ইঁদুরের বিষ্ঠা দিয়ে বানানো হয় সিগারেট

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিগারেট এ যুগের ফ্যাশন বলা যায়। সিগারেট খেলে স্মার্ট হয় আর না খেলে আন-স্মার্ট, এমনটাই ভাবে আজকাল অনেকে। বর্তমানে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবাই সিগারেট খাচ্ছে। আমরা যা ভেবেই সিগারেট খাই না কেন, এটা কিন্তু জানি যে সিগারেট মানুষের দেহের ক্ষতি করে। কিন্তু যা জানি না তা হলো ঠিক কীভাবে ক্ষতিটা করে। সিগারেট কাউকে একদিনে ধ্বংস করে দেয় না। বয়স হবার সাথে সাথে ধীরে ধীরে এর কুফল দেখা দিতে থাকে।

সিগারেটের পেছনে মাসে কারো কারো হাজার হাজার টাকা ব্যয় হয়। অনেকেই আছেন যারা সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার না খেয়ে থাকতে পারেন কিন্তু সিগারেট পান না করে থাকতে পারেন না। কিন্তু আপনি কি জানেন এই সিগারেট কি থেকে তৈরি হয়?

হ্যাঁ, অবশ্যই তামাক পাতা সুন্দর করে কেটে পরিশোধন করার পর তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক কয়েকটি উপাদান মিশিয়ে কাগজে মোড়ানো সিলিন্ডারের ভেতর পুরে সিগারেট তৈরি করা হয়।

তবে সম্প্রতি একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, সিগারেটের মুল উপাদান গুলির একটি ইঁদুরের বিষ্ঠা। অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ সম্প্রতি অপর একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে, পৃথিবী বিখ্যাত আইভরি কফি তৈরি নাকি তৈরি হয় হাতির বিষ্ঠা থেকে। যেমনটি ভারতে কফি তৈরি হয় বিড়ালের মল থেকে!

যাই হোক এসব তাও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তী যে তথ্যটি একেবারেই ঘৃন্যকর, সেটি হল সিগারেটের ফিল্টারে ব্যবহার করা হয় শূকরের রক্ত। নেদারল্যান্ডস এর এক গবেষণায় দেখা গেছে-১৮৫টি সিগারেট উৎপাদনকারী কারখানায় ব্যবহার করা হয় শূকরের রক্ত। কারণ সিগারেটের ফিল্টারে রক্তের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিমোগ্লোবিন ব্যবহার করা হয়।

নেদারল্যান্ডসের ওই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, শূকরের রক্ত থেকে হিমোগ্লোবিন নিয়ে তা সিগারেটের ফিল্টারে ব্যবহার করা হয়। গ্রিসের একটি সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শূকরের হিমোগ্লোবিন ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকারও করেছে। তারও আগে জানা গিয়েছিল, সস্তা সিগারেটের মধ্যে অ্যাজবেস্টস এবং মৃত মাছিও থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিবছর প্রায় প্রায় ৫.৫ ট্রিলিয়ন সিগারেট তৈরি করা হয় আর প্রায় ১.১ বিলিয়ন মানুষ সিগারেট খায়। এর মধ্যে প্রতি ১০০ জনে এশিয়ায় প্রায় শতকরা ৪৪ ভাগ পুরুষ ও ৪ ভাগ মহিলা সিগারেট খান। ইউরোপে নারীদের সিগারেট খাওয়ার হার বেশি প্রায় শতকরা ৪৬ভাগ পুরুষ ও ২৬ ভাগ মহিলা। আমেরিকায় এটি প্রায় ৩৫ ও ২২ ভাগ। কিন্তু পশ্চিম মহাসাগরীয় অঞ্চলে সিগারেট মহামারির মত। প্রায় ৬০ ভাগ পুরুষ ও ৮ ভাগ নারী সিগারেটে আসক্ত।

মানবদেহে সিগারেটের ধ্বংসাত্মক পরিণতি-
*সিগারেটের কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়।
*হার্ট এটাক ও স্ট্রোক ঘটায়।
*ধমনীতে (করনারি আর্টারি) ব্লকেজ তৈরি করে। তখন এনজিওপ্লাস্টি করে আর্টারিতে রিং পরাতে হয়, এই রিং ১০ বছরের মতন থাকে। এরপর অবস্থার উন্নতি না হলে বাইপাস সার্জারি (ওপেন হার্ট) করানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
*দিনে ২০ টা সিগারেট খাওয়া স্মোকার প্রতি বছর প্রায় ১ কাপ পরিমান টার(আলকাতরা) ধোঁয়ার সাথে ভেতরে নেয়। এই টার ফুসফুসে ঝুল সৃষ্টি করে আবৃত করে রাখে।
*কার্বন মনোক্সাইড আমাদের পেশি, টিস্যু ও ব্রেনের অক্সিজেনকে নিঃশেষ করে দেয়। ফলে হার্টকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় এসব টিস্যুকে অক্সিজেনেটেড রাখতে। ফলে একসময় দেহের বায়ু প্রবেশপথ ফুলে ওঠে ও শেষে দেখা যায় ফুসফুসে কম বাতাস প্রবেশ করে।
*সিগারেট ফুসফুসে ‘এমফাইসেমা’ সৃষ্টি করে। ‘এমফাইসেমা’ হলে ধীরে ধীরে ফুসফুস পঁচে যায়। ‘এমফাইসেমা’ রোগীর যখন তখন ব্রংকাইটিস হয়ে থাকে। যেকোনো সময় হার্ট কিংবা ফুসফুসের স্পন্দন বন্ধ করে দিতে পারে।
*গর্ভাবস্থায় স্মোকিং করলে ঘনঘন গর্ভপাত, জন্মের আগেই বাচ্চার মৃত্যু হতে পারে, আর বাচ্চার যদি জন্ম হয়ও দেখা যায় সেই বাচ্চা কম ওজন নিয়ে বা অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহন করে।
*সিগারেট মুখে বাজে গন্ধ সৃষ্টি করে। দাঁতের ও মাড়ির ক্ষয় ঘটায়।
*সিগারেটের কারণে স্কিনে অক্সিজেন কম আসে, ফলে অল্প বয়সে বৃদ্ধদের মত রুক্ষ্ম ত্বকের সৃষ্টি হয়। এমনকি কম অক্সিজেনের কারণে অঙ্গে পঁচন দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত তা কেটে ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না।
*হাড়ের ক্ষয় ঘটায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি আরো মারাত্মক। কেননা মেয়েরা এমনিতেই অস্টিওপরেসিসে ভোগে বেশি, তার উপর ধুমপায়ী মেয়েরা ১০-১৫% বেশি এ রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে পড়ে।
*পাকস্থলীর ক্যান্সার বা আলসার, কিডনি, অগ্ন্যাশয়, ব্লাডারের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

সুতরাং দেখা যায়, স্মোকিং হল নিজেই নিজেকে ধীরে ধীরে অপমৃত্যুর দিকে এগিয়ে নেবার অপর নাম। তাই সচেতন হয়ে এখনি আমাদের সিগারেট ছেড়ে দিতে উদ্যোগী হতে হবে। আবার ঝোঁকের বশে হাজারবার হঠাৎ করে নয়, ধীরে ধীরে নিজের কল্যাণেই সিগারেট ছেড়ে বিশুদ্ধ খাবারের দিকে আমাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে পারলেই সুস্থ জাতি হিসেবে আমাদের আগামীর যাত্রায় নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর