বেসরকারিতে লাভ, সরকারিতে লোকসান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্রেনগুলো লাভের মুখ দেখলেও, সেই ট্রেনগুলি পুনরায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালিয়ে লোকসান গুণছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মুলত জনবল সংকটের কারণে ৮০টির বেশি ট্রেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে।এতে সরকারিভাবে পরিচালনার তুলনায় আয়ও হচ্ছে বেশি।

এর মধ্যেই কিছু ট্রেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে সরকারিভাবে পরিচালনার করা হয়। তাতে দেখা যায়, এতে আয় কমার পাশাপাশি ট্রেনগুলোতে লোকসান গুনতে শুরু করেছে রেলওয়ে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্র মতে, পূর্বাঞ্চলে ৪৬টি ট্রেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতো। কিন্তু চারটি ট্রেন বেসরকারি ট্রেন ব্যবস্থাপনায় থেকে নিয়ে সরকারিভাবে চালানো হচ্ছে। এতে করে ওই ট্রেনগুলো থেকে রেলওয়ের আয় বাড়ছে না বরং আয় কমেছে বেশ কয়েকগুণ। আর লোকবলের অভাবে যাত্রীরা ট্রেনগুলো থেকে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না।

সরকারি ও বেসরকারি ভাবে পরিচালিত ট্রেনগুলোর আয়ের তুলনা করলে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে গড়ে ৫৭ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির পরও বেসরকারি থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ফিরিয়ে আনা ট্রেনগুলোয় ৮-৯ বছর আগের তুলনায় আয় হ্রাস পেয়েছে।

রেলওয়ের সূত্র থেকে জানা যায়, আখাউড়া-সিলেট-আখাউড়া রুটে চলাচলকারী ১৭/১৮ নং কুশিয়ারা এক্সপ্রেস ৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪, নোয়াখালী-ঢাকা-নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী ১১/১২ নং নোয়াখালী এক্সপ্রেস ফেব্রুয়ারি ২০০৭ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১২, নোয়াখালী-আখাউড়া-নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী ৪৫/৪৬ নং সমতট এক্সপ্রেসও একই সময় পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হতো।

এছাড়াও  ভৈরব বাজার-ময়মনসিংহ-ভৈরব রুটে চলাচলকারী ২৪১/২৪২/২৪৩/২৪৪ নং লোকাল ট্রেন বেসরকারিভাবে পরিচালনা করা হয়। কিন্তু নিয়ম ভাঙার কারণে দুই মাস পরিচালনার পর ২০১২ সালে তার চুক্তিটি বাতিল করা হয়।

সরকারি ও বেসরকারিভাবে পরিচালনায় এই চারটি ট্রেনের আয়ে অনেক পার্থক্য দেখা যায়।

বেসরকারিভাবে পরিচালিত চারটি ট্রেনে বছরে আয় করেছিল পাঁচ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে কুশিয়ারা এক্সপ্রেস থেকে ৭৬ লাখ তিন হাজার, নোয়াখালী এক্সপ্রেস থেকে ৮৩ লাখ ১৬ হাজার, সমতট এক্সপ্রেস থেকে ৩৮ লাখ ৯৩ হাজার ও ভৈরব-ময়মনসিংহ লোকাল ট্রেন থেকে এক কোটি ৬৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা আয় হয়েছিল।

বর্তমানে এ চার ট্রেন সরকারিভাবে পরিচালনা করে বাৎসরিক আয় হচ্ছে মাত্র এক কোটি ৪৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, যা ৮-৯ বছর আগের তুলনায় প্রায় চার কোটি টাকা কম। কিন্তু  দু’বার ৫৭ দশমিক ২০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেও ট্রেন চারটি থেকে বছরে লোকসান করে প্রায় সাত কোটি টাকা ( আগের হিসাব ধরে)।

এমন পরিস্থিতিতে ১০ এপ্রিল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার এসএম মুরাদ হোসেন রেলওয়ের মহাপরিচালক বরাবর চিঠিও দেন।

চিঠিতে মুরাদ হোসেন লেখেন, লোকসান হ্রাস করতে বর্তমানে ৪২টি ট্রেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে পূর্বাঞ্চলে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হলে রেলওয়ের ব্যয় (টিটিই মাইলেজ, টিকিট প্রিন্টিং খরচ) হ্রাস পাবে। তাই উন্নত যাত্রীসেবা ও আয় বৃদ্ধির জন্য চারটি ট্রেন পুনরায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার জন্য উম্মুক্ত দরপত্রের (ওটিএম) মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগের অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘রেলওয়েতে লোকবল সংকটের কারণে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ট্রেন পরিচালনা করা হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারিভাবে পরিচালিত ট্রেনে যাত্রীরা ভালো সার্ভিস পাচ্ছেন না। তারা নির্দিষ্ট সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া আয়ের হিসাব যদি তুলনা করেন, তাহলে বলব বেসরকারিভাবে পরিচালনার সময় হয়তো বগির পরিমাণ বেশি ছিল। বর্তমানে রেলওয়েতে নতুন জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তাই আস্তে আস্তে সবগুলো ট্রেন সরকারি পরিচালনায় নিয়ে আসা হবে। রেলপথমন্ত্রী এ বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন। তার কথা অনুযায়ী, ২০২০ সালের পর কোনো ট্রেন বেসরকারি খাতে থাকবে না।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর