ইঁদুরের উপদ্রপে দিশেহারা বিশ্বম্ভরপুরের কৃষকরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বম্ভরপুরের ছোট বড় হাওরগুলোর বোরো ধানে ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ইঁদুর মারার বিষটোপ, ইঁদুর আটকানোর যন্ত্র, কোন কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না ইঁদুররের দলকে। কৃষকরা বলেছেন,‘প্রতি ৪ একর (বার কেয়ার) জমির অন্তত ১ কেয়ার জমি নষ্ট করে দিচ্ছে ইঁদুর। প্রতিদিনই ইঁদুরের আক্রমণ বাড়ছে। জমি নষ্টের পরিমাণও বাড়ছে।’ কৃষি কর্মকর্তারা বললেন,‘বৃষ্টি কম হওয়ায় ইঁদুরের আক্রমণ বেড়েছে। ইঁদুর দমনে কৃষকদের নানা পরামশর্ দেওয়া হচ্ছে।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওরসহ ছোট খাটো হাওর মিলে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো’র আবাদ হয়েছে। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ ধানের গাছে থোড় আসার সময় ইঁদুরের আক্রমণে চিন্তিত কৃষকরা।

কৃষকরা জানালেন, জেলার অন্যান্য উপজেলায় বৃষ্টি হলেও এই মওসুমে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বৃষ্টি কম হয়েছে। এ কারণে ইঁদুর বেড়ে গেছে। উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বোরো ধানে ইঁদুরের আক্রমণের কথা তুলেছেন অনেকেই। উপজেলার করচার হাওর, শনির হাওরের বিশ্বম্ভরপুর অংশে এবং হালির হাওরের বিশ্বম্ভরপুর অংশে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি।

উপজেলার মুক্তিখলা গ্রামের কৃষক মশিউর রহমান বললেন,‘ইন্দুরে (ইঁদুরে) কাইট্টা (কেটে) সর্বনাশ করিলার। অর্ধাঅর্ধি (অর্ধেক) ধান কাটিলার। চাট পাতানি, বিষ দেওয়ায়ও কোন কাম (কাজ) হচ্ছে না। হাওরজুইড়া এক অবস্থা, আমার ১৬ কেয়ার জমিনের ( জমির) দেড় কেয়ারের মতো কাইট্টা শেষ। ইরকম হকল (সকল) কৃষকেরই কাটতাছে।’

ফতেহ্পুর গ্রামের কৃষক প্রসূন কান্তি দাস বলেন,‘ধানের গোড়ায় কেটে ফেলছে ইঁদুরের দল। থোড় আসার সময় এমন উপদ্রপে কৃষকরা চিন্তিত। এখন যা কাটবে, সবই নষ্ট হয়ে পড়বে, আর গেরা দেবার সময় নেই।’ কৃষকরা জানালেন, কৃষি সুপারভাইজার শফিক মিয়া পরামর্শ দিয়েছেন, ইঁদুর ধরে পয় নিস্কাশনের পথ সেলাই করে ছেড়ে দিলে ওই ইঁদুর পয় নিস্কাশন করতে না পেরে পাগলের মতো দৌঁড়াবে। এই ইঁদুরের অবস্থা দেখে অন্যান্য ইঁদুরও পালাবে।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস বলেন,‘ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে, কিন্তু এখনও বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি। কৃষকদের জানানো হচ্ছে, ইঁদুরের দল যেদিকে চলাচল করে ঐ পথে গমের বিষটোপ ফেলে রাখতে হবে। ইঁদুরের গর্তে গ্যাস টেবলেট দিতে হবে। শুটকির সঙ্গে জিংক ফসপাইট মিশিয়ে ইঁদুরের চলাচলের পথে দিতে হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বশির আহমদ বলেন, ‘ইঁদুরের উপদ্রব ঠেকাতে কৃষকদের সচেতন করার জন্য যা যা করার সব কিছুই করার জন্য সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ইঁদুর নিধনের দুই ধরনের বিষ রয়েছে। এক ধরনের বিষ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইঁদুর মারা যায়। আরেক ধরনের বিষ খেলে দুই-তিন দিন পরে মরে ইঁদুর।

কৃষকরা সমন্বিতভাবে এক ধরনের বিষটোপ জমিতে বা ইঁদুরের চলাচলের পথে দিতে হবে। যার জমিতে ইঁদুর আক্রমণ করেছে, কেবল সেই কৃষক বিষটোপ দিলে কোন লাভ হবে না। বিষটোপ দেওয়া হয়েছে বুঝতে পারলে অন্য জমিতে গিয়ে আক্রমণ করবে ইঁদুর। এজন্যই যেখানে ইঁদুর আক্রমণ করেছে, এর আশপাশের সকল কৃষক মিলে যার যার জমিতে বিষটোপ দিতে হবে। এছাড়া জমিতে ডালপালা পুতে রাখতে হবে। ডালপালায় পাখি এসে বসবে। বিশেষ করে প্যাঁচা এসে বসলে প্যাঁচা ইঁদুর খেয়ে থাকে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর