‘ইসলামের শত্রু’দের তালিকায় বৃটিশ ও মার্কিনিদের যুক্ত করছে আইএস সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী

আইএস সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইরত দেশগুলোর তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশও। দেশটিতে টানা বেশ কিছু নৃশংস হত্যাকা- ঘটিয়েছে আইএস-এর সঙ্গে জড়িত একটি গোষ্ঠী। আবার কিছু হত্যাকা- সরাসরি আইএস-এর সক্রিয় সদস্যরাই করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনটি বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল নিউজ ওয়েবসাইট ব্রেইবার্ট ডট কমের একটি নিবন্ধে।
জন হেওয়ার্ডের লেখা নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে, ইসলামী মিলিশিয়া দলটিকে বলা হচ্ছে ‘আনসার বাংলা’ বা ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’। এ নামের অর্থ ‘আল্লাহর বাংলাদেশী সাহায্যকারী’। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মতে, ব্লগার হত্যা শুরুর আগে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে তেমন আমলেই নেয়নি। তাদের বর্ণনা করা হয়েছিল যে, তারা হলো ‘জিহাদি হতে আগ্রহী একটি গোষ্ঠী যারা অনলাইন চ্যাটের চেয়েও বেশি তেমন কিছু করেনি।’ ওই নৃশংস হত্যাকা-গুলোর প্রথমটি চালানো হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে। এর পর এরকম আরও ৩টি ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ভুক্তভোগী হয়েছিলেন অভিজিৎ রায়। তিনি ইসলামী উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে দীর্ঘ লড়াই চালিয়েছিলেন। তিনি ও তার স্ত্রী একটি বই মেলা ঘুরে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলার মুখোমুখি হন। ছুরি ও চাপাতি দিয়ে ওই হামলায় অভিজিৎকে হত্যা ও তার স্ত্রীকে গুরুতরভাবে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এর আগেও তারা বেশ ক’বার হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন। তার স্ত্রী একটি আঙ্গুল হারান, আর অভিজিৎ হারান তার প্রাণ। হামলার সময় অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কেউই তাদের বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।
ঠিক একই কায়দায় মার্চ, মে ও আগস্টে খুন হন আরও ৩ জন। হত্যার মিছিল থামাতে যথেষ্ট কিছু না করার অভিযোগ উঠে বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে। অন্য ব্লগাররা জানান, হামলার সর্বশেষ ভুক্তভোগী নিলয় নীল (৪০) মৃত্যুর কয়েক মাস আগে সন্দেহজনক ব্যক্তিবিশেষ স¤পর্কে পুলিশের কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, হত্যার তদন্ত খুবই শ্লথ গতিতে চলছে। কারণ, কর্তৃপক্ষ ইসলামী মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। খুনীদের মোকাবিলা করতে আগ্রহী নয় তারা।
খুনে প্রচেষ্টাগুলো সফল হবার পর উজ্জীবিত আনসার বাংলা এবার ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের হিট লিস্ট প্রকাশ করা শুরু করে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশটির সরকারের প্রতি ওই ‘ইসলামের শত্রুদের নাগরিকত্ব স্থগিত’ করার দাবি জানায়। সংগঠনটি হুমকি দেয়, অন্যথায়, ‘তারা আল্লাহর দুনিয়ায় যেখানেই থাকুক না কেন, আমরা তাদের খুঁজে বের করবো ও সেখানেই হত্যা করবো’।
ওই হিটলিস্ট কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা মানুষদের প্রতিই সীমাবদ্ধ নয়। হিটলিস্টে থাকা কারও নাম প্রকাশ না করে সিএনএন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যে, ওই লোকদের ৯ জন রয়েছেন যুক্তরাজ্যে, ৮ জন জার্মানিতে, ২ জন যুক্তরাষ্ট্রে ও ১ জন করে কানাডা ও সুইডেনে। এছাড়া তাদের সবারই যে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব রয়েছে তা-ও নয়।
আগে আল-কায়দার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল আনসার বাংলা। কিন্তু আইএস ও তাদের বৈশ্বিক ‘মুসলিম খেলাফতে’র জন্য সংগঠনটিকে আরও সক্রিয় মনে হচ্ছে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে বলা হয়েছে, আইএস-এর নিয়োগ দেয়ার বিভিন্ন ভিডিও ও তাদের ম্যাগাজিন ‘দাবিক’ স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করেছে তারা। এর আগে আল কায়দার ম্যাগাজিন ‘ইন্সপায়ার’ও অনুবাদ করেছিল আনসার বাংলা। আইএস যেসব বাকপটুতাপূর্ণ ভিডিও প্রকাশ করে, তেমন ভিডিও প্রকাশের ইচ্ছা আছে সংগঠনটির। এমনকি তাদের কয়েকটি ভিডিওতে আইএস-এর পতাকাও দেখা গেছে। মে মাসে এ গোষ্ঠীর এক সদস্যকে আইএস-এর হয়ে লড়াই করতে বাংলাদেশী নাগরিক সংগ্রহ করার দায়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিনিময়ে আনসার বাংলার ধর্মীয় নেতাকে আইএস ‘আমাদের শেখ’ বলে আখ্যায়িত করে। এমনকি ‘বাংলাদেশের দোরগোড়ায় সুনামি আসন্ন’ বলে দাবি করেছিল বৈশ্বিক ওই জিহাদ ও ইসিলামিক আইনের প্রণয়নের ডাক দিয়েছে আনসার বাংলা। অন্যদিকে শরিয়ার বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক লেখা লিখে আসছিল তাদের ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিপক্ষরা। তাদের বক্তব্য, বাংলাদেশের সরকার এর দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত। দু’ পক্ষের মধ্যে এমন মতভিন্নতার দরুন হত্যাযজ্ঞ শুরু করে জঙ্গিরা।
গত সপ্তাহে, ২ বিদেশী নাগরিককে, যাদের একজন ইতালিয়ান ও আরেকজন জাপানি, গুলি করে হত্যা করেছে রহস্যময় বন্দুকধারীরা, যারা মোটরবাইকে করে পালিয়ে গেছে। ওই দুই হত্যাকা-ের দায় নিয়েছে আইএস। হত্যার শিকার ২ ব্যাক্তিকে ‘ক্রুসেডার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তারা। কিন্তু সরকার এসব হত্যাকা-ে আইএস-এর জড়িত থাকার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং ইঙ্গিত দিয়েছে যে, হত্যার ঘটনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জড়িত স্থানীয় জঙ্গিরা ঘটিয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিজ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে বর্ধিত সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি স¤পর্কে সতর্ক করে আসছে। পশ্চিমারা যেখানে বড় আকারে জমায়েত হয়, সেসব স্থানে বৃটিশ কর্মকর্তাদের না যেতে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল বাংলাদেশে একটি ক্রিকেট সিরিজ বাতিল করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর