শিশুরাই আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে: প্রধানমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। তাই তাদের দেশ প্রেমের আদর্শ নিয়ে বেড়ে উঠতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে শিশুদের জীবন গঠনের আহ্বান জানান তিনি।

টুঙ্গিপাড়ায় আজ রোববার দুপুরে জাতির পিতার জম্ম দিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপেক্সের পাবলিক প্লাজায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় এবং গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুরাই একদিন দেশের নেতৃত্ব দেবে। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এখন থেকেই নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিশুদের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে তার সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানব দরদি ছিলেন। নিজের বই গরিব ছাত্রদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। স্কুলে যাওয়ার সময় নিজের ছাতা অন্যকে দিয়ে দিতেন। নিজের গোলার ধান বের করে নির্দিধায় গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতেন তিনি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছেন মানুষের জন্য। মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়েই বারবার কারাবরণ করেছেন। সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতিসংঘের আগেই ১৯৭৪ সালে শিশু অধিকার রক্ষায় শিশু আইন করেন বঙ্গবন্ধু।

তিনি বলেন, ৭৫ এর পর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। আর সেই ভাষণ আজ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণের একটি। তিনি আরও বলেন, শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার কাজ করছে সরকার। বঙ্গবন্ধু যে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন। সেটি বাস্তবায়ন করাই এখন লক্ষ্য।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা একটি সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ একটি উন্নত জীবন পাবে, এটাই তার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সে কাজ তিনি করে যেতে পারেননি। ১৫ই আগস্ট তাকে মেরে ফেলা হলো। আমি পরিবার হারালাম, আপনজন হারালাম কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ হারিয়েছিল তাদের স্বাধীনতার চেতনা, উন্নত জীবন পাওয়ার সম্ভাবনা।’

তিনি বলেন, ৭৫ এ আমার পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার ৬ বছর পর দেশে ফিরে প্রতিজ্ঞা নিয়ে ছিলাম, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশে যখন ফিরে আসি জানতাম, যে কোন সময় আমাকেও এই পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না, উন্নত জীবন পাবে। এটা নিশ্চিত করাই এখন লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে। ২০২০ সাল থেকে ২১ সাল পর্যন্ত মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’শিশু প্রতিনিধি আরাফাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

শিশু কিশোর সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে লেখা চিঠি নামে একটির বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে জেরা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলা ব্র্যান্ডিং এর লোগোর রেপ্লিকা উপহার হিসেবে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুকে লেখা শ্রেষ্ঠ চিঠি’ পাঠ করে শিশু সুরাইয়া ইয়াসমিন। পরে প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। সেখানে ‘আমার কথা শোন’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। শিশু সমাবেশ শেষে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে প্রধানমন্ত্রী দর্শক সারিতে বসে শিশুদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বইমেলা উদ্বোধন করে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের আঁকা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরআগে সকাল ১০ টা ১৯ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ গোটা জাতির পক্ষ থেকে স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধুর প্রতি ৯৯ তম জম্ম বার্ষিকীর শ্রদ্ধা নিবেদেন করেন। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষন বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীর পাশে নিরবে দাড়িয়ে থাকার পর পবিত্র সুরা ফাতেহা পাঠ করেন। তারা বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করেন। পরে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সমাধি সৌধের পাশে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন।

এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বঙ্গবন্ধু সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দোয়া মোনাজাত করেন। ডেপুটি স্পীকার এ্যাড. ফজলে রাব্বি মিয়া দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন।

এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লেঃ কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, হাসান মাহমুদ, টিপু মুন্সী, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আলহাজ্ব শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, হাবিবুর রহমান সিরাজ, এ.কে.এম এনামুল হক শামীম, বিপ্লব বড়ুয়া, গাজী হাফিজুর রহমান লিকু, এস এম কামাল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর চাচা শেখ কবির হোসেন, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ ফজলে ফাহিম, শেখ সারহান নাসের তন্ময়, শেখ ফজলে নাঈম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, তিন বাহিনী প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহযোগী, অঙ্গ, ভাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক পেশাজীবী ও শ্রমজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি জম্ম দিনের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

বাঙ্গালী জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি জম্ম দিনের শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার সকাল ১০ টার দিকে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে আসেন। সঙ্গে আসেন ছোট বোন শেখ রেহানা। ১০ টার কিছুপর রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে স্বাগত জানান।

টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ১১ টার কিছুপর রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন। মধ্যাহ্ন ভোজের পর বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর