সময় নিয়ে’ জামায়াত ইস্যু নিষ্পত্তি করবে বিএনপি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শরিক দল জামায়াতকে অসন্তুষ্ট বা বিক্ষুব্ধ করে নয়, বরং আলোচনা করেই জোট থেকে দূরে রাখতে চায় বিএনপি। তা ছাড়া দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও কিছুটা ‘সময় নিয়ে’ বিষয়টি নিষ্পত্তি করার বার্তা পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানাচ্ছে, খালেদা জিয়ার বার্তার পরেই জামায়াতকে দূরে রাখার প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে দলটির মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি জানিয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে আলোচনার জন্য দলের দায়িত্বশীল দুজন নেতাকে এরই মধ্যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার  বলেছেন, ‘জোটে থাকা না থাকার বিষয়ে কোনো আলোচনা এখনো হয়নি। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়ওনি।’ তিনি বলেন, ‘জোটের বিষয়ে আলোচনা হলে সেটি জোটের বৈঠকেই হওয়ার কথা। কিন্তু ২০ দলীয় জোট এখনো অটুট আছে।’

২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জামায়াত প্রশ্নে নতুন কোনো খবর নেই। জোট এখন পর্যন্ত অটুট আছে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, ‘জামায়াত ছাড়ার প্রশ্নে দলীয় ফোরামে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তারা এখনো জোটে আছে।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে কী হবে সেটি সময়ই বলে দেবে।’

মহাসচিব হিসেবে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল। সাধারণ নিয়মে তাঁর বক্তব্যকে দলের বক্তব্য বা সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হয়; যে কারণে জামায়াত প্রশ্নে স্থায়ী কমিটির সব নেতা মতামত দিয়ে বক্তব্য দিলেও ফখরুল এখনো বক্তব্য দেননি। কিন্তু এ কারণেই আবার জামায়াত প্রশ্নে বিএনপির সিদ্ধান্ত আটকে আছে।

তবে জানা গেছে, জামায়াত প্রশ্নে সিদ্ধান্ত হলেই শুধু ফখরুল স্থায়ী কমিটিতে মতামত দেবেন। এর আগে পর্দার আড়ালে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবশ্যই সম্মতির প্রয়োজন আছে।

তবে জামায়াত প্রশ্নে তারেকের দুর্বলতা কম বলে জানা যায়। কিন্তু জোটনেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার এ প্রশ্নে দুর্বলতা ও দায়িত্বশীলতা দুটিই বেশি বলে মনে করা হয়। কারণ তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল, যা পরে ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। আর এ কারণেই সাম্প্রতিককালে বেশ কয়েক দফা আলোচনা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার সবুজ সংকেত না থাকায় এ প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে অস্থিরতা ও হতাশা দুটিই আছে বলে জানা যায়। কারণ জামায়াতকে ছাড়তে না পারলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়া যাবে না বলে মনে করে বিএনপির বড় অংশ। ওই অংশ জামায়াতকে জোট থেকে বের করে উদার ও বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলার পক্ষপাতী।

তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের খবর, দেশি-বিদেশি তৎপরতার পাশাপাশি দলের সিনিয়র নেতাদের তৎপরতা ও পাল্টা তৎপরতার মধ্যেই সম্প্রতি জামায়াতকে দূরে রাখার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে দলটি যাতে রুষ্ট না হয় সেদিকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

সূত্র মতে, এ কারণেই ২০ বছরের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে অসন্তুষ্ট করে এককথায় দূরে সরানোর বদলে আলোচনা বা সমঝোতা করেই দূরে রাখতে চাইছে বিএনপি। দলটি মনে করে, হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই জামায়াতকে জোট থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলে বিএনপির বরং রাজনৈতিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এতে বিএনপির রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে নেতারা মনে করেন। তা ছাড়া হঠাৎ করে দূরে ঠেলে দেওয়ার মতো কোনো ইস্যুও এ মুহূর্তে বিএনপির হাতে নেই। অন্যদিকে ইসলামপন্থী দলগুলোর মেরুকরণ কোন দিকে যায়, সেটিও পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে বিএনপি।

বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের নতুন নেতৃত্বের রাজনৈতিক অবস্থান কী দাঁড়ায়, সেটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে দলটি। হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর গঠিত নতুন কমিটিতে সরকারপন্থীদের তুলনায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সমর্থকদের প্রাধান্য বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। গত ১৫ নভেম্বর ঘোষিত নতুন কমিটির ১৬৭ জনের মধ্যে বেশির ভাগ নেতাই বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সমর্থক বলে আলোচনা আছে। তা ছাড়া নতুন আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমীও সরকারপন্থী বলে পরিচিত নন। বরং বিএনপির সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে কওমি মাদরাসাভিত্তিক ওই সংগঠনটির রাজনৈতিক অবস্থান শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফী প্রথম দিকে বিরোধী ভূমিকায় থাকলেও পরে সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক স্থিতিশীল হয়। ফলে বিএনপির অনেকে হেফাজতের ওপর অসন্তুষ্ট হন বলে জানা যায়।

জানতে চাইলে হেফাজতের নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হেফাজতের কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নেই। ১৩ দফা দাবিদাওয়া আছে এবং এটি সরকার পূরণ করতে পারে। বিরোধী দলের সঙ্গে এখানে কোনো কাজ নেই।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে মিল থাকলে দাবিদাওয়া আদায় করা সহজ। তাই এখন বল সরকারের কোর্টে। তারা দূরে ঠেলে না দিলে হেফাজত অন্য কোনো দিকে যাবে না।’

গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ধারাবাহিক বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগ নেতা জামায়াতকে ত্যাগ করার প্রশ্নে জোরালো মতামত ব্যক্ত করে বক্তব্য দিলেও কৌশলগত কারণে মির্জা ফখরুল এখনো বক্তব্য দেননি। মতামত ব্যক্ত করে গত ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। এ প্রশ্নে ফখরুল অবশ্য কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, নানা আলোচ্যসূচি থাকার কারণে তাঁর বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর