অচল ঢাকায় নানামুখী শঙ্কা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার বন্ধ রাখার পরও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর রাজপথে বাসের দেখা মিলেছে কম। রাস্তায় নেমে বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষ। এদিকে টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন বাস মালিকরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলনের মধ্যে স্বার্থান্বেষী মহল ঢুকে পড়েছে বলে সরকার ধারণা করছে। তিন মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক আইনটি সোমবার মন্ত্রিসভায় উঠবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাসচাপায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অনুদান হিসেবে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরও সরকারের আশ্বাসের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই আস্থাহীনতার কারণও রয়েছে। গত বুধবার ছাত্রদের আন্দোলন-বিক্ষোভের মধ্যেই এক পিকআপচালক এক শিক্ষার্থীর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছে। আহত হয়েছে সরকারি তোলারাম কলেজের এক শিক্ষার্থী। এদিকে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরাও বিক্ষোভ করেছে। ছাত্র-শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ছাত্র ও শ্রমিকরা মুখোমুখি হয়ে গেলে নতুন সংকট দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ঢাকার নগর পরিবহনে কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই, রয়েছে শৃঙ্খলার অভাব। শৃঙ্খলা ফেরাতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, এমনকি মহাপরিকল্পনায় বাস খাত সংস্কারে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশও ঝুলে আছে। পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুনাফালোভী মালিক ও চালকদের হাত থেকে ঢাকাকে বাঁচাতে বাস খাত সংস্কার করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকাকে বাঁচাতে পারে সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা। বাসে শৃঙ্খলার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া দরকার। এতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সমস্যা দূর করতে হবে। বাসে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ঢাকার রাস্তায় বাস মালিক ও চালকের সন্ত্রাস চলছে। এর জন্য পুলিশও দায়ী। একটি সিন্ডিকেট আছে, তারা চাঁদাবাজি করছে। রাস্তায় মানুষ মরছে, তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কোনো সংস্থা, কোনো মন্ত্রণালয়ই দায়িত্ব নিচ্ছে না। এটা এখন সবার কাছেই স্পষ্ট।

ঢাকার সড়ক পরিবহন খাত ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই। ঢাকায় গণপরিবহন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বাড়াতে হবে দোতলা বাসের সংখ্যা। উন্নত ট্রাফিক সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ই-টিকিটিং ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। শৃঙ্খলা আনতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কেননা বিদেশের বিভিন্ন শহরে গাড়িচালকদের জরিমানা করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে। গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণেও আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থা দরকার।

এই সময়ে সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে রাস্তায় নেমে আসা শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে নেওয়া। শ্রমিক-শিক্ষার্থী মুখোমুখি হয়ে গেলে একটি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি নিয়ে ভাববে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর