স্মার্টকার্ডে ভুলের মাশুল দিচ্ছেন নাগরিকরা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নাগরিক সুবিধা সংবলিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ কারণে সংস্থাটি থেকে ভুল পরিচয়পত্র সংশোধনে নাগরিকদের সময় দিয়ে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়। দেশের মানুষের আশা এই স্মার্টকার্ড একটি সুন্দর ও প্রযুক্তিনির্ভর কার্ড। তা নির্ভুল হবে। কিন্তু অনেকের সে আশার গুড়ে এখন বালি পড়েছে। এই আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন রাজধানী ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা চিকিৎসক ইকবাল আহমেদ।

কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ইকবাল আহমেদ তার পরিচয়পত্রের ইংরেজি বানানের একটি শব্দ ‘কে থেকে কিউ’ করার জন্য আবেদন জানান। তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে তা সংশোধন করে আরেকটি নরমাল প্লাস্টিকের কার্ড সরবরাহ করা হয়। এ কার্ডটি দিয়ে তাকে বলা হয়, স্মার্টকার্ডে আপনি সঠিকটি পাবেন। এর জন্য সংশোধন ফি বাবদ তিনি ইসিকে প্রদান করেন ২৫০ টাকা।

ইতোমধ্যে রাজধানীতে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়। এ সিটিতে অর্ধ কোটির বেশি ভোটারের একজন এই ডাক্তারও নির্ধারিত সময়ে স্মার্টকার্ডটি হাতে পেয়ে যান। এটি পেয়েই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় ডাক্তার সাহেবের। কারণ আগের ভুলটিই স্মার্টকার্ডে বহাল। কিছুদিন ইসিতে ঘোরাঘুরি ও ভুলের কারণ নিয়ে হইচই। কিন্তু এইসাংবিধানিক সংস্থা থেকে কোনো সদুত্তর না পেয়ে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।

সম্প্রতি কোনো এক আত্মীয়ের সহায়তায় নতুন করে আরো ২৫০ টাকার বিনিময়ে আরেকটি কার্ড নিয়েছেন তা-ও নরমাল প্লাস্টিকের কার্ড। একই সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ট্রেনিং স্পেশালিস্ট আবু বকর সিদ্দিক তার আইডি কার্ড ও স্ত্রী নাজমা আক্তারের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করেছেন। এনআইডিতে কথা হয় এ দুজনের সঙ্গে। তারা বলেন, আগের ভুল সংশোধন করার পরও স্মার্ডকার্ডে পূর্বের ভুলটি এসেছে। এখন নতুন করে বাড়তি ফি দিয়ে কার্ডটি সংশোধন করে নিলাম। তবে, যে উদ্দেশে স্মার্টকার্ড পাওয়ার আগে সংশোধন করেছিলাম তা আর কাজে আসছে না। কারণ ভুলের কারণে এ প্রযুক্তিনির্ভর কার্ডটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

সমস্যা শুধু ইকবাল কিংবা আবু বকর সিদ্দিকের পরিবারের একার না; ৪ লাখের বেশি নাগরিক এ সমস্যায় ভুগছেন। এ তথ্য ইসি সংশ্লিষ্টদের। তবে, দুবার সংশোধন করতে হবে এ ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নাগরিকের সংখ্যা আরো বেশি। ইসির তথ্যনুযায়ী, এসব নাগরিকের দুবার আইডি সংশোধনে ভোটার নাগরিকের জন প্রতি ২৫০ টাকা ধরে বাড়তি আয় হবে ইসির ১০ কোটি টাকা; যার পুরোটাই গচ্চা যাচ্ছে নাগরিকের।

জানতে চাইলে সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অণুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন) আবদুল বাতেন বলেন, স্মার্টকার্ড বিতরণের আগে আমরা যাদের ভোটার পরিচয়পত্রে ভুল ছিল সেগুলো সংশোধনের জন্য সুযোগ দিয়েছিলাম। নির্ধারিত সময়ে অনেকে আবেদন করে সংশোধিত করে নেন ভুল পরিচয়পত্রটি। কিন্তু সংশোধনের আগেই অনেকের স্মার্টকার্ড মুদ্রণ হওয়ায় আগের ভুলটি পুনরায় এ কার্ডে থেকে যায়। এটা গ্রাহকের ভুল নয়, আবার ইসির অনিচ্ছাকৃত। সার্ভার সিস্টেমের কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে, দুবার সংশোধনে নাগরিকদের কিছু টাকা বাড়তি গচ্চা যাচ্ছে; ওই সিস্টেমের কারণে আমরা ভোটার নাগরিকদের অসুবিধা জেনেও কোনো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারছি না।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার পরিচয়পত্র প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। এখন পর্যন্ত ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটার নাগরিকের ডাটা সংরক্ষণ করছে ইসি। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম দিকে এনআইডিতে ভুরিভুরি ভুল ছিল। এটা কিছু নাগরিকের অসচেতনা এবং কিছুটা ইসির সিস্টেমের ভুল ছিল। ফলে প্রথমদিকে, বিনামূল্যে এসব ভুল সংশোধনের সুযোগ রেখেছিল কমিশন। কিন্তু পরবর্তীতে ভুল কিংবা অনেকে নাগরিকের সুবিধা অনুযায়ী, আইডি কার্ড সংশোধনের হিড়িক শুরু হলে ফি নির্ধারণ করে এ সুযোগ চালু করা হয়। হারালে ২৩০ টাকা এবং নাম-জন্ম তারিখ ভুল হলে সোনালী ব্যাংকে ২৬৩ টাকা জমা দিয়ে সংশোধনের সুযোগ রাখে।

তবে, দুবার সংশোধনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু স্মাটকার্ড দেবে এ কারণে ঢালাও ভুল সংশোধনের সুযোগ দিয়ে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয় ইসি। এতে স্মার্টকার্ড মুদ্রণের জটিলতায় নাগরিকের কোনো সুবিধা হয়নি। বরং ভোগান্তি বেড়েছে। এক জাতীয় পরিচয়পত্র দুই বার সংশোধন করতে হচ্ছে। এতে ইসির ভোগান্তি বাড়লেও নাগরিকদের পকেট ফাঁকা হচ্ছে। তবে, সিস্টেমের কারণে ইসির কোনো সহায়তা পাচ্ছে না নাগরিকরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর