জামদানি শাড়ির উৎপাদন খরচ বাড়ছে

রেশম সুতা, রঙসহ কাঁচামালের দাম বাড়ায় জামদানি শাড়ির উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু সে তুলনায় দাম পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে খরচ কমাতে কৃত্রিম সুতা ব্যবহার করছেন, যা থেকে তৈরি হচ্ছে নিম্নমানের পণ্য। ভালো মানের জামদানির উৎপাদন কমে যাওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা কমছে বেচাকেনা। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া জামদানি পল্লীর ব্যবসায়ীরা মন্দায় পড়েছেন।

রূপগঞ্জের বিসিক জামদানি পল্লীর ঝর্ণা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. গুলজার হোসেন জানান, ক্রেতারা কম দামের শাড়ি খোঁজেন। রেশম সুতা দিয়ে সাধারণ মানের একটি শাড়ি তৈরি করতে খরচ পড়ে কমপক্ষে ৫-৭ হাজার টাকা। তবে নাইলনের সুতা দিয়ে একটি শাড়ি তৈরি করতে খরচ পড়ে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। ক্রেতারা বুঝতে পারেন না কোনটা রেশমের শাড়ি, কোনটা নাইলন সুতার শাড়ি। ফলে নিম্নমানের শাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না রেশমের তৈরি শাড়ি।

কাউসার জামদানি হাউজের মালিক মো. হামিদুল্লাহ বলেন, তাঁতিদের স্বল্প সুদে সহজ কিস্তিতে ব্যাংক ঋণ দেয়ার আশ্বাস দেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ সুবিধা পেলেও জামদানি পল্লীর ব্যবসায়ীরা তা পাচ্ছেন না। এমনিতেই জামদানির বেচাকেনা ভালো নয়। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে প্রতিযোগিতায় টেকা সম্ভব নয়।

ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়ায় অনেকে তাঁত বন্ধ করে দিচ্ছেন। জামদানি তাঁতি আলমগীর হোসেন জানান, তার ৪০টি তাঁত ছিল। কিন্তু জামদানির শাড়ির বেচাকেনায় মন্দা, রঙ, সুতা, রেশমসহ বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং কারিগর খরচ বেড়ে যাওয়ায় ১৫টি এরই মধ্যে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জ জামদানি পল্লিতে যেসব শাড়ি তৈরি হয়, তার মধ্যে রয়েছে কড়লা পাইর, তেছরি, কুচি, নিশান পাইর, সব জড়ি, হাফ সিল্ক, কটন, ফুল সিল্কসহ নানা ডিজাইনের শাড়ি।

নোয়াপাড়া জামদানি তাঁত শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমএ বারী বারেক বলেন, সরকার জামদানি শিল্পের জন্য বিসিক

শিল্পনগরী করেই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে। রেশম, সুতা ও রঙ আমদানিতে তাঁতিদের কোনো সহায়তা দেয়া হয় না। জামদানি তাঁতিদের জন্য নেই কোনো আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। কারিগররা এখনো

পুরনো আমলের নকশায় জামদানি শাড়ি তৈরি করছেন। সরকার যদি বিসিকের মাধ্যমে ডিজাইন সেন্টার তৈরি করে জামদানির কারিগরদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত, তা হলে কারিগরা নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করতে পারত।

তিনি জানান, বিসিক শিল্পনগরীতে প্রবেশের প্রধান সড়কটি বেহাল। খানাখন্দের কারণে পায়ে হেটে চলাই দুরূহ হয়ে পড়েছে। মূল গেটের সামনে পানি জমে আছে। কিন্তু মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই।

রূপগঞ্জের তারাবো বিসিক শিল্পনগরী স্টেট অফিসার মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ২০০২ সালে তারাবো নোয়াপাড়া এলাকায় ২০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় জামদানি পল্লী। ৪১৬টি প্লটের মধ্যে ৪০৬টি এরই মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিসিক শিল্পনগরীর রাস্তাঘাট মেরামত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করার জন্য ৩ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ করা হবে। এছাড়া বিসিক শিল্পনগরীতে তাঁতিদের কাজের মান বাড়ানোর জন্য একটি প্রশিক্ষণ রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তা চালু করা যাচ্ছে না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর