দেশের মানুষের ভালোবাসাই শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বচ্ছ ও নির্মোহ রাজনীতির প্রতীক তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আদর্শচ্যুত হননি কখনই। পরাভূত হননি ক্ষমতার লোভ কিংবা স্পৃহার কাছে। প্রতিহিংসা কিংবা প্রতিশোধপরায়ণতায় কখনও নিজেকে বা নিজের দলকে লিপ্ত করেননি রাজনৈতিক সংঘাতে। এই স্বচ্ছতা ও নিয়মতান্ত্রিকতাই তাকে সবার কাছে করে তুলেছে গ্রহণযোগ্য। নিজের জেলা কিশোরগঞ্জে হয়ে উঠেছেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই মানুষটি আর কেউ নন, বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বাংলাদেশে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা একমাত্র রাষ্ট্রপতি তিনি।

গত বছরের ২৪ এপ্রিল দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেন আবদুল হামিদ। আজ পূর্ণ হচ্ছে এর প্রথম বছর। তৃণমূল পর্যায়ের একজন ছাত্রনেতা থেকে রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হওয়া এই রাজনীতিবিদের জন্য গর্বিত কিশোরগঞ্জবাসী। আজকের এ দিনটি তাদের জন্য আনন্দেরও। দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বছর পূর্তিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মানুষের ভালোবাসাই তার শ্রেষ্ঠ পাওয়া। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের রাজনীতি ও কিছু কিছু রাজনীতিবিদের মধ্যে ত্যাগ ও আদর্শের অঙ্গীকার খুঁজে পাওয়া যায় না। সবাই কেমন যেন নিজের ভাগ্য বদলের অসম দৌড়ে ব্যস্ত। প্রচলিত এই রাজনীতির সংস্কার করা না গেলে দেশ থেকে সুন্দরের চর্চা হারিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

আবদুল হামিদ স্পিকারের দায়িত্বে থাকার সময় নিজের বিচক্ষণতা দিয়ে সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। এরপর প্রথম মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আবারও নিজের কর্মকাণ্ড দিয়ে সব দল ও মতের মানুষের কাছে একজন অসাধারণ যোগ্যতাসম্পন্ন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজের ইমেজ গড়ে তোলেন। এই যোগ্যতা ও বিচক্ষণতাই তাকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং দলের সভাপতির কাছে বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। কিশোরগঞ্জের হাওর জনপদের ভূমিপুত্র, অনুসরণীয় ও বিরল রাজনীতির বরপুত্র আবদুল হামিদ টানা দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ভারতীয় উপমহাদেশে একই ব্যক্তির দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।

রাজনীতিতে আবদুল হামিদের উত্থানপর্বের সূচনা সব রাজনীতিবিদের সামনে এক নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল পর্যায়ের একজন সাধারণ ছাত্রনেতা থেকে কলেজের ভিপি হওয়া, ‘৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মনোনয়নে জাতীয় পরিষদে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হওয়া, মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন নির্ভীক সংগঠক হিসেবে ভারতের বালাট ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করা, ‘৭৫-এর পর দলের দুঃসময়ে সব প্রলোভনকে পাশ কাটিয়ে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কারা নির্যাতন ভোগ করা, কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে সামরিক শাসনের মধ্যেও তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করাসহ সাহসের সঙ্গে নানা দুর্যোগ মোকাবেলা করেছেন তিনি। নিজেকে প্রমাণ করেছেন একজন পরীক্ষিত ও নিবেদিত রাজনীতিবিদ হিসেবে।

দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বছর পূর্তিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। ভাটি-বাংলার এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও শুধু বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনায় অটল থাকার কারণে মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে আজ আমি এই পর্যায়ে এসেছি। জীবনে কোনোদিন বিত্ত-বৈভবকে প্রাধান্য দেইনি। এলাকার মানুষকে ভালোবেসেছি বলেই তারাও উজাড় করে আমাকে ভালোবেসেছে। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া বা নিজের আখের গোছানো নিয়ে কখনও চিন্তা করিনি। সাধারণ মানুষের ভালোবাসাই আমার সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকের রাজনীতি ও কিছু কিছু রাজনীতিবিদের মধ্যে ত্যাগ ও আদর্শের অঙ্গীকার খুঁজে পাওয়া যায় না। সবাই কেমন যেন নিজের ভাগ্য বদলের অসম দৌড়ে ব্যস্ত। রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনীতির এই অশুভ প্রতিযোগিতা বন্ধ করা না গেলে বাংলাদেশ থেকে সুন্দরের চর্চা তিরোহিত হয়ে যাবে।

আবদুল হামিদের জন্ম হাওর উপজেলা মিঠামইনের কামালপুর গ্রামে। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা হাজি মো. তায়েব উদ্দিন ও মা মোছা. তমিজা খাতুন। তার শৈশব কেটেছে নিজ গ্রাম কামালপুরে।

গত সপ্তাহে সরেজমিনে কামালপুরে গিয়ে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতির গ্রামের বাড়ির চমৎকার শিল্পসৌকর্য। তার তৈরি বাড়ির বৈঠক ঘরের সামনে একদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল, অন্যপাশে রাষ্ট্রপতির একটি আবক্ষ ম্যুরাল। বাংলোঘর পার হতেই চোখে পড়ে বিশাল উঠান। উঠানের চারদিকে ইটের দেয়ালসহ টিনের ঘর।

অষ্টগ্রাম-ইটনা-মিঠামইন সংসদীয় আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল হামিদ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন তিনি। পরে একই সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদে আবারও তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন। দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর আবদুল হামিদ ২০তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব লাভ করেন। গত বছরের ২৪ এপ্রিল টানা দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে তার ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ২৪ এপ্রিল। কিশোরগঞ্জের লেখক ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, আবদুল হামিদ তার সততা ও নিষ্ঠার জোরে আজ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তার জীবন থেকে শিক্ষা নিলে আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক আবহে সুস্থতা ও শুভ রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরে আসতে পারে। তিনি নিজেকে সেই মডেলে পরিণত করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর