ব্রিজের জন্য দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুরের হারাগাছের ধুম নদীতে ব্রিজের জন্য দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা। কেউই কথা রাখেননি। বরং ব্রিজ নির্মাণ নিয়ে হয়েছে একের পর এক রাজনীতি। নির্বাচন এলেই ভোট বাগিয়ে নিতে নেতারা একাধিকবার ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু বাঁশের সাঁকোর বদলে হয়নি ব্রিজ নির্মাণের অগ্রগতি। বরং পরপর দুই দফায় অর্থ বরাদ্দ হলেও স্থানীয় বিড়ি শিল্পপতিদের ক্রেডিট ইস্যু আর আধিপত্য বিস্তারের তামাশায় ভেস্তে গেছে বহুল প্রত্যাশিত ব্রিজের নির্মাণ উদ্যোগ। এমনটাই অভিযোগ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছের ধুম নদীর পাড়ের মানুষের।

এবার কাউনিয়া-পীরগাছা (রংপুর-৪) আসন থেকে নির্বাচিত এমপি টিপু মুনশি বাণিজ্যমন্ত্রী হওয়াতে ব্রিজ নির্মাণের আশায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয়রা। তাদের বিশ্বাস এবার আর ব্রিজ নিয়ে কেউ রাজনীতি করবে না। ২০০৩ ও ২০০৪ সালের মতো আর ফেরত যাবে না অর্থ বরাদ্দ।

এ ব্যাপারে হারাগাছ পৌরসভা এবং সারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও এবার আশাবাদী। তারা বলছেন, ধুম নদীর বিলের ওপরে বহুল কাঙ্ক্ষিত ব্রিজটি নির্মাণের জন্য সহসাই টেন্ডার হবে। তবে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার এ বিষয়ে কোনো আপডেট তথ্য জানাতে পারেননি।

জানা গেছে, দুই দফায় ২১ লাখ ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ হয়। এজন্য টেন্ডারও আহ্বান করা হয়। কিন্তু তা এখন পর্যন্ত ব্রিজটি আলোর মুখ দেখছে না। এ কারণে দুর্ভোগে দিশেহারা স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকো পরিচালনা কমিটি গঠন করে নিজেরা চাঁদা তুলে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে পিলার বসালেও তাও সফল হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউনিয়ার সারাই ইউনিয়ন ও হারাগাছ পৌরসভার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধুম নদীর দুই পাশের মানুষের ভোগান্তির করুণ চিত্র। ওই নদীর দুই পাশে রয়েছে ধুমের কুঠি, ঠাকুর হারাগাছ, ঠাকুরদাস, মেনাজ বাজার, মায়ারবাজার, শিবসারাই, মিলনবাজার, হকবাজার, একতাবাজার, খানসামা, নাজিরদহ, পাইকার বাজার, সারের বাজার, চাঁদকুঠি, পল্লীমারীর চরসহ প্রায় ৫০টি গ্রাম। এই গ্রামে বসবাস করেন ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

ধুম নদীর উভয় পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাদ্রাসা, বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজসহ অন্তত ১৫টি বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কয়েকটি বাজার ও বিভিন্ন স্থাপনা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও নদীর ওপর কোনো ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয়রা চাঁদা তুলে গত বছর বাঁশের সাঁকো বানিয়েছে। সেই সাঁকো দিয়েই প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষ যাতায়াত করছেন। কখনো কখনো ঘটছে ছোট দুর্ঘটনাও।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে পীরগাছায়-কাউনিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারাগাছের শিল্পপতি জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা এবং বিএনপির রহিম উদ্দিন ভরসা, জাতীয় পার্টির আরেক সাবেক সংসদ সদস্য শাহ আলম, আওয়ামী লীগের সাবেক পৌর ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া পরিবার এবং তাদের আস্থাভাজন প্রভাবশালীদের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে টেন্ডার হলেও ব্রিজটির কাজ শুরু হয়নি।

ঠাকুরদাস এলাকার সুরুজ মিয়া ও ধুমের কুঠি এলাকার আমজাদ হোসেন জানান, দুই ভরসা, শাহ আলম, আর মায়ারা সবাই চায় ব্রিজটি নির্মাণের ক্রেডিট নিতে। এটা নিয়ে রাজনীতি করতে। এ কারণে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও নানা অজুহাতে-হুমকি ধামকিতে তা বন্ধ হয়েছে।

ধুমের কুঠি পূর্বপাড়া এলাকার সমাজভিত্তিক ভূমিহীন ক্ষুদ্র মৎসজীবী উন্নয়ন সংস্থার মহাসচিব ও জাসদ নেতা আজিজুর রহমান জানান, ওই ব্রিজ নির্মাণের দোহাই দিয়ে কাউনিয়া-পীরগাছা আসনে টিপু মুনশী তিনবার এমপি হলেন। এবার তো মন্ত্রীও হলেন। ওই ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হারাগাছ পৌরসভার মেয়র হিসেবে হাকিবুর রহমান মাস্টার এবং সারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তারা কোনোভাবেই এই ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি। বাঁশের সাঁকোই এখনো আমাদের ভরসা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিত্যদিন চলাচল করতে হচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন স্কুলগামী শিশুরা থেকে শুরু বিড়ি শ্রমিকরা।

এ ব্যাপারে সারাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ধুম নদীর ওপর ব্রিজটি না হওয়ার কারণে ৫০ হাজার মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমরা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এটা যেমন সত্য। তেমনি সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখানে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে বিভিন্ন স্থানে আবেদনও করেছি। আশা করছি বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রীর সহযোগিতায় ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু হবে। চলতি অর্থবছরে না হলেও আগামী অর্থবছরে আশা করি টেন্ডার হবে।

অন্যদিকে হারাগাছ পৌরসভার চেয়ারম্যান হাকিবুর রহমান মাস্টার জানান, ওই ব্রিজটি নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছি। বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে, জুন মাসের মধ্যে এর একটা সুরাহা হবে।

তবে ব্রিজ নির্মাণের আপডেট কোনো তথ্য দিতে পারেননি কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল আলম। তিনি বলেছেন, ওই ব্রিজটির ব্যাপারে আমরা প্রকল্প তৈরি করে ঢাকায় জানিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত ওই নির্মাণ কার্যক্রমের ব্যাপারে কোনো আদেশ আসেনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর