মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীত বিদায়। গরম পড়তে শুরু করেছে দেশ জুড়ে। গরমকাল শুরুর সাথে সাথে মশার উপদ্রবও বৃদ্ধি পেয়েছে। মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছে রাজধানীবাসী। রাজধানী বাসীর দাবি, প্রতিদিন সকাল-বিকেল দু’বেলা মশা নিধনে বিষাক্ত কীটনাশক ছিটানোর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। মশক নিধনকারী কর্মীদের দেখা পাওয়াও কোঠিন।

অন্যদিকে দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বলছেন-বাসাবাড়ির আঙিনা, ফুলের টব, ছাদের বাগান, ভবনের চৌবাচ্চা, এসি-ফ্রিজ থেকে জমা পানিতে মশার বংশ বিস্তার বেশি ঘটে। এসব স্থানে মশক নিধনকর্মীরা যেতে পারেন না। এ ছাড়া অন্যসব জায়গায় ওষুধ ছিটানোর ব্যাপারে শ্রমিকরা সঠিকভাবেই কাজ করছেন। আর ইদানীং মশার উপদ্রব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, সে কারণে শিগগিরই মশা নিধনে আরো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে নগরবাসীর অভিযোগ, শীতকালে মশার দাপট কম থাকলেও গরম শুরু হওয়ায় উৎপাত বেড়েছে। জলাশয়গুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এমনকি ড্রেনে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল জমে থাকায় পানি ঠিকমতো নামতে না পারায় দূষিত পানিতে মশার জন্ম হচ্ছে। যার প্রকৃত উদাহরণ গুলশান-বনানী লেক, রামপুরা খাল, মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল ও রূপনগর খাল। এসব খাল ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। এসব জলাধার পরিষ্কার না হওয়া মশার বংশ বিস্তার দ্রুত বাড়ছে।

দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মশা নিধন কার্যক্রমের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) চলতি অর্থবছরে ২৬ কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মশক নিধনে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সূত্রমতে, ডিএসসিসিতে মশার ওষুধ ছিটানোর ৯৪০ মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে হস্তচালিত, ফগার ও হুইল ব্যারো মেশিন কিন্তু অর্ধেক মেশিনই প্রায় অচল রয়েছে। অন্যদিকে ডিএনসিসিতে হস্তচালিত, ফগার, হুইল ব্যারো, ভ্যাহিক্যাল মাউন্টেড ফগার মেশিন মিলিয়ে মশা নিধনের মেশিন রয়েছে ৬৫৩। এর মধ্যে অর্ধেকই নষ্ট। সব মিলিয়ে রাজধানীর মশা নিধনে অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন।

মশা নিধনে গৃহিত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান বলেন, নগরীতে যারা মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এমন বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ডিএনসিসি আলোচনা করেছে। তা ছাড়া নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

নগরীতে মশা বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যত দ্রুত অপরিকল্পিত নগরায়ণ হবে তত দ্রুতই কিন্তু বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে, ডোবা-নালা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া অনেকে স্থানে ড্রেনের ওপর বস্তি এবং দোকান গড়ে ওঠায় একদিকে মশার নিরাপদ বংশ বিস্তার ঘটছে। অন্যদিকে এই পতঙ্গটি নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতারও সৃষ্টি হচ্ছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি দফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতাকেও একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। শুধু মশার ওষুধ দিয়েই মশা নির্মূল সম্ভব নয়। এ জন্য যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে নগরবাসীকে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা ড্রেন, ঝিল ও ডোবা পরিষ্কার রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর