সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেত শিল্প হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাত্র কয়েক বছর আগেও সিলেটে বেত শিল্প ব্যবসা জমজমাট ছিল। কয়েক বছরের ব্যবধানে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেত শিল্প হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে। এ পেশার সাথে যুক্ত আছে সহস্রাধিক শ্রমিকেরও দুর্দিন চলছে।

এক সময় বাংলাদেশের বেতের আসবাপত্রের চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিত সিলেটের বেত শিল্প। অভ্যন্তরিণ চাহিদা পূরণ করে সিলেটের বেতের তৈরি সামগ্রী আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হত। বর্তমানে তা কমে গেছে। শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এক সময় সিলেটে পাহাড় টিলায় প্রচুর বেত পাওয়া যেত। স্থানীয় নাম জালি বেত, গল্লা বেত, অন্না বেত প্রচুর পরিমানে সিলেটে পাওয়া যেত। কিন্তু পাহাড় টিলা কেটে ফেলায় সিলেটের বেত বন উজাড় হয়ে গেছে। তাই পর্যাপ্ত বেত না পাওয়াতে এই শিল্পটি এখন হুমকির মুখে।

মাত্র পাঁচ-ছয় বছর আগেও সিলেটে বেতের আসবাপত্রের দোকান ছিল শতাধিক। এখন সেই বেত শিল্পের দোকান যেমন কমেছে, সাথে শ্রমিকের সংখ্যাও কমে গেছে। শ্রমিকরা আর্থিক সংকটে পড়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিচ্ছেন। ২০ বছর পূর্বে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর উদ্যোগে সিলেটে নগরীর ঘাসিটুলা এলাকায় একটি বেতশিল্প কারখানা গড়ে তোলা হয়। কিছুদিন পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অনেকেই ব্যাক্তিগত উদ্যোগে এই শিল্পের প্রসারে ভূমিকা রাখেন।

সিলেট এক সময় বেতের জন্য বিখ্যাত ছিল। সিলেটে ১৮৮৫ সালে প্রথম বেতের ফার্নিচার ম্যানুফেকচার হয়। ১৯২৬ সাল পর্যন্ত সিলেটের বনাঞ্চলে প্রচুর বেত পাওয়া যেত। যদিও পরবর্তীতে সিলেটে অঞ্চলে বেতের উৎপাদন কমে আসতে থাকে। বর্তমানে উৎপাদিত বেতে চাহিদা পূরন না হওয়ায় বিদেশ থেকেও বেত আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে দাম বেশি পড়ায় ব্যবসয়ীরা এই শিল্পে লোকসান দিচ্ছেন।

সিলেটে বর্তমানেকয়েকটি দোকানে প্রায় ৫০ প্রকারের বেত জাতীয় পণ্য তৈরী হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বেতের তৈরী ম্যাগাজিন র‌্যাক, টেলিফোন চেয়ার, সোফা সেট, বেড সেট, স্যুজ রেক, ট্রলি, টেবিল, শেলফ, রিডিং টেবিল, রকিং চেয়ার, টেলিফোন টেবিল, ফোল্ডিং চেয়ার, আর্ম চেয়ার, রাউন্ড কফি টেবিল, কর্ণার সোফা এন্ড ইজি চেয়ার, ফুল ইজি চেয়ার, ডাইনিং সেট, টি ট্রলি, গার্ডেন চেয়ার, পেপার বাস্কেট, বুক শেলফ, ম্যাগাজিন বাস্কেট, ডাইনিং চেয়ার,বাঙ্গি টেবিল,কোর্ট হ্যাঙ্গার,মোড়া, বেবী কট, বোতল র‌্যাক ও প্ল্যান্টার। এর বেশীর ভাগই ইংল্যান্ডে রপ্তানী করা হয়। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় এই বেত সামগ্রী।

এখনও এই ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সিলেটে আবার বেত উৎপাদন করলে বছর দশেকের মধ্যে এই শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এতে বেতের তৈরি আসবাবপত্র রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর