শর্ত ভাঙায় খেলাপি ১৪শ কোটি টাকা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের অনগ্রসর ও দুর্গম অঞ্চলে (অফগ্রিড) ঋণ সুবিধার মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে বিপাকে পড়েছে ৫০ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। সরকারি বিদ্যুৎ পেয়ে এসব গ্রাহক এখন আর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছে না। ছুড়ে ফেলে দিয়েছে সোলার প্যানেলও। কিস্তির টাকা আনতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। এ অবস্থায় খেলাপি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৪শ কোটি টাকা। ঋণ আদায় করতে না পেরে সংস্থাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বেকার হওয়ার পথে ৫শর বেশি কর্মী। এদিকে সংস্থাগুলোকে বাঁচাতে সরকার এই ঋণ মওকুফের কথা ভাবছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না, সেখানেই সৌরবিদ্যুৎ কর্মসূচি চালু হয়। এর আওতায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে ইডকল ঋণের জোগান দেয়। তাদের সহযোগী ৫০টি বেসরকারি সংস্থা মাঠ পর্যায়ে গ্রাহকদের কাছে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করে।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সঙ্গে শর্ত ছিল যেসব এলাকায় সৌরবিদ্যুতের প্রকল্প হবে, পরের ১৫ বছর সেখানে আরইবি যাবে না। কিন্তু আরইবি শর্ত ভঙ্গ করে সৌর প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। ফলে গ্রাহকরা সৌর থেকে সরে আরইবির দিকেই ঝুঁকেছে। এখন গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মাঠ পর্যায়ে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এতে বেসরকারি সংস্থাগুলো সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়নে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলে বাধায় পড়ছে এর বিকাশ। এক্ষেত্রে অবশ্য আরইবি বিষয়টির জন্য স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দায়ী করছে। তারা বলছে, জনপ্রতিনিধিদের চাপে ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।

এদিকে খেলাপি হওয়া অর্থের কিছু অংশ মওকুফ করার একটি খসড়া নীতিমালা করেছে ইডকল। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। নীতিমালা অনুযায়ী ঋণ মওকুফ করলে বড় পার্টনাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, লাভবান হবেন ছোটরা।

সূত্র জানায়, ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব সমঝোতার আওতায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছিল। এক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক সোলার হোম সিস্টেম বসাতে চাইলে ইডকল ঋণ কর্মসূচির আওতায় ৭০ ভাগ খরচ বহন করেছে। বাকি ৩০ ভাগ খরচ দিত ইডকলের পার্টনার অর্গানাইজেশন (পিও) এবং গ্রাহক। সোলার হোম সিস্টেম চালু হওয়ার পর গ্রাহক মাসিক কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করত। পিও সেগুলো ইডকলের কাছ ফেরত দিত। এ প্রক্রিয়ায় কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন হচ্ছিল। এভাবেই এ পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৫৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়। এতে উপকৃত হন প্রায় ২ কোটিরও বেশি মানুষ।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে আরইবি এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা এসব অফগ্রিড এলাকায় কাজ শুরু করে। তারা পর্যায়ক্রমে গ্রিড সম্প্রসারণ করে মানুষকে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া শুরু করে। ফলে গ্রাহকরা সোলার বাদ দিয়ে গ্রিডের বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকে পড়ে। একই সঙ্গে তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধও বন্ধ করে দেয়। এতে বিপর্যয়ে পড়ে পিওগুলো। তারা মাঠ পর্যায়ের ঋণ আদায় করতে না পেরে ইডকলের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যেহেতু এই ঋণখেলাপি হওয়ার জন্য বেসরকারি পিওগুলো দায়ী নয় বরং গ্রিড বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি অনেকটা দায়ী, তাই তাদের ঋণ মওকুফ করে দেওয়া হবে। এর আলোকে ইডকল এ ঋণ মওকুফের জন্য সম্প্রতি একটি নীতিমালা তৈরি করেছে। তবে শুরুতেই নীতিমালার কারণে বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে বলে বিতর্ক হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, এ নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে বড় পিওগুলো যারা প্রায় ৬৫ ভাগ অবদান রেখেছেন তারা চরমভাবে বৈষম্যের শিকার হবেন। এমনকি তারা এই ঋণ মওকুফের কোনো সুবিধা নাও পেতে পারেন। উল্টোদিকে ছোট যেসব সংস্থা সম্মিলিতভাবে ৩৫ শতাংশের কম অবদান রেখেছে তারা ব্যাপক সুবিধা পাবেন এবং তাদের প্রায় পুরো ঋণই মওকুফ হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে ইডকলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম এ উদ্যোগের কথা স্বীকার করলেও এক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টির যে অভিযোগ উঠেছে তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, নীতিমালাটি এখন প্রস্তাবের পর্যায়ে রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে সরকারের উচ্চ পর্যায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে বড় সংস্থাগুলো এই ঋণ মওকুফের সুবিধা না পেলেও দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ে তারা পাবেন।

এ সম্পর্কে ইডকলের চেয়ারম্যান এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো সাড়া দেননি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে আরও আলাপ-আলোচনা হওয়া উচিত এবং এমন নীতি গ্রহণ করা উচিত যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় এবং সৌরবিদ্যুৎ কর্মসূচি অব্যাহত থাকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর