বায়ুদূষণের প্রভাব: অ্যাজমা বেড়েছে ২৪ গুণ সিওপিডি ৫০মৃত্যু হার ১৯ গুণ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে অ্যাজমা, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমুনারি ডিজিজ) ও এআরআই (অ্যাকিউট রেসপারেটরি ইনফেকশন) রোগ।

গত ৫ বছরের ব্যবধানে অ্যাজমা আক্রান্তের হার বেড়েছে ২৪ গুণ এবং এ রোগে মৃত্যু হার বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। একইভাবে সিওপিডি আক্রান্তের হার বেড়েছে প্রায় ৫০ গুণ এবং মৃত্যু হার ১৯ গুণ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসযন্ত্রের মারাত্মক সংক্রমণের পাশাপাশি আরও নানা প্রাণঘাতী রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এরমধ্যে হৃদযন্ত্রের রোগের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা বা স্ট্রোক ৪০ শতাংশ এবং লাং ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে ৬ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর এনসিডিসি অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এখানে দুটি বিষয় রয়েছে। একটি হল- ‘প্রিভেনশন’, অপরটি ‘কিউর’। স্বাস্থ্য ও সেবা দুটিকে এক করে দেখা ঠিক হবে না।

অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা দেয়া স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ। কিন্তু দেশের সামগ্রিক পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ। বায় দূষণের বিষয়ে আমরা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম) ডা. আয়েশা আক্তার যুগান্তরকে জানান, ধুলা দূষণের কারণে দেশের মানুষদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ গত ৫ বছরে অত্যাধিক বেড়েছে। ২০১৫ সালে বিভিন্ন ধরনের অ্যাজমায় সারা দেশে আক্রান্ত হন ৩৩২৬ জন।

ওই বছর এ রোগে মৃত্যু হয় ৫৬ জনের। ২০১৬ সালে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২২ হাজার ৮৩ জন এবং ১০৯ জন। ২০১৭ সালে আক্রান্ত ছিল ৬৩ হাজার ৬০৮ জন এবং মৃত্যু ৩২৮ জন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭৭ হাজার ৭২২ জন এবং মৃত্যু ৬১৪ জন।

চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ না হতেই আক্রান্ত রোগী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৮০৬ জনে এবং এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫৮৮ জনের। অর্থাৎ মাত্র ৫ বছরেই ধুলা দূষণের কারণে অ্যাজমায় আক্রান্তের হার বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।

একইভাবে ২০১৫ সালে সিওপিডিতে আক্রান্ত হন মাত্র ১৬১০ জন এবং মৃত্যু হয় ৩১ জনের। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ৮৮০৪ জন এবং ২০৬ জন। ২০১৭ সালে ৩২ হাজার ৪০৮ জন এবং মৃত্যু ৬৮৫ জন। ২০১৮ সালে ৭৭ হাজার ৭২২ জন এবং মৃত্যু ৬১৪ জন।

চলতি বছর ডিসেম্বরের ১০ দিনের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৮০৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৮৮ জনের। অর্থাৎ ৫ বছরের ব্যবধানে সিওপিডিতে আক্রান্তের হার বেড়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এছাড়া চলতি বছরে এআরআই-এ আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ২২০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।

এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, অ্যাজমা হল এক ধরনের শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ। যা জন্মগত বা পারিবারিক কারণে হয়ে থাকে।

তবে দূষণজনিত কারণে মানবদেহের শ্বাসনালিগুলো আরও সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং মারাত্মক আকার ধারণ করে। ওই পর্যায়কে সিওপিডি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এআরআই হল শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশন। এগুলো থেকে হতে পারে লাং ক্যান্সার বা ফুসফুস ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই-বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’র বায়ুমান সূচক (একিউআই) সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা ছিল বিশ্বের তৃতীয় বায়ুদূষণের শহর। কিছুদিন এ দূষণের মাত্রা ছিল সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ ইফেক্টস ইন্সটিটিউট ও ইন্সটিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে পৃথিবীতে যে দশটি দেশে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীর যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি ঢাকার বায়ুর মান সূচক ২৪০ থেকে ২৫০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। যা মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে শিশুদের জন্য।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ ধরনের দূষণের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। সনাতনী ইটভাটাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। রাস্তায় মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। আর উন্নয়ন কাজের নামে সারা বছর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি না করে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তিনি বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে উন্নয়ন কাজ ও যারা বাড়ি করছেন তদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। যাতে নির্মাণসামগ্রী বিশেষ করে মাটি, বালু, সিমেন্ট, নুড়িপাথর যত্রতত্র ফেলে রেখে পরিবেশ দূষণ করা না হয়। এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরকে ঘুমিয়ে না থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর