কিশোরগঞ্জে ছাত্রলীগের জেলা সহসভাপতি ইয়াবাসহ আটক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বড় ভাই সাংগঠনিক সম্পাদক আর তিনি নিজে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। ফলে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রভাব আর নিজেদের দলীয় পদ পদবি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরেই দাপটের সঙ্গে ইয়াবার ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন জেলা ছাত্রলীগ নেতা ফখরুল আলম মুক্তা। আর এ কারণেই অনেকটা প্রকাশ্যেই মরণনেশা ইয়াবার ব্যবসা করে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনোই তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো পুলিশ প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে তার ছিল চোখের পড়ার মতো দহরম মহরম। আর এ নিয়ে এলাকাবাসী মনে ক্ষোভ অসন্তোষের অন্ত ছিল না।

কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। বৃহস্পতিবার রাতে ৪৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ র‌্যাব তাকে আটক করেছে।

ওইদিন রাত ১১টার দিকে তাড়াইল-কিশোরগঞ্জ সড়কের তালজাঙ্গা বাজারের কাছ থেকে র‌্যাব-১৪, সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কমান্ডার বিএনএম শোভন খানের নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন।

গ্রেফতারকৃত ফখরুল আলম মুক্তা তাড়াইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজুল হক মোতাহারের দ্বিতীয় ছেলে। ফখরুল আলম মুক্তার গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই তাড়াইল উপজেলার সর্বত্র আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করে। অনেকেই উপজেলার চিহ্নিত এই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারের জন্য র‌্যাবকে ধন্যবাদ জানান।

শুক্রবার দিনভর উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশ করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ উপজেলার সর্বত্র আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

র‌্যাব, পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফখরুল আলম মুক্তা বাবার রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিপ্রত্তি কাজে লাগিয়ে প্রায় ৫-৬ বছর ধরে ইয়াবার ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। তার মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইয়াবা ট্যাবলেটের প্রভাব বিস্তার ঘটে। এতে এলাকার যুবসমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ইয়াবা ট্যাবলেটে আসক্ত হয়ে পড়ে।

কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার ছেলে ও নিজেও জেলা ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় তার এ অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পাননি। এমনকি প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্যের ব্যবসা চালিয়ে আসলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে তাড়াইল উপজেলা যুব সংহতির সাবেক সভাপতি শাহ আলম সিদ্দিকী বলেন, ফখরুল আলম মুক্তার মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইয়াবা ট্যাবলেট ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তাড়াইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলে হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন এত দিন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মুক্তার কারণেই ইয়াবার মরণনেশায় এ অঞ্চলের যুবসমাজ আজ ধ্বংসের পথে। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

উপজেলার সাচাইল গ্রামের বাসিন্দা মো. শফিক মিয়া বলেন, বাবার রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ফখরুল আলম মুক্তা এত দিন নির্বিঘ্নে মাদকের ব্যবসা করেছে। কিন্তু র‌্যাবের কারণে এখন তার মাদক ব্যবসার অবসান ঘটেছে। এ জন্য র‌্যাবকে ধন্যবাদ জানাই।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনার ঝড় বইছে। মো. এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, তার সম্বন্ধে সাবধানে মন্তব্য করতে হবে। কারণ সে তাড়াইলের সিংহ পুরুষের সন্তান, আবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলে বলে কথা।

তরিকুল ইসলাম নিলয় নামে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, এই মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক।

সানিউজ্জামান সোহান মন্তব্য করেছেন, এদের মতো নেতাদের জন্য এখন আওয়ামী লীগদের অপমাণিত হতে হয়। এদের ধিক্কার জানাই। এসব লোকদের অপকর্মের কারণেই তাড়াইলে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।

দিদার হোসেন হীরা নামে আরেক ব্যক্তি নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।

আসাদ্দুজামান জনি নামে আরেকজন লিখেছেন, আমি একজন ছাত্রলীগ কর্মী। ভাবতেই অবাক লাগছে। জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির এ রকম কর্মকাণ্ড সত্যিই লজ্জাজনক।

র‌্যাব-১৪, সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কমান্ডার বিএনএম শোভন খান সাংবাদিকদের জানান, র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অবৈধ অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, অপহরণ, হত্যা, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থানে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ী ফখরুল আলম মুক্তারকে ৪৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ইয়াবাসহ আটক হওয়া ফখরুল আলম মুক্তা এ অঞ্চলের একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ওইদিন ভোর রাতে ফখরুল আলম মুক্তাকে তাড়াইল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে তাড়াইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে ফখরুল আলম মুক্তাকে আসামি করে তাড়াইল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার তাকে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর