আওয়ামী লীগের সাত দিনের বিশেষ মিশন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয় চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামছে। আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামার আগে প্রতিটি আসনে ‘একক’ প্রার্থী রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। একইসঙ্গে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সব ধরনের মতানৈক্য ও দ্বন্দ্ব নিরসন করে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নামাতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা। সে কারণে হাতে নেওয়া হয়েছে সাত দিনের বিশেষ মিশন। এজন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পাঁচ কেন্দ্রীয় নেতাকে। দলীয় সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, নির্বাচনে জয় পেতে কোন্দল নিরসনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সে কারণে আগামী সাত দিনের মধ্যেই সব নেতাকে এক কাতারে আনার উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে ডেকে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে সাংগঠনিক লোক দরকার হয়, তবেই ফল পক্ষে আসে। এখন থেকে নিয়মিত ধানমন্ডি কার্যালয়ে বসে সারা দেশ মনিটরিং করবে, দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামাবে।’

জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে বসে ৩০০ আসনে দল বা মহাজোটের প্রার্থী, স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করবেন। প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবেন। সারা দিনের কার্যক্রম রাতে দলীয় সভানেত্রীকে অবহিত করবেন তারা। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কার্যক্রমের মনিটরিং করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ সকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, শনিবার (আজ) সকালে ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বৈঠক করা হবে। ওই বৈঠকে ১১ ডিসেম্বর থেকে দলীয় সভানেত্রীর নির্বাচনী সফরের সময়সূচি নির্ধারণ এবং প্রতি আসনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে যা যা করণীয় তাই করা হবে। জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনে নৌকা নিয়ে লড়তে প্রতিটি আসনে গড়ে প্রার্থী ছিলেন ১৩ জন করে। এর মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী তিন থেকে চারজন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার আগাম বহিষ্কারের হুমকির কারণে এবার বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা কমে এসেছে। সূত্রমতে, এবার আওয়ামী লীগ ২৬৪ আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। বাকিগুলো শরিকদের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। ৯ ডিসেম্বরের আগেই মহাজোটের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিছুটা কমে আসতে পারে।

দলীয় সূত্র জানায়, ২৬৪ আসনে ৭৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে যশোরের দুটি আসন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণার আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিশেষ মিশন হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নামানো। অন্যদিকে কিছু কিছু আসনে মহাজোটের প্রার্থীদের নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। মহাজোটের প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মিছিল, মানববন্ধন, বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। ফলে সেদিকও নজর দিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আজ সকালে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতাকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করা হবে। যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। এবারও তাকে ওই দুটি বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রার্থী ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের। আরেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বরিশাল ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তিনিও একই বিভাগের দায়িত্ব পাবেন। একইভাবে সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে নিজ নিজ বিভাগের বা বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে অন্য বিভাগে কাজ করতে বলা হবে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কোথায় কোথায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন, আগে সেগুলো বসানোর ব্যবস্থা করবেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন তারা। আগামীকাল ২ ডিসেম্বর প্রার্থী যাচাই-বাছাই শেষ হবে। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় থাকবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের। এর মধ্যেই একক প্রার্থী করার মিশন রয়েছে আওয়ামী লীগের। জানা গেছে, ১১ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবে আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিতীয় নির্বাচনী সফর হবে সিলেটে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, রংপুর এবং চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে জনসভা করার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সফরসূচি চূড়ান্ত হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আমরা কাজগুলো সম্পন্ন করব। এজন্য একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। মূলত আমরা সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে চাই।

এজন্য যেখানে আমাদের দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, চেষ্টা করব তাদের সন্তুষ্ট রেখে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করাতে। অন্যথায় সাংগঠনিকভাবে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা সফরের সময় চূড়ান্ত করাসহ যেখানে ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে, দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করব। আশা করি আগামী সাত দিনের মধ্যেই আমরা একটা সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছাতে সক্ষম হব।’ সূত্র জানান, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার জন্য ১৫টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই উপকমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবরা নিজ নিজ কমিটির নেতাদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন। প্রচার কৌশল থেকে শুরু করে নির্বাচনসংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সারছেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর