শাল্লায় কাজের অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ!- এক বৃষ্টিতেই ১১৫ বাঁধের ৩৪ টি দেবে গেছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাঁধের কাজের প্রগ্রেস (অগ্রগতি) দেখানো হয়েছে ৯৭ থেকে ৯৮ ভাগ। এটি হাস্যকর, এর কোন বাস্তবতা নেই। এমন হলে একদিনের বৃষ্টিতে এতো বাঁধ ধসে যাবে বা ফাটল দেখা দেবে কেন ? দিরাইয়ের শ্যামারচরের বাসিন্দা কৃষক নেতা অমর চাঁন দাস’এর প্রশ্ন এটি। শাল্লা উপজেলার লাগোয়া গ্রাম শ্যামারচর। শ্যামারচরের বাসিন্দা অমর চাঁন দাস জানালেন, অনেক গ্রাম থেকেই ফোন আসছে, হয় বাঁধ ধসে গেছে, না হয় ফাটল দেখা দিয়েছে।

শাল্লা উপজেলার একাধিক কৃষক নেতা জানালেন, তাঁদের জানা মতে উপজেলায় বাঁধ হয়েছে ১১৫ টি, এরমধ্যে ৩৪ টি বাঁধে ফাটল বা ধস দেখা দিয়েছে। এমনভাবে ধস দেখা দিয়েছে, যা দেখে যে কেউ উৎকণ্ঠিত হবেন। শাল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি পিসি দাস জানালেন, ‘৯৮ ভাগ প্রগ্রেস দেখানো বাঁধ ধসবে কেন? বাস্তবে বাঁধের প্রগ্রেস ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ হয়েছে।’ তিনি জানালেন, বাঁধের প্রগ্রেস বেশি দেখানো হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইস) এবং কর্তৃপক্ষ দুইপক্ষই লাভবান হন। এজন্য এমন প্রগ্রেস দেখানো হয়।

শাল্লা উপজেলার একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, ভান্ডাবিল হাওরের হরিনগর বাঁধ, একই হাওরের নোয়াগাঁও-মৌয়াপুরের মধ্যের ৩ টি বাঁধ এবং নোয়াগাঁও ও হবিবপুরের মধ্যের বাঁধ ধসেছে। বরাম হাওরের নোয়াগাঁও’এর নদীর পূর্বপাড়ের উত্তর পাশের পাঠাকাউরি বাঁধ, নোয়াগাঁও থেকে শ্বাসখাই পর্যন্ত ৩ টি বাঁধ, এই হাওরের ব্রাহ্মণগাঁওয়ের পাশের বাঁধ দেবেছে। ছায়ার হাওরের শুকলাইনের বাঁধ, মাদারিয়া বাঁধ, মুক্তারপুরের পাশের বাঁধ, কৃষ্ণপুর থেকে মুরাদপুরের বাঁধ, মধ্যবর্তী স্থানের দুটি বাঁধ, জয়দেব পাশা হতে শ্রীহাইল পর্যন্ত পর্যন্ত ৩ টি বাঁধ, শ্রীহাইল থেকে কার্তিকপুর পর্যন্ত ৪ টি বাঁধের কোথাও ফাটল দেখা দিয়েছে কোথাওবা দেবে গেছে।

কালিকোঠা হাওরের শর্মা থেকে রাহুতলা পর্যন্ত ৪ টি বাঁধ, নিচগাঁও থেকে দিরাই সীমানা পর্যন্ত ২ টি বাঁধেরও একই অবস্থা। উদগল হাওরের মধ্য কাশিপুরের বাঁধে ফাটল, চাকুয়া নতুন হাটির বাঁধে ফাটল, ভোলানগর বাঁধে ফাটল, রঘুনাথপুরের উত্তর পাশের বাঁধ, দক্ষিণ পাশের বাঁধ এবং ভেড়া মোহনার পুটিয়ার কান্দা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
কালিয়াকোঠা হাওরপাড়ের কাশিপুর গ্রামের কৃষক মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘বাঁধের কাছে থেকে মাটি তোলা হয়েছে। দুর্মুজও কম করা হয়েছে। এ কারণে এই অবস্থা।’

শ্যামারচরের কৃষক নেতা অমর চাঁন দাস বলেন, ‘দুর্মুজ কম হয়েছে, বাঁধের নীচের বালু মাটি কেটে বাঁধে দেওয়া হয়েছে। স্লোপ কম হয়েছে, ঠিকভাবে ঘাস লাগানো হয়নি । এ কারণে বৃষ্টি হতেই বাঁধের এই অবস্থা।’ পাউবো শাল্লা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী শমশের আলী জানালেন, ‘দেবে যাওয়া বাঁধে শ্রমিক লাগানো হয়েছে। দুই দিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। জিও টেক্সটাইল কয়েকটি বাঁধে দেওয়া হয়নি, এগুলোতে জিও লাগবে না, এজন্য দেওয়া হয়নি, এই টাকা ফেরৎ যাবে।’ এই উপজেলায় বাঁধের কাজের ৯৭-৯৮ শতাংশ প্রগ্রেস দেখানো হলো, অথচ. ৩৪ টি বাঁধে ফাটল এবং ধস দেখা দেয় কীভাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রকৌশলী শমশের আলী বলেন,‘মাটির কাজ হয়ে গেলে শতভাগ প্রগ্রেসও দেখানো যায়। অতিবৃষ্টি হওয়ায় পানি যেদিকে নেমেছে, সেদিকে কিছু ফেটেছে, দেবেছে। এগুলো ঠিক করা হবে।’

সুনামগঞ্জ পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘শাল্লার কৃষকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। এখন যারা বলছেন দুর্মুজ হয়নি, তাঁরা এগুলো আগে বললে বা কাজ বন্ধ রাখলে ভালো হতো। প্রত্যন্ত এই উপজেলায় আগে টাকা বরাদ্দ হতো, কিন্তু বাঁধের কাজই হতো না। গত দুই বছর হয় কাজ আদায় করা হচ্ছে। জিও টেক্সটাইল যেখানে যেখানে লাগানোর কথা অবশ্যই লাগাতে হবে।’ ভারী বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় ২৫ থেকে ৩০ টি বাঁধে ধস নেমেছে বলে পাউবো দাবি করলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষক সংগঠকরা জানিয়েছেন, কমপক্ষে ৬০ টি বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। জেলার ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ এবং তাহিরপুরের বাঁধে ফাটল ও ধসে যাবার খবর পাওয়া গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর