৩০ এপ্রিলের আগেই মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের বাইরে নিয়ে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করাতে তারেকের কৌশলে চলছে পর্দার আড়ালে আলোচনা। অন্যদিকে, আন্দোলন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র সব নেতাদের বাদ দেয়ার কৌশল চলছে বিএনপিতে। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জন সংসদ সদস্য শপথ নেয়ার বিষয়েও চলছে গোপনে সমঝোতা। না হলে আটকে যাবে খালেদার মুক্তি! এ নিয়ে অধিকাংশ বৈঠক হচ্ছে ফখরুলের বাসায়। নির্বাচিত ছয়জন সুলতান মনছুর ও মোকাব্বির খানের পথ ধরবে বলেও গুঞ্জন উঠেছে। এদিকে তারেকের পছন্দ অনুযায়ী লন্ডন থেকে করা সমপ্রতি কমিটি নিয়ে বিএনপিতে চলছে অতুষ্টি। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে বিএনপির ঘরে এখন মূল আলোচনা খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি করে দেশছাড়া করা।

খালেদা জিয়া দেশের বাইরে গিয়ে আর না ফিরলে বিএনপিতে তারেকের নেতৃত্বের পথ খোলা। এ নিয়ে এখন ঘরে-বাইরে চলছে পর্দার আড়ালে আলোচনা। দলের মহাসচিব ফখরুল এরশাদ স্টাইলে কথা বলছেন! কখনো বলছেন, প্যারোলে খালেদা জিয়া মুক্তি নেবেন না, আবার কখনো বলছেন, এ বিষয়ে পরিবার সিদ্ধান্ত দেবে, দল নয়। এদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও সমপ্রতি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় নিয়ে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ নিয়ে বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সাংবাদিককে জানিয়েছেন, আগামী ৩০ এপ্রিলের আগেই খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পাচ্ছেন।

আগামী ২৫-২৬ এপ্রিল রাতেই দেশ ছাড়তে পারেন তিনি। এ প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়া বিদেশে যাওয়ার পর দলে কী প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়েও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। প্যারোলের পর দলের ভারসাম্য রক্ষায় তারেকের পছন্দ ও অনুগত ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে দলের ভেতর চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিএনপি নেতাদের মত, আন্দোলন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র সব নেতাই ব্যর্থতার পরিচয়ে এখন প্রশ্নের মুখে রয়েছেন। তারেকের সিদ্ধান্তের বাইরে কথাও বলতে পারছেন না তারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জন সংসদ সদস্য শপথ নেবেন কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্তও তারেকের ওপর চলে গেছে। মওদুদ আহমেদের মতো নেতাদের এখন আর মূল্যয়ন করা হচ্ছে না। এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে নির্বাচনে যাওয়া এবং ভরাডুবির পরও আন্দোলনের ঘোষণা না দেয়ায় নির্বাচনের পর থেকে দলের হাইকমান্ড ও তৃণমূলের সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল-তাদের লোভনীয় পদ দিয়ে ঠাণ্ডা করে ফেলেছেন লন্ডন নেতা।

তবে বাদ পড়ে যাচ্ছেন ত্যাগী ও এক সময়ের ছাত্রনেতারা। কারণ লন্ডন নেতা ভাবছেন, আগামীতে বিএনপির একমাত্র নীতিনির্ধারক হবেন তিনি। দেশের পরিচালনা থাকবে তার হাতে। তাই এখন থেকেই কৌশলে খালেদা জিয়া অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাতে সব বাঁকা পথ অনুসরণ করছেন তিনি, সঙ্গে নিঃশেষ করা হচ্ছে খালেদার শক্তিশালী অনুসারীদেরও। বিএনপি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করছেন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা। জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী দুটি দেশও। কয়েকজন মন্ত্রীও এ ব্যাপারে অবগত। গোপনে দৌড়ঝাঁপ চলছে। গ্রিন সিগন্যাল পেলে খুব শিগগিরই প্যারোলের জন্য আবেদন করবে তার পরিবার। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৫ কিংবা ২৬ এপ্রিল রাতেই হবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে খালেদা জিয়ার ফ্লাইট।

সূত্র জানায়, প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে খালেদা জিয়া প্রথমে রাজি না থাকলেও এ বিষয়ে এখন তিনি আগ্রহী। সে মোতাবেক গত ১৪ এপ্রিল দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন বিএনপির তিন নেতা। তবে বিষয়টি স্বীকার করতে চাইছেন না তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মত, গত ১৫ মার্চ বিএনপির দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে এ প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে গত ৩১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। ওই বৈঠকে দলীয় নেতারা চেয়ারপারসনের প্যারোল নিশ্চিত করতে কূটনীতিকদের সহায়তা চান।

সমঝোতা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য নতুন মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ বোর্ডে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক তথা খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ডা. মামুনকেও রাখা হয়েছে। এখান থেকেই তাকে বিদেশে পাঠানো হবে বলে বিএনপির দুই মধ্যম সারির নেতার ধারণা। এদিকে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ না নিলে বিএনপির ছয়জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। তারা যদি সংসদে না যান; তাহলে খালেদা জিয়াকেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি কেরানীগঞ্জ জেলখানায় যেতে হবে। এমন অবস্থায় গত ১৫ এপ্রিল ছয়জন সংসদ সদস্য শপথ নেবেন কি না সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বিএনপির সিরিজ বৈঠকে।

কখনো গুলশানে আবার কখনো ফখরুলের বাসায়ও চলছে বৈঠক। খালেদার প্যারোল নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্যারোলে মুক্তি চাইতে হয়, না চাইলে সরকার কাউকে জোর করে প্যারোল দিতে পারে না। সমপ্রতি বিএনপির আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি পাওয়ায় বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। খালেদা জিয়া প্যারোলে যাবেন কি না এবং সরকার প্যারোলে দেবে কি না, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

আমরা আইনজীবী হিসেবে বলতে পারি, চিকিৎসার জন্য প্যারোল পাওয়া যায়। তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা তাদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা করছে না আওয়ামী লীগ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা ভিত্তিহীন! আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, দেশনেত্রী প্যারোলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর