি হবে বিগত বছরগুলোর চেয়ে। তবে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি এবং প্রশিক্ষণ না থাকায় এ জেলার চাষিরা সরিষা ক্ষেত থেকে সরিষার পাশাপাশি মধু উৎপাদন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ বলছে এ ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আবাদ আরো বাড়লে মধু উৎপাদনের জন্য কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

জেলায় সরিষা আবাদ নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ফেনীর উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী জানান, জেলায় গত বছর সরিষার আবাদ হয়েছিল এক হাজার ৬৮০ হেক্টর। চলতি বছরে চাষ হয়েছে এক হাজার ৯০৭ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও আবাদের পরিমাণ বেড়েছে ২২৭ হেক্টর।

তিনি জানান, সরিষা চাষ শুরুর সময় (অক্টোবর-নভেম্বর) বৃষ্টি থাকায় চাষাবাদে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করা গেলে তেলের চাহিদা পূরণে আরো বেশি ভূমিকা পালন করা সম্ভব হবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

এ বছর সরিষা আবাদে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৫০০ বিঘা জমিতে। কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাজস্ব বিভাগের প্রকল্পে প্রদর্শনী প্লট করা হয় ৩০০  বিঘা। এছাড়া বিগত বছরে যারা প্রদর্শনী প্লট করেছে তারা এবার ফলোআপ আবাদ করেছে এক হাজার বিঘা।

এক একর জমিতে সরিষা চাষে বীজ ও সেচসহ খরচ পড়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে লাভ থাকে ১৫-১৬ হাজার টাকা

এক একর জমিতে সরিষা চাষে বীজ ও সেচসহ খরচ পড়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে লাভ থাকে ১৫-১৬ হাজার টাকা

ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, সদর উপজেলায় এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে এক হাজার ৫০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চাষাবাদ বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেড়েছে। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকার সারিষা ক্ষেতগুলো ফুলে ফুলে হলুদ প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। কৃষি বিভাগের প্রণোদনা এবং বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

এ বিষয়ে ফেনীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কান্তি সেন বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা সরিষার আবাদে ঝুঁকেছেন। ফলে বেড়েছে আবাদ, বাড়বে উৎপাদন।

প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন তোলার পরপরই বপন করা হয়েছে সরিষা। ফুলের হলুদ চাদরে এখন ঢাকা পড়েছে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ। কম খরচে বেশি ফলন হওয়ায় সরিষা চাষে তাদের আগ্রহ বেড়েছে। বারি সরিষা-১৪ রোপনে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। প্রতি হেক্টরে প্রায় দুই টন ফলন হয়। ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আবাদ করে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঝামাঝি সময়ে সরিষা ঘরে তোলা যায়।

ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া এলাকার আফসার হোসেন জানান, এক একর জমিতে বোরো চাষে বীজ, সেচ, সার, কীটনাশকসহ খরচ পড়ে ২২-২৫ হাজার টাকা, ফলন পাওয়া যায় ২৮-৩০ হাজার টাকার। একই জমিতে সরিষা চাষে বীজ ও সামান্য সেচ খরচসহ খরচ পড়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে একর কৃষকদের লাভ থাকে ১৫-১৬ হাজার টাকা। জমিতে এক কেজি সরিষার বীজ বপন করে তিন কেজি সরিষা পাওয়া যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ফেনীর উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আরো বেশি জমিতে চাষিরা সরিষা চাষ করতে পারলে অচিরেই সরিষার জমিতে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে পরাগায়নের মাধ্যমে ফলন বাড়ানো ও মধু আহরণ করা যাবে। সরিষার ফুল ও সরিষা ঝরে পড়ে মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এটি পরবর্তীতে বোরো আবাদে অধিক ফলন পেতে সার হিসেবে সাহায্য করে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর