প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে থাকছে ৬০ ভাগ নারী কোটা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে ৬০ ভাগ নারী কোটা বহাল থাকছে। জানা গেছে শিক্ষক নিয়োগ সংশোধনী বিধিমালা চূড়ান্ত পর্যায়ে। ওই বিধিমালায় নারী কোটা বাহল থাকছে বলেই জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএফএম মনজুর কাদির বলেন, বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা চূড়ান্ত পর্যায়ে। সচিব কমিটির অনুমোদনের পর এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ভাষাগত কিছু পরিবর্তনের পর তা পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে। পিএসসি থেকে আসার পর বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে।

এদিকে, সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধিমালায় পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে পুরুষের জন্য স্নাতক আর নারীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস হতে হয়। কিন্তু নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক পদে পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করা হয়েছে। তবে নারীদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা বহাল থাকছে।

নতুন বিধিমালা কার্যকর হলে শিক্ষক নিয়োগ আগের মতোই উপজেলা বা থানাভিত্তিক হবে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত সহকারী শিক্ষক নির্বাচন কমিটির সুপারিশ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে কাউকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া যাবে না।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালায় দেখা গেছে, সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এতদিন স্নাতক পাস হলেই আবেদন করা যেত। সংশোধনী বিধিমালায় এ শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর করা হয়েছে। এতদিন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ছিল ২৫ থেকে ৩৫ বছর। কিন্তু এখন এ পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় পিএসসি নীতিমালার সঙ্গে সংগতি রেখে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর। তবে আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হওয়ার বিধানও রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে শিথিলযোগ্য। বাকি ৩৫ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এ পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির পুরো দায়িত্বই থাকবে পিএসসির।

বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংশোধনী বিধিমালায় বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে প্রণীত বিধিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি শতকরা ৩৫ ভাগ এবং সহকারী শিক্ষক থেকে শতকরা ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করার বিধান ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৯ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। ফলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি পিএসসির বিবেচনাধীন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের এটিও অপরিহার্য কারণ।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএফএম মনজুর কাদির বলেন, প্রধান শিক্ষক পদটি পিএসসির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ পদে নিয়োগ-পদোন্নতি-সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে চলতি দায়িত্বে সারাদেশে ১৫ হাজার প্রধান শিক্ষককে পদায়ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি ১২তম গ্রেডে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা হওয়ায় বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগ পদোন্নতি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতাভুক্ত হয়ে যায়। এ কারণে সারাদেশে প্রধান শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে গত ২৩ মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য স্থানে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব অস্থায়ী পদোন্নতি দেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে দেশের ৬৪টি জেলায় প্রধান শিক্ষক শূন্য বিদ্যালয়গুলোতে পর্যায়ক্রমে চলতি দায়িত্বে ১৫ হাজার প্রধান শিক্ষককে অস্থায়ীভাবে পদায়ন করা হয়।

এ বিষয়ে মনজুর কাদির আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে সারাদেশে চলতি দায়িত্বে পদায়ন হওয়া ১৫ হাজার প্রধান শিক্ষকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের স্থায়ী পদোন্নতির জন্য এ তালিকা পিএসসি সুপারিশের জন্য পাঠানো হবে। পিএসসির সুপারিশ পেলেই একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে চলতি দায়িত্বে পদায়ন হওয়া শিক্ষকদের চূড়ান্ত পদোন্নতি দেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর