হে মোর দুর্ভাগা দেশ

একটি জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে পরিপূর্ণ বিশ্রাম-শয্যায় শায়িত অবস্থায় এ নিবন্ধটি লেখার উপক্রমণিকায় আমার সুহৃদ, শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীর কাছে ‘সাফেয়া-কামেলা-আজেলা’ প্রাপ্তির জন্য করুণাময় আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করার বিনম্র অনুরোধ করছি। রোগশয্যা থেকে আবার বিদেশে যাওয়ার প্রচণ্ড সম্ভাবনা।
এ অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক গুমোট আবহাওয়া হৃদয়ের মর্মে মর্মে অনুধাবন করা সত্ত্বেও আমি আমার উপলব্ধি ও মননশীলতাকে তুলে ধরতে পারিনি। এ নিস্তব্ধতা গলার কাঁটার মতো আমার অনুভূতিকে কুরে কুরে খাচ্ছিল, এ দুর্ভাবনায় যে, আমি কি কাছিমের মতো মুখ লুকিয়ে নিলাম? যারা আমাকে বুকের সব অনুভূতির আবির মাখিয়ে ভালোবাসেন, তাদের বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আমার নির্ভয় উক্তি- না; আমি জ্ঞান থাকা পর্যন্ত দেশের মানুষ ও রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধতার আঙ্গিক থেকে অকুতোভয়ে হৃদয়ের অনুভূতি প্রকাশ করে যাব। আমার একজন ঐকান্তিক শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে এত দুঃসাহসী কথা বলা ও লেখার শক্তির উৎস কী? আমি তাকে বলেছি, আল্লাহর প্রতি তাকওয়া (বিশ্বাস)-এর মূল উৎস এবং তারই ধারাবাহিকতায় প্রাপ্তি প্রত্যাশাহীন মননশীলতা এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততাই এ নির্ভীকতার কারণ। আমার এ নির্ভীক চেতনার সঙ্গে দেশি-বিদেশি কোনো শক্তির সম্পর্ক নেই।
সম্প্রতি ইতালিয়ান ও জাপানি নাগরিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক আঙ্গিকে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে- বাংলাদেশ আজ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ নয়। বাংলাদেশ সম্পর্কে এ ভ্রান্ত ধারণার জন্য আমাদের প্রশাসনের অদূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার অভাবও অনেকাংশে দায়ী। প্রায়ই সন্ত্রাসী গ্রেফতারের পর যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের দৃশ্য প্রদর্শন করা হয়েছে, তাতে এ ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার পর পাশ্চাত্যের অনেক দেশ তাদের স্ব স্ব জাতীয় ক্লাবগুলোকে বন্ধ রাখতে পরামর্শ দিয়েছে এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের উদ্দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। এটাও উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক, ২০-দলীয় জোটের আন্দোলনের প্রাক্কালে গাড়ি পোড়ানো, পেট্রলবোমা ও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা দেশে-বিদেশে এমন নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। পোশাকশিল্পের সঙ্গে যেসব বিদেশি ক্রেতা দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের পোশাকশিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তারাও আতঙ্কিত ও উৎকণ্ঠিত। বাংলাদেশ পরিভ্রমণে তারা ভীতসন্ত্রস্ত। তাত্তি্বকভাবে যে যে বিশ্লেষণই দিক না কেন, রপ্তানিমুখী শিল্পপতিরা আজ চিত্তের উৎকণ্ঠার মধ্যে অবরুদ্ধ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদানসাপেক্ষে এ পরিস্থিতির অবসান ঘটানো আশু প্রয়োজন। আমি স্থির প্রত্যয়ে বিশ্বাস করি, এ দেশের মানুষ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে অন্তর থেকে ঘৃণা করে। পৃথিবীর সবচেয়ে সম্প্রীতিকামী জাতি হিসেবে আমরা সব সময়ই নিজেদের দাবি করতে পারি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাঙালি জাতির সম্প্রীতি ও সামাজিকতার বন্ধন এতটাই নিগূঢ় যে, পাকিস্তান আমলে চেষ্টা করেও এখানে কেউ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে চেয়ে সফল হতে পারেনি; আজও কেউ পারবে না। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাশের দেশ ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্যান্য প্রদেশে ধর্মে-ধর্মে, বর্ণে-বর্ণে অনেক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে।
সম্প্রতি মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। শুধু মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষাই নয়, প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিযোগিতামূলক সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়মিত ও স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা শুধু মেধা বিকাশে বাধা নয়, বরং প্রতিভাপ্রদীপ্ত, প্রাণচঞ্চল তারুণ্যের বিকাশের পথে বিরাট অন্তরায়। সংসদ, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা যখন অবক্ষয়ের অতলান্তে নিমজ্জিত তখন এ ঘটনাগুলো মানুষকে বর্ণনাতীত আতঙ্ক এবং অস্থিরতার মধ্যে রেখেছে।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্থপতি- এ দেশের মানুষের উদ্বেলিত চিত্তের মহামিলন তার শানিত অস্ত্র এবং বাঙালি জাতীয় চেতনায় উজ্জীবিত ছাত্রলীগ তার নিখুঁত কারিগর। বঙ্গবন্ধুর চেতনার আদর্শ, মন ও মননশীলতার শুধু উত্তরাধিকার নয়, স্বাধীনতা অর্জনে দিগন্তবিস্তৃত সাফল্যের দাবিদার ছাত্রলীগ। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা শুধু আমাদের প্রচণ্ড অহংকার নয়, তাদের অবিস্মরণীয় আত্দত্যাগে, বুকনিঃসৃত রক্তে, সতীত্ব হারানোর নির্মম, নিষ্ঠুর যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ হয়। সম্মাননা, স্বীকৃতি তাদের ন্যায্য পাওনা। তাদের যে কোনো ধরনের ভাতা, বিনামূল্যে চিকিৎসা, এমনকি তাদের সন্তানদের পুরো শিক্ষাজীবনকে বিনামূল্যে বহন করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। কিন্তু যে কোনো ধরনের পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র নমনীয়তা বা আপসকামিতা বাঞ্ছনীয় নয়।
ক্ষমতাসীন নেত্রী জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের আগে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যে উক্তিটি (মৌলিক অধিকার নয়, উন্নয়নই আমার লক্ষ্য) করেছেন, এটি সন্দেহাতীতভাবে একটি স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এমনিতেই কী সংসদ, কী প্রশাসন, কী বিচারিক ব্যবস্থা- আজ মূল্যবোধের অবক্ষয়ের অতলান্তে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতি একটি স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের রূপ নিয়েছে। দুর্নীতিবাজরা আজ বুক চিতিয়ে রাষ্ট্রের সর্বেসর্বা এবং তারা দর্পভরে সমাজে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। মনে হয় তারাই যেন রাষ্ট্রের মূল কর্ণধার। আমি বহু আগে থেকে বার বার একটি কথা বলে চলেছি- বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, যুবক, বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের জরুরি ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করুন। মায়ের গর্ভের শিশুও যখন বুলেটবিদ্ধ হয়, ছেলের সামনে মাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ধর্ষণ করা হলে, এমনকি প্রকাশ্য দিবালোকে ধর্ষণের মর্মান্তিক দৃশ্য অবলোকন করেও যখন মানুষ প্রতিহত করতে এগিয়ে আসে না, তখন মানুষের হৃদয়ের দৈন্যদশা, হতাশার বিবর্ণ চিত্রটি প্রকট হয়ে দেখা দেয়।
আমি প্রত্যয়দৃপ্ত চিত্তে বলতে পারি, জীবনে অনেক অগি্নপরীক্ষায় প্রমাণ করেছি, আমার চিত্ত কেবল নির্লোভই নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মননশীলতার প্রশ্নে আমি সব প্রাপ্তি-প্রত্যাশা, ভয়ভীতি, ও নির্যাতন-নিগ্রহের পরোয়া করিনি, করব না। দেশের অভ্যন্তরে এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ব্যতিক্রমহীনভাবে শেখ হাসিনা তার পিতা-মাতাসহ স্বজন হারানোর বেদনাপ্লুুত চিত্তে, অশ্রুসিক্ত নয়নে উদ্ধৃতি প্রদান করেন, একমাত্র বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি হিসেবেই তিনি বাংলার মানুষের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো শুধু তার একার পিতা নন, সমগ্র জাতির পিতা। এটি শুধু তার একার নয়, সমগ্র জাতির শোক।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্য সরকারিভাবে ২২৭ জনের বিশাল ও ব্যয়বহুল অভিযাত্রায় রাষ্ট্রের যে বিপুল অর্থের অপচয় হলো তা শুধু সাধারণ মানুষকে ব্যথিতই করেনি, বিস্ময়াভিভূতও করেছে।
বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আজ নীরব, নিস্তব্ধ, নিঃস্পৃহ ও বিকলাঙ্গ। নিজ সন্তান-সন্ততির সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করার অধিকার তিনি রাখেন। কিন্তু বিশাল মার্সিডিজে যেভাবে তারেক জিয়া গাড়ি চালিয়ে তাকে নিয়ে গেলেন, তাতে লন্ডনপ্রবাসীরা কতটুকু সংগঠিত হয়েছেন জানি না, কিন্তু বাংলাদেশে তার দলের নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীদের প্রকাশ্য জিজ্ঞাসা- বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে, স্বজনরা ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য ও বিলাসিতার উত্তাল তরঙ্গে গা ভাসাবেন আর সাধারণ কর্মীরা রাস্তায় প্রতিরোধ গড়বেন, গুলি খাবেন কোন যুক্তিতে? শুধু দুই জোটের প্রধান নেত্রীই নন, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিলাসবহুল ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের উচ্ছ্বসিত ঊর্মিমালায় গা ভাসিয়ে দেওয়া- এ বল্গাহীন জীবন, মানুষের মনে আজ বদ্ধমূল ধারণার সৃষ্টি করেছে যে, রাজনীতি আজ পুঁজিবিহীন, ঝুঁকিবিমুক্ত, রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিকানা লাভের একমাত্র নিমিত্ত।
দুই জোটের দুই নেত্রীর উদ্দেশে বলি, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ক্ষমতা অনেক দিন তো ভোগ করলেন, এখন জাতির প্রতি ঔদার্য ও আত্মত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এ দুর্ভাগা দেশটির শেষ রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। দুই নেত্রীর স্বতঃপ্রণোদিত ঘোষণা হোক- আমরা ক্ষমতার রাজনীতি থেকে অবসর নেব। মহাত্মা গান্ধী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্ভাসিত হব। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাঙালি জাতীয় চেতনার প্রত্যয়দৃপ্ত ঐক্যের বন্ধনে সমগ্র জাতিকে উজ্জীবিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। কোনো নেত্রী, জোট বা দল নয়; দেশের মানুষ আপামর জাগ্রত জনতা। তাদের হৃদয়ের স্পন্দনকে উপেক্ষা করে এ থমথমে স্থবির অনিশ্চিত পরিবেশ দীর্ঘায়িত করলে যে ঝড় উঠবে, তার থেকে পরিত্রাণ তারাও পাবেন না।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বললেও কম বলা হবে। প্রতি মুহূর্তেই জেনারেল এরশাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দলটিকে শুধু হাস্যস্পদই নয়, ক্রমাগত বিলুপ্তির দিকে টেনে নিচ্ছে।
আজকের উন্মুক্ত বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় ক্ষমতাসীনদের বুঝতে হবে, বৈদেশিক অর্থ তো বটেই, এমনকি দেশীয় পুঁজির লগি্নর জন্যও মৌলিক অধিকারসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একান্ত প্রয়োজন। ক্ষমতাসীন জোটের অদূরদর্শিতার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সম্পর্ক ক্রমেই শীতল হচ্ছে। এটা সব অবস্থাতেই অনভিপ্রেত। ভিয়েতনাম আজ আমেরিকার অর্থে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। অথচ তারা সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত ছিল দীর্ঘ ১৭ বছর। তার নিষ্পত্তিও হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, আলোচনার টেবিলে। কিউবা আজ অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পর আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। বারাক ওবামা, পুতিন, ক্যামেরন, অ্যাঙ্গেলা মার্কেল- আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়েই আজকে প্রায় অভিন্ন সুরে কথা বলছেন। কিন্তু পাশ্চাত্যের সঙ্গে বাংলাদেশের এমন কী অজানা সমস্যা যে, সম্পর্ক ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে!
পাশের দেশ ভারত আমেরিকা তো বটেই, চিরবৈরী পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এ দেশের, দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার যে, শুধু ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় প্রতিহিংসাপরায়ণতা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, তারা বল্গাহীনভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। শুধু এ উপমহাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে এটি একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই ক্ষমতা দখলের লড়াই আছে, দলমতের ভিন্নতা আছে, নির্দিষ্ট সময় পরে সরকারের পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু দেশের পররাষ্ট্রনীতির কোনো ব্যত্যয় ঘটে না এবং আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান।
রোগশয্যায় থেকে রাজনীতির সব জোট ও দলের প্রতি আমার বিনম্র আহ্বান- ব্যক্তিবন্দনা, অর্চনা, স্তুতি ও স্তাবকতা বন্ধ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন। চূড়ান্ত অবক্ষয়ের হাত থেকে দেশটাকে বাঁচান। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো সর্বনাশা ব্যাধি থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করুন।
আমার এ নিবন্ধের উপসংহার হলো এই- বাংলাদেশ এতই দুর্ভাগা যে, আমরা সহজ কথাটাকে আত্দম্ভরিতার আঙ্গিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখি। মৌলিক অধিকারবিবর্জিত উন্নয়ন দুর্নীতি, দুর্বিচারের সীমানা বিস্তৃত করে। আজকে সরকার ও বিরোধী জোটের যাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ক্ষমতা; এবং যারা আজকে ঐশ্বর্য, বৈভব, প্রতিপত্তির গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন, তাদের উদ্দেশে আমি স্মরণ করাতে চাই বিশ্বজয়ী মহাবীর আলেকজান্ডারের জীবনের অন্তিমলগ্নে দিয়ে যাওয়া শিক্ষাটি (তিনি মহান দার্শনিক অ্যারিস্টটলের ছাত্র ছিলেন)। মাত্র ২০ বছর বয়সে গ্রিসের সিংহাসনে আরোহণ করা আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় তিনি তার সেনাপতিদের ডেকে অন্তিম অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন, আমার কফিন বহনের সময় আমার দুই হাত কফিনের বাইরে ঝুলিয়ে রেখ। সেনাপতিরা তার এ অভিপ্রায়ের কারণ জানতে চাইলে তিনি মৃদু হেসে বলেছিলেন, এর মধ্য দিয়ে আমি পৃথিবীর মানুষকে জানাতে চাই যে আমি খালি হাতে পৃথিবীতে এসেছিলাম, আবার খালি হাতেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছি। -বাংলাদেশ প্রতিদিন

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর