জন্ম নিয়ন্ত্রণের শরয়ী বিধান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জন্ম নিয়ন্ত্রণের মৌলিকভাবে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে, ১. স্থায়ী পদ্ধতি। এ পদ্ধতি অবলম্বনে নারী বা পুরুষ বা উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা চিরস্থায়ীভাবে হারিয়ে যায়। এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করা নারি পুরুষ সকলের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সম্পূর্ণ হারাম। -উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪

২. অস্থায়ী পদ্ধতি। যে পদ্ধতি অবলম্বন করলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে না। বরং অস্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সন্তান জন্ম হয় না। যেমন : আযল করা অর্থাৎ সহবাসের চরম পুলকের মুহুর্তে স্ত্রীর যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো, ঈড়হফড়স ঔবষষু, ঈৎবধস, ঋড়ধস, উড়ঁপযব ইত্যাদি ব্যবহার করা, পিল (চরষষ) খাওয়া,জরায়ুর মুখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি। এ পদ্ধতিটি কিছু ক্ষেত্রে বৈধ হবে।

যথা: ১.দুই বাচ্চার জন্মের মাঝে কিছু সময় বিরতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে যেন প্রথম সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্যা ঠিকমত হয়।

২.কোন কারণে মহিলার বাচ্চা লালন-পালনের সামর্থ না থাকলে।

৩.মহিলা অসুস্থ ও দূর্বল হওয়ার কারণে গর্ভধারণ বিপদজনক হলে। এছাড়া অন্য কোনো অবস্থায় অস্থায়ী নিয়ন্ত্রন করাও বৈধ নয়।

হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী পদ্ধতি করতাম।-সহিহ বুখারী, ২/৭৮৪

৪. জন্ম নিয়ন্ত্রনে ৩য় পদ্ধতি হল, বাচ্চা মায়ের গর্ভে আসার পর গর্ভপাত ঘটানো ( অনড়ৎঃরড়হ)। বর্তমান বিশ্বে জন্মনিয়ন্ত্রণের অনেক উপায়-উপাদানের মধ্যে দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে এপদ্ধতিও চালু আছে। এ পদ্ধতিটিও শরিয়তে সাধারণ অবস্থায় নাজায়েয। তবে যদি মহিলা অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে গর্ভপাত বৈধ হবে। কিন্তু গর্ভের মেয়াদ চার মাসের বেশি হয়গেলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা।

কেননা সমস্ত ফুকাহা এব্যপারে একমত যে গর্ভে অবস্থিত সন্তানের দেহে রূহ আসার পর গর্ভপাত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। আর গর্ভের মেয়াদ চার মাস হলেই রুহ চলে আসে।-তাকবীর ৮-৯; ফিকহী মাসায়েল ৪/২১৭৷ সুতরাং উক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে ইসলামি দৃষ্টিকোণে বর্তমান প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণের সকল পদ্ধতি জায়েয নেই। বরং বিশষ কিছু পদ্ধতি জায়েয এবং সর্বাবস্থায় জায়েয নয় বরং ইসলাম বিশেষ অবস্থাতে এর অনুমোদন দেয়। অন্যথায় সাধারণ অবস্থায় ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমরা অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”–হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯৷

বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ধ্যানধারনা হলো, সন্তান বেশি হলে খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদির অভাব পড়বে, সংসারকে সচ্ছল করা যাবে না, দৈহিক সৌন্দর্য বা ফিগার ঠিক থাকবে না, কন্যাসন্তান জন্ম দিলে এদের বিয়ে শাদীর ঝামেলা হবে, অধিক সন্তান নেয়াকে লজ্জার বিষয় মনে করা হয়। ইত্যাদি কারণে পরিবার পরিকল্পনার কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না। তা কোনোভাবেই বৈধ হবে না।

বিশেষ করে অভাবের কারণে সংসারকে সচ্ছল করার নিয়ত জন্ম নিয়ন্ত্রণ করলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। কেননা কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ’দারিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান করে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ। -সূরা ইসরা, আয়াত-৩১৷

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর