কারো মান অভিমান ভাঙাতে আমি যেতে চাই না: প্রধানমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দূরত্ব কমাতে বা ‘রাজনৈতিক মান-অভিমান’ ভাঙ্গাতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা হচ্ছে নীতির প্রশ্ন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও আইনের প্রশ্ন। এখানে কে মান-অভিমান করলো, কার মান ভাঙ্গাতে হবে- সেটা জানা নেই। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে তিনি আরো বলেন, সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে যদি অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়, সেখানে যাবার আর কোনো ইচ্ছা আমার নেই।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২২তম অধিবেশনে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তোর পর্বে জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রশ্ন করতে দাঁড়িয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘একটি পিছিয়ে পড়া জাতিকে উন্নয়নে ভাসিয়ে দেয়ার নাম শেখ হাসিনা। কমতে থাকা বাক্যালাপ, বাড়তে থাকা দুরত্বের, আজ ক্ষোভের পাহাড় জমেছে বড় আভিমানের রাজত্বে, এই যে পলিটিক্যাল অভিমানটা চলছে, এটা কোনক্রমে রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে কম সমস্যা নয়, এই পলিটিক্যাল দুরত্ব কিভাবে সমাধান করবেন’?

এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কোন মান অভিমানের প্রশ্ন নয়, এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রশ্ন ও আইনের প্রশ্ন। কেউ যদি অন্যায় করে কেউ যদি অর্থ আত্মসাৎ করে, কেউ যদি অন্যায় করে, খুন করে, কেউ যদি খুনের প্রচেষ্টা করে, গ্রেনেড মারে, বোমা মারে, তবে তার বিচার হবে, এটাই হবে স্বাভাবিক। রাজনীতি সবাই করেন যার যার নিজের আদর্শ নিয়ে। আর দেশটা সকলের, এমন নয় যে দেশটা কেবল আমাদের। দেশের প্রতি, দেশের জনগণের প্রতি যারা রাজনীতি করেন, তাদের একটা দায়িত্ব থাকতে হবে এবং সেই দায়িত্ব বোধ থেকে সকলে স্ব স্ব কর্মপন্থা ঠিক করবেন এটাই হল বাস্তব। আমরা রাজনীতি করি আমাদের নিজেদের স্বার্থে না, নিজেদের লাভ লোকসান দেখে না। সে বিচার ও হিসেবও করি না। হিসেব করি জনগণের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কতটুকু দিতে পারলাম। জীবন মান কতটুকু উন্নত হলো, এটাই  আমরা দেখি, আর সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা করি এবং তা বাস্তবায়ন করি। দেশের মানুষকে ভালবেসে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি বলেই কিন্তু আজকে এত অল্প সময়ে এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছি। তাছাড়া তো করা সম্ভব না। অতীতে তো অনেক সরকার ছিল, এত অল্প সময়ে এতটা উন্নয়ন কোন সরকার করতে পেরেছে? কেন পারেনি? কেননা, সেখানে ব্যক্তি স্বার্থটাই দেশের ও জনগণের স্বার্থ থেকে বেশী বড় ছিল। আমার ক্ষেত্রে  হচ্ছে দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থ, গোষ্ঠির স্বার্থ সবচেয়ে বড়, ব্যক্তি স্বার্থ না। ব্যক্তিগত হিসেব নিকেষ করি না।  আর সেকারণেই দেশটাকে উন্নত করতে পারছি, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন করতে পেরেছি সেটাই বড়। তাই কারো মান অভিমান ভাঙাতে যাব সেটা আমি চাই না। সহানুভূতি দেখাতে যেয়ে যদি অপমানিত হতে হয়, সেখানে যাবার কোন ইচ্ছা আর আমার নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হবে মিয়ানমার
নুরুল ইসলাম মিলনের (কুমিল্লা-৮)সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নেওয়া ব্যাপারে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে সোভিয়েত রাশিয়া, চীন, ভারত, থাইল্যান্ডসহ  প্রতিবেশি দেশগুলোর কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। চীন, রাশিয়া ও ভারতও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বলেছে মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া। চীন ও ভারত রোহিঙ্গাদের জন্য ঘর-বাড়ি নির্মাণেও সাহায্য দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আদালতও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিমসটেক সম্মেলনের সময় মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার সময়ও তিনি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবেন বলে জানিয়েছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক চাপের মুখেই মিয়ানমার তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) এ বিষয়ে বিচার কার্য শুরু হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের কারণে মানব পাচারসহ নানা অপরাধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে :

নুরুল ইসলাম মিলনের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থানের কোনো সুযোগ নেই। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থানের ফলে মানব পাচার, মাদকদ্রব্য চোরাচালানসহ সংঘবদ্ধ অন্যান্য অপরাধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাই। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে, রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবসন সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ নিজ নিজ অবস্থান হতে আইনের আওতায় কাজ করছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল কর্তৃক গঠিত ’ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিসিং অন মিয়ানমার’ রোহিঙ্গাদের উপর সংগঠিত গণহত্যার প্রমাণসহ তাদের প্রতিবেদন গত ২৭ আগস্ট প্রকাশ করেছে, আইসিসি গত ৬ সেপ্টেম্বর এক ঐতিহাসিক  রায়ের মাধ্যমে এ ইসূতে তদন্ত পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের পথকে আরও প্রসারিত করবে বলে আশা করা যায়। তিনি বলেন, বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবসনে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সাথে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের উপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গারা স্থানীয় জনগোষ্ঠি এবং প্রতিবেশের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। সংরক্ষিত বনভূমি উজাড় এবং ব্যাপক পাহাড় কাঁটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ডিপথেরিয়া, পোলিও, এইচআইভি (এইডস)সহ  অন্যান্য সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উস্কানিমূলক পোস্ট শনাক্তে সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল:

মো. মামুনুর রশীদ কিরনের (নোয়াখালী-৩) প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তিমূলক বা উস্কানিমূলক পোস্ট, ভিডিও প্রচারকারীকে শনাক্ত করার মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল গঠনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সাপ্রদায়িক স¤প্রীতি রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তিমূলক বা উস্কানিমূলক পোস্ট, ভিডিও প্রচারকারীকে শনাক্ত করার মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার জন্য সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল গঠণসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ সাপ্রদায়িক সপ্রীতির দেশ হিসেবে বিশ্বে যে সুনাম অর্জন করেছে তা ধরে রাখতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর। কোনো গোষ্ঠী বা দল যাতে দেশে সাপ্রদায়িক সপ্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে:
আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের (ঝালকাঠি-১) অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে চলছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের রিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বিডি-প্রতিদিন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর