নেত্রী এবার আমায় সুযোগ দেবেন: আবু নাসের

লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগের পর শূন্য হওয়া টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিরাজ করছে নির্বাচনের আমেজ। উপনির্বাচনকে ঘিরে কালিহাতী চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলের বেশ কয়েকজন নেতা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে আছেন দলটির কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও জনতা ব্যাংকের পরিচালক আবু নাসের। ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আবু নাসের বলেছেন তার নানা পরিকল্পনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানিম আহমেদ।

আবু নাসের বলেন, রাজনীতিতে যোগ্যতা মাপার চাবিকাঠি হলো মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ, এলাকার প্রতি কর্তব্যবোধ এবং দেশপ্রেম। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে নিজেকে সমাজের অগ্রসরমান চিন্তার মানুষ হিসাবে মনে করেন নিজেকে।

কেন মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন?

রাজনীতির সাথে আছি প্রায় ৩৫ বছর ধরে। সাধ্যমত জনগণের সেবায় চেষ্টা করে যাচ্ছি। যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে অনেকের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচয় নেই। অনেক অপরিচিত প্রার্থী মনোনয়নপত্র কিনেছেন তারা কেন কিনেছেন সেটা আমি বুঝতে পারছি না।

প্রধানমন্ত্রীর সাহসী নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এই অবস্থায় জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন করবে তাদের নেতৃত্ব যদি আন্তর্জাতিক মানের না হয় তাহলে বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হবে। এই দিক থেকে কার যোগ্যতা কেমন সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী খোঁজখবর নিচ্ছেন। সবার যোগ্যতা, দলের জন্য ত্যাগ বিশ্লেষণ করেই তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন ।

ব্যবসায়ী হিসেবে অর্থনৈতিক দিক থেকে কী ভূমিকা রেখেছেন?

রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীও আমি। ২০ বছর থরে একাধিক বাণিজ্যিক সংগঠনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। জাতীয় ভিত্তিক সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি এবং সদ্য সমাপ্ত ব্যবসায়ী সংগঠনের সর্বোচ্চ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকও নির্বাচিত হয়েছি। ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি হিসাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সভা-সেমিনারে যোগ দিয়েছি। আবার সরকার আমাকে দেশের অন্যতম একটি বৃহৎ রাষ্ট্রয়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালক হিসাবে নিয়োগ করেছে। সে দায়িত্ব আমি আমার যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর রাখার চেষ্টা করছি। সর্বোপরি আমি আমার এলাকার মানুষের সমস্যা শুনবার প্রয়াস পেয়েছি। এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে গিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য কালিহাতীর নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়ন করেছি নিজ উদ্যোগে।

এলাকার গরিব মানুষের সঙ্গে অতীতেও ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন মানের উন্নয়নে কাজ করেছি। তাদের সন্তানদের অথনৈতিকভাবে মুক্তি দেওয়ার জন্য চেষ্টাসহ এলাকায় জন্য কাজ করছি।

যে এলাকায় নির্বাচন হচ্ছে সেখানে এলাকাবাসীর ওপর পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছে। ভোটের মাঠে সরকারি দলের নেতা হিসেবে তো আপনাকে জবাবহিদি করতে হতে পারে।

কালিহাতীতে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে তার দায় আমরা কেউ এড়াতে পারি না। এখানে দুটি ঘটনা ঘটেছে যার মধ্যে একটি পৈশাচিক, বর্বরোচিত। এর প্রতিক্রিয়ায় পাঁচজন মানুষ নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। যদি সঠিক নেতৃত্ব থাকতো তাহলে এমন দূর্ভাগ্যজনক অবস্থা সৃষ্টি হতো না। এ বিষয়ে আমার একান্ত অভিমত হলো কালিহাতীতে রাজনৈতিক শূন্যতা এবং ভবিষ্যত বিনির্মাণে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা যদি এ সংকট মোকাবেলা করতে পারি তাহলে কালিহাতীতে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।

ওই সময় আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছি। নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। তাদেরকে কথা দিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করে তাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করার চেষ্টা করবো।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীরা তো এই ঘটনাকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা করবে।

এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এ ঘটনার সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই। যেহেতু নির্বাচন এসেছে সেকারণে একজন প্রার্থী (কাদের সিদ্দিকী) সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন। ঘটনার দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী তিনি। কালিহাতীতে তার জন্ম কিন্তু সুদীর্ঘ রাজনৈতি পরিক্রমায় ওনার সঙ্গে এখানকার মাটি ও মানুষের সাথে তাঁর কোন সম্পর্ক নেই। তিনি সখিপুর-বাসাইল থেকেই নির্বাচন করছেন। সেখানেই সংসার গড়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত হয়েছেন। আর তিনি এই দুঃখজনক ঘটনাকে পুঁজি করার চেষ্টা করছেন। আমি মনে করি কালিহাতীর জনগণ অনেক সচেতন তাদের চোথে ধুলো দিতে পারবে না এর প্রভাব নির্বাচন পড়বে না বলে আমি মনে করি।

কেন আপনাকে ভোট দেবে মানুষ?

আমি দীর্ঘকাল ধরে কালিহাতীর জনগণের সেবক হিসাবে থাকার চেষ্টা করছি। আগামীতে উন্নয়নের জন্য সকলের মতামত নিয়ে নতুন একটি দিগন্ত উম্মেচিত করতে চাই। দিনবদলের সংগ্রামে এ এলাকার সাধারণ মানুষকে নিয়োজিত করতে চাই। আমি মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হলে একটা বিষয় নিশ্চিত করবো যে, কালিহাতীর মালিক হলেন এই এলাকার জনগণ। সংসদ সদস্য এলাকার রাজা আর জনগণ প্রজা-এমন বাঁধ ভেঙে দেবো। যারা প্রশাসন চালায় তারাও যেন জনগণের সেবক হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করবো। মানুষের সাংবিধানিক অধিকার যেন খর্ব না হয় সে কাজ করবো।

কালিহাতীর জন্য সুনির্দিষ্ট কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা আছে?

শিল্পায়নে জন্য উপযুক্ত স্থান হলো বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপার। যদি এ এলাকা হতে টাঙ্গাইল শহর পর্যন্ত একটি বেড়ি বাঁধ তৈরি করা যায় তাহলে ভেতরের অনাবাদি জায়গাগুলোকে শিল্পায়ন করতে পারি। সড়ক, নৌ ও রেলপথ এবং বিদ্যুৎ-সব কিছুই আছে। কেবল একটি বাঁধ নির্মাণ করা গেলে একদিকে যেমন যানজট কমে যাবে অন্যদিকে মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য দেশি বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী আসবে। একজন ব্যবসায়ী হিসাবে অনেক বিনিয়োগকারী আমাদের কাছে আসে। আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে ব্যবসায়ী ও সংসদ সদস্য-দুই পরিচয়ের সমন্বয়ে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবো।

কালিহাতীর গৌরব হলো তাঁতশিল্প। তাঁতীরা এখন খুব অসহায় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমার দ্বিতীয় লক্ষ্য হবে কালিহাতীর বল্লাকে তাঁত শিল্পাঞ্চল ঘোষণা করে তাঁত শিল্প পার্ক গঠন করা। কালিহাতী, বল্লা ও এলেঙ্গা পর্যন্ত রাস্তাকে চওড়া করতে হবে। বল্লা বাজারে একটি ডিসপ্লে সেন্টার তৈরি করতে পারি তাহলে সেখানে দেশি-বিদেশি গ্রাহক তথ্য পাবে।

কালিহাতীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরকে আধুনিক শিক্ষার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এক কথায় সমাজে যেসব সমস্যা আছে সেগুলোর সমাধানে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করবো।

আমি যদি নির্বাচিত হই কালিহাতী এবং এলেঙ্গা পৌর এলাকায় সমাজের সচেতন মহলের সাথে ১৫ দিন পরপর বৈঠক করবো। এর মাধ্যমে যৌন নির্যাতনসহ সকল প্রকার অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সামাজিক অংশগ্রহণের কার্যকর ব্যবস্থা নেব।

দলীয় কাজে অবশ্যই নেতা-কর্মীদের প্রধান্য দেবো। কিন্তু উন্নয়ন ক্ষেত্রে তার প্রশ্রয় দেবো না। সেবা ও শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও দলীয়করণ হবে না।

মনোনয়ন না পেলে?

দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করবো। আমি এর আগেও দুই বার মনোনয়ন চেয়েও পাইনি। তাই বলে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যাইনি। এবার আমি আশাবাদী, নেত্রী আমাকে সুযোগ দেবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি অন্য কোন সিদ্ধান্ত নেই, তার পরও হাসিমুখে মেনে নিয়ে দলের পক্ষে থাকবো।

এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি এখন কেমন

অতিবৃষ্টির কারণে গ্রামীণ রাস্তাঘাট চলাচলের অবস্থায় নেই। এর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক। কারণ তার উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে খরচ বেড়ে গেছে। সংসদ সদস্য না থাকায় স্কুল কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। গত এক বছরে কালিহাতীতে নতুন কোন এলাকায় বিদ্যুতায়নের আওতায় আসেনি। যে কারণে আগামীতে যিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন তার উপর বাড়তি একটি চাপ তৈরি হবে। তাকে অনেক ধৈর্য্য সহকারে এলাকার সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। এ জন্য আমরা চাইবো এমন একজন ব্যক্তিকে এ এলাকা থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় যিনি সমস্যা সমূহ বোঝেন, তা সমাধানের জন্য আন্তরিক।

বিএনপি-জামায়াত জোট তো নির্বাচনে অংশ নেবে না, তাহলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কে হতে পারেন?

আবদুল কাদের সিদ্দিকী সাহেব দশম জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু উপ-নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে এসেছেন। এতে প্রমাণ হয় যারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেননি, তারা ভুল বুঝতে পেরেছেন। তবে তিনি নির্বাচনে এসে উত্তাপ ছড়াতে পারবেন কিন্তু জনগণের ভালবাসা পাওয়ার কোন সম্ভাবনা আমি দেখছি না।

কারণ, কাদের সিদ্দিকী কালিহাতীর মানুষের সুখে-দুঃখে কখনও ছিলেন না। যে মানুষটিকে ৭৫ পরবর্তী সময়ে মিছিল-সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাঁচিয়েছেন, তিনিই বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে মিলে নৌকার তলা ফাঁটিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তখনই কালিহাতীর মানুষ তাকে প্রত্যাখান করবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর