পরিবর্তন আসছে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়ায় এখন নিজেদের দলীয় গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনতে হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। আগামী ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচনের আগেই এটি করতে হবে। দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে এটি করতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে দলের বৈঠকে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে বলেও আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র বলছে, জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে স্পষ্ট বিধান থাকলেও আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নে কিছুই উল্লেখ নেই। আর এ কারণেই গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনতে হবে ক্ষমতায় থাকা দলটির।

এব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে মনোনয়নে নির্বাচনী পরিপত্রের পরিবর্তন করতে হচ্ছে। একই কারণে দলের গঠনতন্ত্রেরও পরিবর্তন আনতে হবে। স্থানীয় সরকার আইনের সংশোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত হলেই গঠনতন্ত্রের বিষয়টি সামনে আসবে`।

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘জনপ্রিয়তার কথা বলে বিরোধী পক্ষ রাজনৈতিক মাঠ গরমের চেষ্টা করে আসছে। এবার তারা সত্যিকার জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ পাবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে`।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সংবিধান এবং সকল বিধিবিধান মেনেই কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইতোমধ্যেই গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত নেয়ার পরেই সংগঠনের জাতীয় কমিটির সভায় গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের বিষয়টি পাশ করিয়ে নেয়া হবে।’

সোমবার স্থানীয় সরকার পরিচালনার সংশোধিত পাঁচটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এরপরেই রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে আসে।

উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে জাতীয় পর্যায়ের সকল নির্বাচনের দিক-নির্দেশনা দেয়া থাকলেও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ নিয়ে কিছুই উল্লেখ নেই।

সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে নির্বাচন সম্পর্কে বলা আছে-

ক. বাংলাদেশ জাতীয় সংসদসহ জাতীয় পর্যায়ে সকল নির্বাচনে সংগঠনের পক্ষ হইতে প্রার্থী মনোনীত করার জন্য একটি সংসদীয় (পার্লামেন্টারি) বোর্ড গঠিত হইবে।

খ. সংসদীয় বোর্ডের সদস্য সংখ্যা হইবে ১১ জন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের নেতা এই তিনজন পদাধিকার বলে উক্ত বোর্ডের সদস্য থাকিবেন। অবশিষ্ট ৮ জন সদস্য আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সদস্যদের মধ্যে হইতে কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন। বোর্ডের কার্যকাল কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।
পদাধিকার বলে যে তিনজন সদস্য থাকিবেন, তাঁহাদের মধ্যে একই ব্যক্তি একাধিক পদের অধিকারী হইলে বোর্ডেও একটি সদস্য পদ শূন্য বিবেচিত হইবে। শূন্য পদে কাউন্সিল অতিরিক্ত একজন সদস্য নির্বাচন করিবে। কাউন্সিল-পরবর্তী পর্যায়ে বোর্ডের কোনো সদস্য পদ শূন্য হইলে উক্ত শূন্য পদে পরবর্তী কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নতুন সদস্য মনোনীত করিতে পারিবে।

গ. বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি পদাধিকার বলে উক্ত বোর্ডের সভাপতি থাকিবেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদাধিকার বলে সংসদীয় বোর্ডের সম্পাদক হইবেন।

ঘ. সংসদীয় বোর্ড নির্বাচন সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যসম্পন্ন করিবেন। বোর্ড নির্বাচনী কর্মসূচি প্রণয়ন ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে কোনো ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে পারিবেন। নির্বাচনে যাঁহারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী হইবেন, তাঁহারা উক্ত বোর্ডের নিকট মনোনয়ন প্রার্থনা করিয়া যে দরখাস্ত দাখিল করিবেন, তাঁহার অনুরূপ এক কপি দরখাস্ত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে লিখিত রশিদ লইয়া বা পোস্টাল রেজিস্ট্রেশনযোগে পাঠাইবেন।

(ঙ) উপজেলা/থানা, ইউনিয়ন/পৌর ওয়ার্ড ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী সংসদীয় আসনভিত্তিক মনোনয়ন প্রার্থীদে গুণাগুণ ও জনপ্রিয়তা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করিয়া তাহাদের সুপারিশ সংবলিত একটি প্রার্থী প্যানেল সাংগঠনিক কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ড বরাবর প্রেরণ করিবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ড একজনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করিবে।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্ত সমায়োপযোগী। বিধান না থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দলীয়ভাবেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হতো। এবার সেটা পরিষ্কার করা হলো।

তিনি বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রার্থী মনোয়নের যে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে, তাতে যদি দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তা অবশ্যই করা হবে। এ ব্যাপারে সংগঠনের নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেবেন।

উল্লেখ্য, সোমবার স্থানীয় সরকার পরিচালনার সংশোধিত পাঁচটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) আইন-২০১৫’, উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন-২০১৫’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন-২০১৫’, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন-২০১৫’ ও স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) আইন-২০১৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সংশোধিত আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচন না হলে সরকারি প্রশাসন থেকে কাউকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর