রাজনৈতিক দলের মৃত পদত্যাগকারী, বহিষ্কৃত ব্যক্তির নাম ওয়েবসাইটে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্যের হালনাগাদ করছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখনো দলগুলোর মৃত, বহিষ্কৃত, পদত্যাগকারী ব্যক্তির নাম ইসির ওয়েবসাইটে ঝুলছে। ইসির এই ভুলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে দল ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে।

২০০৮ সালে নিবন্ধন চালু হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর দলগুলোর তথ্যের হালনাগাদ করার নিয়ম আছে। কিন্তু ইসির ওয়েবসাইটে সর্বশেষ তথ্য আপলোড করা হয়নি। যদিও বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল লিখিতভাবে তথ্য জানানোর পরও তা প্রকাশ করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দলগুলো। এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। যেসব রাজনৈতিক দলের তথ্য ওয়েবসাইটে হালনাগাদ নেই সেগুলো শিগগিরই হালনাগাদ করে দেওয়া হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব, দলের প্রধান বা মহাসচিবের নমুনা স্বাক্ষর, নতুন কমিটি গঠনসহ অন্যান্য বিষয় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানানোর নিয়ম রয়েছে। দলগুলোর দেওয়া তথ্য ইসি তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (http://www.ecs.gov.bd/page/ politacal-party-new) প্রকাশ করে থাকে। বেশ কিছু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কাউন্সিল করে বা বিশেষ পরিস্থিতিতে তাদের কার্যকরী বা নির্বাহী কমিটিতে সংশোধন বা পরিবর্তন এনে সে তথ্য ইসিকে সরবরাহ করে।

ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তরিকত ফেডারেশন থেকে দলটির মহাসচিব পদে থাকা এম এ আউয়ালকে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে বহিষ্কার করা হয়। মহাসচিব করা হয় সদস্য সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীকে। কিন্তু ইসির ওয়েবসাইটে দলটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এখনো আউয়ালের নাম বহাল আছে। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানালেও তা আমলে নেওয়া হয়নি।

গত ১১ মে মারা যান ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আবদুল লতিফ নিজামী। কিন্তু ইসির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী তিনি এখনো জীবিত। দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল করে দলটির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে মোস্তফা মহসিন মন্টুকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয় ড. রেজা কিবরিয়াকে। এ পরিবর্তনের ১৪ মাস পার হয়ে গেলেও ইসি দলটির তথ্য হালনাগাদ করেনি। ইতিমধ্যে গণফোরাম থেকে চিঠি দিয়ে এই পরিবর্তনের কথা ইসিকে জানানো হয়। কিন্তু ইসির ওয়েবসাইটে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এখনো রয়েছে মোস্তফা মহসিন মন্টুর নাম।

গত বছর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ভেঙে যায়। দলটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনের নেতৃত্বে একটি অংশ বেরিয়ে এসে জেএসডি নামে আরেকটি দল গঠন করে। আ স ম রবের নেতৃত্বধীন অংশের সম্মেলন হয় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর। সেই সম্মেলনে দলটির সভাপতি পদে পুনর্বহাল হন আ স ম আব্দুর রব। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে অ্যাডভোকেট সানোয়ারকে। দলের সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তনের বিষয়টি লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনেও জানানো হয় জেএসডির পক্ষ থেকে। কিন্তু ইসির ওয়েবসাইটে এখনো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ রয়েছে আবদুল মালেক রতনের নাম।

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে গত বছরের ৩০ জুন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুত্ফর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান। এর পর গত ৬ ডিসেম্বর দলটির সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি হন তাসমিয়া প্রধান আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন অধ্যাপক ইকবাল হোসেন। কিন্তু ইসির ওয়েবসাইটে দলটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এখনো আছে লুত্ফরের নাম ।

২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ব্যক্তিগত কারণে দেখিয়ে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি নেন দলটির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান। গত বছরের ডিসেম্বরে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয় মো. নুরুল কবির ভূঁইয়াকে। তিনি এখনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে এখনো দলটির মহাসচিব আমিনুর।

বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি। নির্বাচন কমিশন দলগুলোকে নিবন্ধন দেয় শর্তসাপেক্ষে। সময় সময় নির্বাচন কমিশন তা খতিয়ে দেখে। কোনো দল শর্ত পূরণ অব্যাহত না রাখলে দলটির নিবন্ধন বাতিল করার ক্ষমতা রাখে ইসি।

বর্তমানে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) শর্ত ভাঙায় নিবন্ধন হারানো ঝুঁকিতে রয়েছে। দলটিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য শুনানির সময় দিয়েছে ইসি। তবে তা করোনার কারণে আটকে আছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর