খাসিয়াদের মামলা হামলায় নিদ্রাহীন বনকর্তা-ভিলেজাররা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বনবিভাগের সরকারি কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে খাসিয়াদের পানকাটার অভিযোগে ১৪ জন বনভিলেজারসহ অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে মামলার আসামি হতে হয়েছে। আসামি ধরতে র‌্যাব পুলিশ চালাচ্ছে সাড়াশি অভিযান। অভিযানের ভয়ে সন্ধ্যা হলেই ইউনিয়নের ৪ গ্রাম পূরুষশূন্য হয়ে পড়ে। অথচ একই ঘটনায় বনবিভাগের করা মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ কিংবা র‌্যাবের কোন ভূমিকা না থাকায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

রোববার সরেজমিনে কর্মধা ইউনিয়নে গেলে বনবিভাগ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, ফটিগুলি, নলডরি, কর্মধা ও হোসনাবাদ এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা, যারা বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী বা বন ভিলেজার। এসব গ্রামের লোকজন জানান, বনবিভাগের সরকারি কাজে তাদের সহযোগিতা করতে হয় বাধ্যতামূলক। সহযোগিতা না করলে উপকারভোগী হিসেবে অনেক সময় বনবিভাগের কর্মকর্তাদের বিরাগভাজন হতে হয়।

বনভিলেজাররা আরও জানান, বনবিভাগকে সহযোগিতা করতে গেলেই খাসিয়াদের করা মিথ্যা মামলায় আসামি হতে হয়। এসব গ্রামের বাসিন্দা বনভিলেজারদের বিরুদ্ধে ৫-৭টি করে খাসিয়াদের করা মিথ্যা মামলা রয়েছে। সন্ধ্যা নামে কর্মধা ইউনিয়নের র‌্যাব পুলিশের আতঙ্ক নিয়ে। অজ্ঞাতনামার তালিকায় নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে এই ভয়ে কোন পুরুষ মানুষ রাতে গ্রামে থাকে না।

বনবিভাগ জানায়, গত ২১ নভেম্বর সহকারি বন সংরক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিকসহ বনবিভাগের লোকজন ও উপকারভোগীসহ নুনছড়া মৌজায় তাদের একটি সামাজিক বনায়নের চারা বাগানের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনে যেতে চাইলে খাসিয়ারা বাধা দেয়। বনবিভাগের লোকজন খাসিয়াদের বাধা উপেক্ষা করে অগ্রসর হতে চাইলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে একনালা বন্দুক, তীর-ধনুক, গুলতি ও ধারালো দা নিয়ে বনবিভাগের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে বনপ্রহরী মো. আব্দুল হালীম ও বনভিলেজার আমির আলী আহত হন। খাসিয়াদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে বনবিভাগের লোকজন ফিরে আসেন। আহতদের কুলাউড়া হাসপাতালে চিকিৎসা করান।

এ ঘটনায় নলডরি বিটের বিট কর্মকর্তা অজুন কান্তি দস্তিদার কুলাউড়া থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার জানান, খাসিয়াদের হামলার ঘটনায় রাতে মামলা দায়ের করি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করি। কিন্তু খাসিয়ারা ঘটনার দু’দিন পর ২৩ নভেম্বর থানায় গিয়ে পান কাটার অভিযোগে নিরীহ বনভিলেজারদেরকে আসামি মামলা দায়ের করে। পুলিশ সেই মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করেছে। যেখানে ১৭ জনের নাম এবং আরও অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। খাসিয়াদের হামলার শিকার হয়ে আমরা ফিরে আসলাম। এ সময় পান গাছ কাটার কোন ঘটনা ঘটেনি। খাসিয়ারা নিজেরা পান গাছ কেটে মিথ্যা মামলা করেছে।

কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রেজাউল হক জানান, এভাবে খাসিয়ারা মামলা দিলে পাহাড় রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বনভিগের মামলায় কোন আসামি গ্রেপ্তার হয় না রহস্যজনক কারণে। অথচ খাসিয়াদের মিথ্যা অভিযোগে করা মামলায় নিরীহ বনভিলেজাররা এমনকি সাধারণ মানুষও নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় কাজে গিয়ে যদি মানুষ মামলা হামলার শিকার হয়, তাহলে কেউ আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসবে না। তাছাড়া বনবিভাগের দায়িত্ব পালনে যারাই কুলাউড়া আসে, তারা বেশিদিন এখানে টিকতে পারে না।

কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভুষন রায় জানান, আমরা উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটা শান্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবো।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতাকারীদের সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাছাড়া উভয়পক্ষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেবো।

সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে খাসিয়ারা পান চাষের নামে নির্বিচারে বন করছে- এমন অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, বন বিভাগের জায়গা অবৈধভাবে জবরদখল করে খাসিয়ার স্থাপন করেছে কয়েকটি পান পুঞ্জি। একেক পান পুঞ্জিতে ৩০/৩৫ পরিবার আবার কোনো কোনো পুঞ্জিতে ৫০/৬০টি পরিবার গৃহনির্মাণ করে আলিশান জীবনযাপন করছেন। তাদেরকে কোন সরকারি খাজনা, ট্যাক্স কিছুই দিতে হচ্ছে না। যেনো তাদের নিয়মেই চলে পুঞ্জির সবকিছু।

একেক খাসিয়া শত শত একর জায়গায় পান চাষ করে পান বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা মাসিক উপার্জন করছে। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার দেশের কোনো ব্যাংকে তারা টাকা সঞ্চয় করে না। পান বিক্রি বাবত উপার্জিত লাখ লাখ টাকা পাচার করে ভারতে। ভারতে একেক খাসিয়ার জমি, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

পান চাষের খাসিয়ারা নষ্ট করছে বনের সৌন্দর্য্য।এ ক সময় পাহাড়ে বেশ কয়েকটি বাঁশ মহাল ছিল। বাঁশ মহাল ইজারা দিয়ে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেতো। কিন্তু বাঁশ মহালে পান না হওয়ায় সেই বাঁশ মহালগুলো কেটে তাদের দখলে নিয়ে গেছে পান গাছে যাতে ছায়া না ধরে সেজন্য শত বছরের পুরনো গাছে মাথাসহ ডালপাল কেটে ফেলে। বিষ দিয়ে ঘাষ ও লতা-পাতা কেটে পেলে। ফলে হারিয়ে গেছে বনাঞ্চলের হরিণ, বাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির বণ্যপ্রাণীদের আনাগোনা ছিলো। কিন্তু পাহাড় উজাড় করে পান চাষ ও বসতি স্থাপন এবং বন্য প্রাণী শিকার করে খেয়ে ফেলার কারণে বর্তমানে জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর