Exif_JPEG_420

“আপনাদের ভাবনা” জনগণের পে-স্কেল কোথায়?অধ্যক্ষ আসাদুল হক

আমাদের দেশকে বলা হয় গণতান্ত্রিক দেশ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের হাত থেকে অনেক প্রাণের বিনিময়ে এ দেশটি স্বাধীন করা হয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আর গণতন্ত্রের মূল পুঁজি হিসেবে ধরা হয়ে থাকে জনগণকে। আমাদের রাজনীতিবিদরা সব সময়ই মুখে খই ফুটিয়ে বলে থাকেন- ‘জনগণই মূল চাবিকাঠি, জনগণই গণতন্ত্রের মূল, জনগণ ছাড়া দেশ অচল, জনগণ ছাড়া সরকার অচল, জনগণই ক্ষমতার উৎস’ ইত্যাদি।

ক’দিন ধরে নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পে-স্কেলের ঘোষণা। প্রথমে শুনে খুব ভালোই লাগল। ভালো লাগারই কথা। কারণ বেতন বৃদ্ধি এবং সব সুযোগ-সুবিধা কে না চায়? আমিও চাই। কিন্তু আমার চাওয়াটা একটু আলাদা…। আমি চাই একটি বৃহৎ স্বার্থের জন্য যদি ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করা যায় তাতে ক্ষতি কী? যদিও এ কথাটির সঙ্গে অনেকেই একমত পোষণ করবেন না।

সম্প্রতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশের প্রায় ২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তাকে পে-স্কেল দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ সিদ্ধান্তের পরে বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সরকারকে বার বার অভিনন্দন জানানো হচ্ছে; হ্যাঁ ধন্যবাদ দেয়াটা তাদের বেলায় সঠিক এবং সরকারও ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে সম্মান করি এবং ব্যক্তিগত দিক দেখে তার প্রশংসা করি। প্রশংসার পাশাপাশি গঠনমূলক সমালোচনাও করে থাকি।

আমাদের দেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ। এ ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ২১ লাখ (গণমাধ্যমের তথ্যমতে) সরকারি কর্মকর্তা। এখন দেখা যাক, ২১ লাখ বাদে বাকি মানুষ কারা? এরা আমাদের মতো সাধারণ কৃষক, মৎস্যজীবী, কাঠুরে, দিনমজুর, উৎপাদক, শ্রমিক। এরা দেশের মেরুদ-। যদি রাজনীতিকদের ভাষায় বলি তাহলে ‘জনগণই ক্ষমতার উৎস’। তাহলে জনগণের কথা কতটুকু ভেবেছেন? আমরা কর প্রদান করি দেশের সুষম উন্নয়নের জন্য। জনগণের টাকা যতটা সম্ভব উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা উচিত। তাহলে সাধারণ মানুষের কষ্টে অর্জিত টাকা গুটিকয়েক মানুষের আরামদায়ক জীবনের জন্য কেন ব্যয় করা হবে? ওইসব সাধারণ নাগরিকের জন্য তো বিশেষ বিবেচনায় কর মওকুফ করা হয় না? এদের তো পে-স্কেলও হবে না, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতাও পাবে না। বরং তাদের খরচ বাড়বে। এদের কোনো আর্থিক নিরাপত্তা না থাকার কারণে কী করে দিন অতিবাহিত করবে, তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।

এখন যদি এই পে-স্কেল বা বর্তমান বাজার নিয়ে বিশ্লেষণ করি তাহলে তা থেকে আমরা কি পাই। তাহলে আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখি। মনে করেন, কাঁচাবাজারে গিয়ে একজন দিনমজুর বা খেটেখাওয়া মানুষ একটি লাউ কিনলেন ৪০ টাকা দিয়ে। ওই লাউটি যদি ৮০ থেকে ১০০ টাকা মূল্য হয় তাহলে পে-স্কেলপ্রাপ্তদের কিনতে মোটেই কষ্ট হবে না। কিন্তু ওইসব খেটেখাওয়া মানুষের ৪০ টাকায় কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। পে-স্কেলপ্রাপ্তদের বেতন-ভাতা বাড়লেও অন্য সাধারণ মানুষদের আয় বাড়ল না। তাহলে ২১ লাখ মানুষের জন্য বাকি পৌনে ১৬ কোটি মানুষের গলার কাঁটা হলো না? এটি কতটুকু যৌক্তিক বলে মনে করবেন দেশের ধারক-বাহকরা!

মনে করি, বেতন বৃদ্ধির প্রধান কারণ সরকারি চাকরিজীবীদের নিরাপদে জীবনযাপন। এটি ভালো কথা। যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন, সর্বোচ্চ বেতন আর সর্বনিম্ন বেতনের পার্থক্যটা কত বেশি। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনের পার্থক্য এত বেশি, তাতে খুব সহজেই বোঝা যায় দেশের বাকি পৌনে ১৬ কোটি মানুষের প্রতি বৈষম্যমাত্রা আকাশ-পাতাল। এ থেকেই বোঝা যায়, নিম্ন আয়ের মানুষের কথা ভেবে এ বেতন কাঠামো নির্ধারিত হয়নি। তারা একবারের জন্যও ভাবলেন না যে, নতুন কাঠামোর বাস্তবায়নে আগের ব্যয়ের সঙ্গে আরও কত টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে, যা জনগণের রক্ত পানি করা রাজস্ব থেকে তাদের বেতন-ভাতা দেয়া হবে। সরকারের এমন কোনো স্থান নেই, যে স্থান থেকে কোনো না কোনোভাবে বছরে ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা আয় হয়। আদমজী জুট মিল বন্ধ। এরপর সম্ভাবনার যতটুকু স্থান ছিল; তাও এবার জিএসপি বাতিলের মধ্য দিয়ে অন্ধকারে পতিত হয়েছে। আমি যদি আরও গভীরে চিন্তা করি তাহলে বোঝা সহজ হবে। মুষ্টিমেয়দের যে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে তারাও তো জনগণ? তারা জনগণের বাইরে নয়। এ জনগণ পাঁচ বছর পরপর ভোটাধিকার প্রয়োগেও ব্যর্থ হয়, কারণ তাদের ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করতে হয়। আর যাদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়, রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে, আজ তাদেরই মাথায় বাড়ি। তাহলে এ থেকে কী বোঝা গেল এটি কোনো কালো হাতের ছোঁয়া নাকি কোনো অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য?

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর