বাবার মতো হাওরকে নিয়েই তার যত স্বপ্ন-সাধ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওরকে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও পরিচিত করিয়েছেন তার বাবা রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। বাবা যেমন হাওরের কাদামাটিতে চলতে চলতে বড় হয়েছেন, উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামনে এগিয়েছেন, জ্যেষ্ঠ সন্তান প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক অবিকল যেন তেমনই। হাওরের নামের পাশ থেকে ‘অবহেলিত’ শব্দটি চিরতরে মুছে দিয়েছেন ‘মহামান্য’। বাবার মতো হাওরকে নিয়েই তার যত স্বপ্ন-সাধ।

টানা তিনবার রেকর্ড ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যে রোমাঞ্চিত হাওরকে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব জনপদে রূপ দিতে চান। আর তাই তো বঙ্গভবনের সুরম্য প্রাসাদ ছেড়ে মাসের ২০ থেকে ২২ দিনই কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন হাওরের কোলে। সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তৌফিক বলেন, হাওরের পরিবেশ রক্ষা, প্রাণিবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, অতিথি পাখিদের নিরাপত্তা বিধান মৎস্য সম্পদের বিকাশ করে অপার সম্ভাবনার হাওরাঞ্চল গড়ে তুলতে কাজ শুরু করবো।

বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হাওরের বাসিন্দাদের ভাগ্যোন্নয়নের স্বপ্ন সফল করতে চাই। সম্প্রতি এক রাতে রাজধানীর ন্যাম ভবনে বসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ (মিঠামইন-ইটনা-অষ্টগ্রাম) আসন থেকে এবারো বিপুল ভোটে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য। রাষ্ট্রপতির সন্তান আবার নিজে এতবারের সংসদ সদস্য। অথচ একেবারেই সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিনি। আলাপচারিতাতেও রয়েছে রসবোধ। বাবার মতোই যেন হাওরের মাটি-আলো-বাতাসে দিনের পর দিন পরিণত হয়ে উঠেছেন মেধাবী এই রাজনীতিক। আলাপচারিতায় দেখা গেলো, ‘মহামান্য’ যেমন অনেক কঠিন কথা, মজা করে বলার অদ্ভুত গুণের অধিকারী তার জ্যেষ্ঠ এই সন্তানও হয়েছেন তেমনই।

আমার সংবাদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে ভোটে কখনোই হার না মানা এই সংসদ সদস্য বলেন, হাওরে গবেষণা ও সম্ভাবনা অনুসন্ধান করার জন্য ‘হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ হয়েছে। হাওরে রাস্তাঘাট নির্মাণে বৈপ্লবিক উন্নতি হয়েছে। যেখানে যেতে একদিন সময় লাগতো, এখন সেই দুর্গম এলাকায় কয়েক ঘণ্টায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন জলমগ্ন গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোজন দেয়া হয়েছে।

মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারেন না
বুকের মধ্যে হাওরের মানুষ আর প্রকৃতিকে ধারণ করার শিক্ষা নিয়েছেন বাবার কাছ থেকেই। সেই কথা জানিয়ে সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক বলেন, হাওরের মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া আমি থাকতে পারি না। এজন্য মাসের কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ দিন আমি হাওরেই থাকি। বাবা সব সময়ই বলেন, রাজনীতিতে সফল হতে হলে মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে।

ধান আনতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না কৃষকদের
প্রতি বছর হাওরে ধান আনতে কৃষককে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়। এই কষ্টের অবসান ঘটাতে উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবছেন প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক। সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘হাওরমুখী ছোট ছোট সড়ক পাকা করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য সমীক্ষা চালানো হবে। হাওর থেকে সহজেই যেন কৃষক ধান নিয়ে আসতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে।’

সরকারি উদ্যোগে হবে অটো রাইস মিল
আক্ষেপ করে সংসদ সদস্য তৌফিক বলেন, দেশে ধানের এক-পঞ্চমাংশ চাহিদা মেটায় হাওর। আমার তিন উপজেলায় প্রায় ৩৩ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। কিন্তু এখানে একটি অটো রাইস মিলও নেই। অথচ আমাদের এখানে ধানকাটার পর বৃষ্টি শুরু হয়। অটো রাইস মিল হলে ভেজাধান মেশিনে দিয়ে কৃষকরা চাল করতে পারবে। এজন্য সরকারি উদ্যোগে অটো রাইস মিল করা হবে। ব্যক্তি উদ্যোগে হলেও সহায়তা করা হবে।

মিঠা পানির মাছ নিয়ে পরিকল্পনা
হাওরে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটানোর চিন্তাভাবনার কথা জানিয়ে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘মিঠাপানির মাছের বড় আবাসস্থল হাওর। এটাকে শিল্প হিসেবে ধরে কাজ করতে হবে। মিঠা পানির মাছ আহরণ করা হবে। ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় এই মাছের চাষ বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে। এটি সম্ভব হলে সারা দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানিও করা যাবে।’

কৃষিতে নজর দিলে বদলে যাবে হাওর
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ নিজের মুখেই সব সময় বলেন, এক সময় হাওর ছিলো অবহেলিত। আজ তার উন্নয়ন দেখতে উজানের মানুষ ভিড় করেন। প্রকৌশলী তৌফিক বাবার পর গুরুত্ব দিয়েছেন কৃষিতে। তিনি বলেছেন, সরকারিভাবে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তার ভাষ্য মতে, হাওরের অনেক জমি পতিত থাকে। কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পায় না। ফলে পতিত জমির সংখ্যা বাড়ছে। সরকারিভাবে সেচের আওতায় আনলে মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে। হাওরের পতিত জায়গায় সরকারিভাবেও কৃষি বিভাগ দিয়ে চাষবাস করলে ভালো হয়। জমির মালিকদের একটি অংশ দিয়ে বাকিটুকু কৃষি বিভাগ নেবে। এটি সম্ভব হলে খাদ্য রপ্তানিও সম্ভব হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর