করোনা বাড়াচ্ছে স্থুলতা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বজুড়েই স্থুলতা একটি বড় সমস্যা। অতিরিক্ত ওজন বাড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি। হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগেই মোটা মানুষ বেশি আক্রান্ত হন। এই ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাই এক প্রকার বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। আগে অনেকে বাইরে বের হয়ে হাটা-হাটি করলেও করোনা মহামারিতে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেকে। আর এতে দিন দিন স্থুলতার হার বাড়ছে।

নিজের দিকে খেয়াল রাখতে এই সময় অনেকেই অবহেলা করছেন। সেই সঙ্গে বদলে ফেলেছেন জীবনযাপনের পদ্ধতি। খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুমানোর নিয়ম পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে গেছে সবার। যা দিন দিন সবার ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে। চলুন জেনে নেয়া যাক করোনা কীভাবে স্থুলতা বাড়ানোর জন্য দায়ী-

> ওজন কমাতে শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়াম করার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু করোনার কারণে ঘরেই থাকতে হচ্ছে সবাইকে। বাইরে না যাওয়ার ফলে কমছে শারীরিক পরিশ্রমও। যারা প্রতিদিন সকালে হাঁটতেন, ব্যায়াম করতেন কিংবা বাজারে যেতেন, তারাও সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যার ফলে শরীরে অনায়াসেই মেদ জমা হচ্ছে। আর এই মেদ অন্য কোথাও ঝরার সুযোগও পাচ্ছে না। যার ফলে বাড়ছে স্থুলতা।

> দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পানির ভূমিকা অপরিসীম। তাইতো চিকিৎসকরা প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেন। কিন্তু করোনাকালে ঘরবন্দি জীবন মানুষের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পানের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। ঘরে থাকার কারণে মানুষের শারীরিক পরিশ্রম কম হচ্ছে, তাই পিপাসাও কম পাচ্ছে। যার ফলে কম পানি পান করছেন সবাই। নিশ্চয়ই জানেন, পানি দেহের বিপাকক্রিয়ার গতিই শুধু বৃদ্ধি করে না সেই সঙ্গে এটা পাকস্থলীতে খাবার ধারণের জায়গা কমিয়ে দেয়। যার ফলে খাবার খাওয়া কম হয় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু করোনার কারণে পানি কম খাওয়া হচ্ছে, ফলে বাড়ছে স্থুলতা।

> ওজন কমানোর বড় একটি মাধ্যম হচ্ছে খাবার নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। যেসব খাবার ওজন বৃদ্ধি করে সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা। এছাড়াও নিয়মমাফিক খাদ্যাভাস ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তবে করোনায় ঘরবন্দি জীবন মানুষের খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়িয়ে দিয়েছে। অলস সময় কাটাতে অনেকেই মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখার সময় হাতে রাখছে প্যাকেটজাত খাবার। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কিছু সময় পর পর খাওয়ার কারণে দেহে খুব সহজেই মেদ জমা হচ্ছে। এছাড়াও ঘরে তৈরি নানা রকম ভাজাপোড়া খাবারের প্রতি ঝুঁকছেন অনেকে। যা ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী। মূল কথা, এই সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়ার ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

> করোনার কারণে ঘুমের মধ্যেও দেখা দিয়েছে অনিয়ম। সারাদিন বাসায় থাকা হয় বলে ঠিক সময়ে ঘুমানোর প্রবণতা কমে গেছে। অফিস থাকার কারণে যারা দ্রুত ঘুমিয়ে যেতেন আর সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতেন, তাদের এখন আর সেই তাড়া নেই। তাইতো রাত জেগে মুভি দেখা কিংবা মোবাইলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার হারও বেড়েছে। ফলে ঘুমাতেও হচ্ছে দেরিতে। যা বাড়াচ্ছে স্থুলতা। কারণ রাত জাগলে ওজন বাড়ে তা সবাই জানে। এছাড়া রাত জাগার কারণে ক্ষুধাও বেড়ে যায়, আর ক্ষুধা মেটাতে অসময়ে খাবার খেতে হয়। যা দেহে পরিপাকের সময় না পেয়ে মেদ সৃষ্টি করে।

> দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার কারণে অনেকেরই সকালের খাবার বাদ পড়ে যায়। এছাড়া দেরিতে খাবার খাওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। এর ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে যায় এবং স্বাস্থ্য হানি ঘটে। পরে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়, যা ওজন বাড়িয়ে দেয়।

> করোনাকালে স্থুলতা বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হচ্ছে মানসিক চাপ। কারণ এই সময় অর্থ সংকটে পড়েছেন অনেকই। সংসার কীভাবে চলবে, এই নিয়ে অনেকেই চিন্তায় থাকেন। তাছাড়া অনেকেই হারিয়েছেন চাকরিও। এই মানসিক চাপকে ওজন বাড়ার ক্ষেত্রে নীরব ঘাতকও বলা যায়। মানসিক চাপে থাকলে আমাদের দেহে কর্টিসল হরমোন বেশি নির্গত হয়। এটি ওজন বাড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর