হাঁটাও যখন ইবাদত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য নিয়মিত মসজিদে যাওয়া হলে আমাদের অনেকটা হাঁটার কাজ হয়ে যাবে। বাড়ি থেকে মসজিদ তিন মিনিটের পথ হলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদে যাওয়া-আসা মিলে (৩ী২ী৫=৩০) ত্রিশ মিনিট হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন উত্তমরূপে অজু করে শুধু নামাজের উদ্দেশ্যেই মসজিদ অভিমুখে বের হয় তার মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত প্রতি ধাপে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটি পাপ মোচন হয়।’ (বোখারি : ২০১৩; মুসলিম : ১৫৩৮)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের চলাফেরার জন্য পা দিয়েছেন। পা দিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত চলাফেরা করি। বিছানা থেকে টেবিলে, এক ঘর থেকে অন্য ঘরে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলছি তো চলছি। সাধারণত আমাদের অবস্থা তিনটি। হয়তো চলি অথবা বসি অথবা শুয়ে থাকি। বর্তমান সময়ে হাঁটার উপকারিতা কে না জানে? সারাদিন কর্মব্যস্ততার কারণে যাদের খুব একটা হাঁটা হয় না তাদের অনেকে শুধু হাঁটার জন্যই হাঁটেন। সকালবেলা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষকে রাস্তায় বা পার্কে সুস্থতার জন্য নিয়মিত হাঁটতে দেখা যায়। চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ আরও কিছু রোগীকে নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই হাঁটাও আমাদের ইবাদত হতে পারে। প্রতিটি ধাপ নেকির উৎস হতে পারে। আমাদের পা বাড়ানো জান্নাতের পথ সহজ করতে পারে। চলুন, হাদিসের ভাষায় জানার চেষ্টা করি।

হেঁটে মসজিদে যাওয়া
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে এবং উভয় ঈদে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ইসলামের অন্যতম নির্দেশনা। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য নিয়মিত মসজিদে যাওয়া হলে আমাদের অনেকটা হাঁটার কাজ হয়ে যাবে। বাড়ি থেকে মসজিদ তিন মিনিটের পথ হলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদে যাওয়া-আসা মিলে (৩ ২ ৫=৩০) ত্রিশ মিনিট হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন উত্তমরূপে অজু করে শুধু নামাজের উদ্দেশ্যেই মসজিদ অভিমুখে বের হয় তার মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত প্রতি ধাপে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটি পাপ মোচন হয়।’ (বোখারি : ২০১৩; মুসলিম : ১৫৩৮)।

হজরত আউস ইবনে আউস আস-সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালোভাবে গোসল করে এরপর তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয় এবং আগেভাগে কোনো কিছুতে আরোহন না করে হেঁটে মসজিদে যায়, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসে, মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করে আর অনর্থক কথা ও কাজ না করে, তার প্রতি কদমে পূর্ণ এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব প্রদান করা হয়।’ (তিরমিজি : ৪৯৬; আবু দাউদ : ৩৪৫; ইবন মাজাহ : ১০৮৭)। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নত হলো ঈদগাহের দিকে হেঁটে যাওয়া এবং ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া।’ (তিরমিজি : ৫৩০)।

দ্বীনি-জ্ঞান অর্জন করার উদ্দেশ্যে চলা
কোরআন-সুন্নাহ, দ্বীনি বিষয়, মাসআলা-মাসায়েল ইত্যাদি শিক্ষার জন্য বের হওয়া অন্যতম কাম্য বিষয়। যদিও এক্ষেত্রে হেঁটে যাওয়া জরুরি নয়। তবে এ উদ্দেশ্যে হেঁটে গেলে নিঃসন্দেহে তা ইবাদত হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি দ্বীনি-জ্ঞান অর্জন করার উদ্দেশ্যে কোনো পথে চলে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ (মুসলিম : ৭০২৮; তিরমিজি : ২৯৪৫)।

জানাজার সঙ্গে চলা
মৃত মানুষের জানাজায় ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ব। আর জানাজার সঙ্গে হেঁটে যাওয়াই উচিত। হজরত বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে-কেউ জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করে তার এক কিরাত নেকি হয়। যে দাফন পর্যন্ত জানাজার সঙ্গে চলে তার দুই কিরাত নেকি হয়। আর কিরাত হলো ওহুদ পাহাড় বরাবর।’ (নাসাঈ : ২০৬৭)।

অন্যের প্রয়োজনে হাঁটা
মানুষ মানুষের প্রয়োজনে এগিয়ে যাবে এটিই তো মানবতা। অন্যের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে পা বাড়ানো একটি ইবাদত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে তার ভাইয়ের (অন্যের) প্রয়োজন পুরা করতে হেঁটে যায়, তার এ কাজ দশ বছরের ইতেকাফের চেয়ে উত্তম বিবেচিত হয়। আর যে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতেকাফ করবে আল্লাহ তায়ালা তার এবং জাহান্নামের মধ্যে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। প্রত্যেক খন্দকের দূরত্ব আসমান ও জমিনের মধ্যকার দূরত্বের চেয়েও বেশি।’ (মাজমাউজ জাওয়াজেদ : ১৩৭১৬)।

হজ ও ওমরায় হাঁটা
হজ ও ওমরা পালনের ক্ষেত্রে অন্যতম কাজ হলো আল্লাহর ঘর কাবা গৃহের তাওয়াফ করা এবং সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাঈ করা। তাওয়াফ হলো কাবাঘরের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করা। হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে ঘুরে আবার সেখানে পৌঁছলে এক চক্কর হয়। এভাবে সাত চক্কর দিয়ে তাওয়াফ করতে হয়। সাঈ হলো সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে যাওয়া-আসা করা। সাফা পাহাড় থেকে শুরু করে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছলে প্রথম সাঈ। মারওয়া পাহাড় থেকে সাফা পাহাড়ে পৌঁছলে দ্বিতীয় সাঈ। এভাবে সাত সাঈ করতে হয়। তাওয়াফ ও সাঈ হেঁটেই সম্পাদন করতে হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা যেন এই সুরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে।’ (সূরা হজ : ২৯)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘কঙ্কর নিক্ষেপ ও সাফা-মারওয়ার মধ্যে দৌড়ানোকে আল্লাহর স্মরণের মাধ্যম সাব্যস্ত করা হয়েছে।’ (তিরমিজি : ৯০২)।

এসব ছাড়াও যে-কোনো ধরনের নেক ও কলাণ্যের উদ্দেশ্যে গমন করা নেক ও কলাণ্যেরই অন্তর্ভুক্ত। যদি হেঁটে গমন করা হয়, তাহলে সে হাঁটাও নেকিরই উৎস।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর