আইনি জটিলতায় রয়েছেন বিএনপির অনেক প্রার্থীরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বিএনপির অনেক প্রার্থী আইনি জটিলতায় রয়েছেন। শঙ্কা রয়েছে নানা মামলায় গ্রেফতার হওয়ারও। এ অবস্থায় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের পথে কতটা শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে, পারে তা নিয়ে সংশয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা। এমন আভাস উঠে আসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কথাতেও।

গতকাল বিকেলে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তফসিল ঘোষণার পর থেকে কোনো গ্রেফতার হবে না, কিন্তু সে অবস্থা দেখা যাচ্ছে না। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকার যেভাবে নীলনকশা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে, তাতে গণতন্ত্রের মুক্তি হয় কি না—সন্দেহ আছে।

জানা যায়, বিএনপির দুই প্রার্থীকে জামিন না দিয়ে আটক করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগ আরো দুই নেতাকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশনা দিয়েছেন। দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছেন আরো এক প্রার্থী। এ অবস্থায় দলটির নীতিনির্ধারকরা আশঙ্কা করছেন, যাচাই-বাছাই পর্বে এসব নেতার মনোনয়ন বাতিল করে দিতে পারেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এ ছাড়া রংপুরে জামায়াতের একজনের মনোনয়নপত্রই গ্রহণ করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর আগে হাইকোর্ট বিভাগ এক আদেশে বলেন, কোনো ব্যক্তি দুই বছরের বেশি দণ্ড বা সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, আবদুল ওহাব ও মশিউর রহমান দুর্নীতির মামলায় আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে হাইকোর্ট বিভাগ এই আদেশ দেন।

এ দিকে দুটি আলাদা মামলায় গতকাল নরসিংদী-১ ও মাগুরা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী খায়রুল কবির খোকন এবং মনোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন বিচারিক আদালত। এ ছাড়া ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইসরাখ হোসেনকে দুর্নীতির দুই মামলায় নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগ।

বিএনপির নির্বাচন সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, সরকার বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনের বাইরে রাখতে চেষ্টা করছে। তারা যেন নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে না পারেন, সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে।

রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর দায়ের হওয়া মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য নিপুন রায় চৌধুরীকে গত ২২ নভেম্বর কারাগারে পাঠান আদালত। ঢাকা-৩ আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকন মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। তবে লালবাগ থানার ওসি শুভাস কুমার পাল জানান, নাশকতার একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই মামলায় তিনি দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

অন্যদিকে যশোর-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী সাবিরা সুলতানাকে দ- ও সাজা দেন নিম্ন আদালত। আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই রায় স্থগিত করেছেন বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক বেঞ্চ। সাবিরা সুলতানার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ আদেশের ফলে নির্বাচনে অংশ নিতে আইনি বাধা থাকছে না। সাবিরা সুলতানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তাকে সহযোগিতা করেন আমিনুল ইসলাম এবং এস কে গোলাম রসুল। তার পক্ষে এ আদেশ বহাল থাকলে বিএনপির অনেক নেতার মনোনয়ন বাদ দিতে পারবে না বলে মত দেন আইনজীবীরা। তবে রাষ্ট্রপক্ষ গতকাল এ আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আপিল করেছে।

বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার তিন বছরের সাজা স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানি হবে আজ শনিবার। গতকাল সকালে চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওই আবেদনটি করা হয় বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি জানান, হাইকোর্টের আদেশের ব্যাপারে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করা হয়েছে। শনিবার শুনানির পর এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।

এর আগে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ জানান, দুই বছরের বেশি দণ্ড ও সাজা হলে আপিল করেও কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির পাঁচ নেতার দণ্ড ও সাজা স্থগিতের আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই পর্যবেক্ষণ দেন। ওই আদেশ অনুযায়ী, খালেদা জিয়াসহ বিএনপির অনেক নেতার নির্বাচন আটকে যায়। তবে সাবিরা সুলতানার মামলার সাজা স্থগিতের পর নতুন করে আশা দেখছেন বিএনপির আইনজীবীরা।

এ নিয়ে সাবিরার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সাজা স্থগিতের এ রায় একটি মাইলফলক। আজ শনিবার ছুটির দিন। ছুটির দিনে রাষ্ট্রপক্ষের অনুরোধে চেম্বার আদালত বসছে, এখানে রাষ্ট্রপক্ষের তৎপরতাও অস্বাভাবিক। আগামী ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের তারিখ, তার আগেই রাষ্ট্রপক্ষ তড়িঘড়ি করে কিছু একটা করতে চায়—এ তৎপরতা থেকে সেটাই প্রতীয়মান হয়।

তিনি আরো বলেন, এর আগে সরকারদলীয় অনেক সংসদ সদস্য সাজা ও দণ্ড পাওয়ার পর স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছেন। স্থগিতাদেশ নিয়ে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। এখন যখন বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে, সেই মুহূর্তে দলের চেয়ারপারসনসহ অধিকাংশ নেতা যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সেই অপতৎপরতা শুরু করেছে। আমিনুল আরো বলেন, আমরা একটি আইনসম্মত আদেশ পেয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা ন্যায়বিচার পাব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর