কৃষিকাজ ছাড়তে ৬৫ শতাংশেরও বেশি কৃষক নানা সময় অন্য পেশায় চলে যেতে চায়

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৮৩ শতাংশের বেশি কৃষকের আয় পরিবারের চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। এ কারণে ৬৫ শতাংশেরও বেশি কৃষক নানা সময় অন্য পেশায় চলে যেতে চায়। কৃষকদের নিয়ে অ্যাকশনএইড ও খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশে পারিবারিক কৃষি সংকট ও সম্ভাবনা শীর্ষক’ জরিপটি খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রকাশ করা হয়। পারিবারিক কৃষিতে অর্থায়ন শীর্ষক সেমিনারটি খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), অ্যাকশনএইড ও কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রী আয়োজন করে। খানির সভাপতি ড. জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও অ্যাকশনএইডের পরিচালক আসগর আলী সাবরির পরিচালনায়  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিসচিব মোহাম্মদ নাসিরুজ্জামান, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতিসংঘ কৃষি ও খাদ্য সংস্থার পরামর্শক ড. অনিল কুমার দাস। এ ছাড়া মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল বারী বক্তব্য দেন।

270

জরিপের তথ্য বলছে, ৬৫.৪৮ শতাংশ কৃষক কৃষিকাজ করলেও বিভিন্ন সময়ে অন্য পেশায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। অনেক সময় অন্য পেশায় গিয়ে কিছু কাজও করে। কারণ কৃষিকাজ থেকে যে পরিমাণ আয় আসে তা তার পারিবারিক চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। ৮৯৯ জন কৃষকের ওপর এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে। এসব কৃষকের মধ্যে ৮৩.১৫ শতাংশই বলেছে তাদের খামারের আয় পারিবারিক চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।

জরিপের ফল বলছে, ৮৯৯ জন কৃষকের মধ্যে ১৯৩ জন কৃষকের ক্ষেতখামার থেকে মাসিক আয় মাত্র এক হাজার টাকা। ১০৫ জনের আয় এক হাজার এক থেকে চার হাজার টাকা, ১৫৫ জনের চার হাজার এক থেকে সাত হাজার টাকা, ১৫৪ জনের সাত হাজার এক থেকে ১০ হাজার টাকা, ৮০ জনের ১০ হাজার এক থেকে ২০ হাজার টাকা, ২১ জনের ২০ হাজার এক থেকে ৪০ হাজার টাকা এবং ২২ জন কৃষকের মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকার বেশি। অর্থাৎ ৬০৭ জনের মাসিক আয় ১০ হাজার টাকার নিচে।

280

বাংলাদেশের ৭৫ শতাংশ লোক গ্রামে বাস করলেও গ্রামের ৫৯.৮৪ শতাংশ এবং শহরের ১০.৮১ শতাংশ লোকের কৃষি খামার আছে বলে জরিপে বলা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতের অবদান কমে দাঁড়িয়েছে ১৪.২৩ শতাংশ, যদিও রাষ্ট্র কৃষি খাতকে খাদ্য উৎপাদনের প্রধান খাত হিসেবে দেখছে।

বাংলাদেশের পারিবারিক কৃষির চলমান রূপ বোঝার তাগিদে বরিশাল, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ ১১টি জেলার ১৪টি উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের ৮৬টি গ্রাম থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর ভেতর ১৮৪ জন নারী এবং ৭১৫ জন পুরুষ। এর মধ্যে ৭৪৬ জন মনে করে, কৃষি একটি সামগ্রিক পারিবারিক কাজ; ৯১ জন মনে করে, এটি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজের সমন্বয়। শুধু ৬২ জন মনে করে, কৃষিকাজ একটি ব্যক্তিগত কাজ।

310

পারিবারিক কৃষিতে কিছু সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষকের আত্মপরিচয় সংকট, মর্যাদাহীন পেশা, শুধু বাজার ও একক শস্যের উৎপাদনের হিসাবে বিবেচনা করা, কৃষি লাভজনক পেশা নয়, কৃষিজমির বিচারহীন বেদখল ও অকৃষি খাতে এর ব্যবহার, জমির মালিকানাজনিত জটিলতা ও নিরাপত্তাহীনতা, পারিবারিক কৃষির জন্য সহায়ক নীতি ও কর্মসূচির অভাব, কৃষি বিকাশে কৃষি সংস্কার, রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা ও বাজেটের অভাব, কৃষক, উৎপাদক, ক্রেতা, বিক্রেতা ও ভোক্তার ভেতর পারস্পরিক আন্ত নির্ভরশীল সম্পর্ক তৈরি না হওয়াসহ মোট ১৫টি সমস্যার কথা বলা হয়েছে।

290

গবেষক পাভেল পার্থ ও নুরুল আলম মাসুদ বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮০.৫৪ শতাংশ ক্ষুদ্র কৃষক নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। জরিপে পারিবারিক কৃষি জোরদার করতে কৃষিজমি সুরক্ষা ও কৃষিজমিতে কৃষকের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, কৃষি প্রতিবেশভিত্তিক কৃষি সুরক্ষা করা, কৃষিতে যুবসমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের স্বার্থে শস্য বীমা, কৃষকদের জন্য পেনশন স্কিম, বীজ বীমা এবং অণুজীব ভর্তুকি প্রদানসহ ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর