কিশোরগঞ্জ-২ সংসদীয় আসন নৌকার টিকিটের লড়াইয়ে আট নেতা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-২ সংসদীয় আসন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন। কিন্তু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতার লড়াইয়ে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন তিনি। এই আসনে নৌকার টিকিটের লড়াইয়ে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনের সাথে নেমেছেন অন্তত সাত হেভিওয়েট প্রার্থী।

এসব সম্ভাব্য প্রার্থীদের সফলতা, বিফলতা ও জনপ্রিয়তা নিয়ে চায়ের দোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, রাস্তাঘাট, আড্ডাস্থলসহ এ আসনের সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে। সবার একই প্রশ্ন কে হবেন, নৌকার মাঝি? এ নিয়ে হিসাব নিকাশ চলছে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও।

কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন। তিনি ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিগত নির্বাচনের মতো এবারও দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন। এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ গণসংযোগ, সভা-সমাবেশে তৎপর রয়েছেন তিনি। এলাকার জনগণের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।

সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন ছাড়াও আরো অন্তত সাত মনোনয়ন প্রত্যাশী এ আসনে সরব তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীর এই তালিকায় রয়েছেন, সাবেক আইজিপি, রাষ্ট্রদূত ও সচিব নূর মোহাম্মদ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাদল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু, স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা মঈনুজ্জামান অপু, কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর প্রমুখ।

নিজ নিজ আঙ্গিকে এই আসনটিতে দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে সরব রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাদের ঘিরে দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যাপক তৎপরতায় আসনটিতে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া।

১৯৭৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল কিশোরগঞ্জ-১ আসন এবং কটিয়াদী উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল কিশোরগঞ্জ-২ আসন। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে জেলার নির্বাচনী এলাকাকে পুনর্বিন্যাস করে ৭টির পরিবর্তে ৬টি সংসদীয় আসন করা হলে পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসনটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। হোসেনপুর উপজেলাকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে কিশোরগঞ্জ-১ এবং পাকুন্দিয়া উপজেলাকে কটিয়াদী উপজেলার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসন হিসেবে পুনর্বিন্যাস করা হয়।

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তিনি ৭২হাজার ৮১৯ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী হাজী মো. ইদ্রিস আলী ভূঞাকে পরাজিত করেন। অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান পান ১লাখ ৭২হাজার ৩৪১ভোট এবং বিএনপি প্রার্থী হাজী মো. ইদ্রিস আলী ভূঞা পান ৯৯হাজার ৫২২ভোট।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই বারের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন। নির্বাচনে একক প্রার্থী হিসেবে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

স্থানীয়রা বলছেন, আগামী নির্বাচনে নৌকার টিকিটের জন্য এই আসনে জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কেননা এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাইপ্রোফাইল ব্যক্তি রয়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাদের গণসংযোগ-প্রচারণা এ আসনের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তাদেরকে নৌকার টিকিটের লড়াইয়ে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই ভাবা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন পুলিশের সাবেক আইজি, সাবেক সচিব ও কূটনীতিক নূর মোহাম্মদ। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নূর মোহাম্মদ এর তৎপরতায় কটিয়াদী-পাকুন্দিয়ার নির্বাচনী রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন সমীকরণ। তাঁকে ঘিরে উৎসাহী হয়ে ওঠেছে কটিয়াদী-পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল।

তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েই সাবেক পুলিশ প্রধান নূর মোহাম্মদ নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। একের পর এক পথসভা, গণসংযোগ প্রচারণাসহ এই আসনের জনগণের কাছে প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছেন তিনি। যেখানেই যাচ্ছেন, তার প্রতিটি কর্মসূচীই সফল হচ্ছে। মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ এবং কৌতুহল তৈরি হয়েছে তাকে ঘিরে। মানুষ তার কথা কেবল শুনতে চায় না, তাকে এক নজর দেখতেও চায়। জনতার এই মিছিলে যোগ দিচ্ছেন নারীরাও। তারাও স্লোগান আর উচ্ছ্বাসে রাজনীতিতে বরণ করে নিচ্ছেন তাকে।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজলকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত ডা. মো. আবদুল মান্নান। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনেও মনোনয়নবঞ্চিত হন ১৯৮৬ সালের ৭ই মে ও ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এই রাজনীতিক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে আগামী নির্বাচনেও অ্যাডভোকেট এম এ আফজল দলীয় মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার। নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে বেশ সরব রয়েছেন তিনি। ত্যাগী এই রাজনীতিককে ঘিরে আশায় বুক বাঁধছেন তার সমর্থক নেতাকর্মীরাও।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ আসনে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের হিউম্যান রাইটস লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাদল। তিনি এলাকায় সার্বক্ষণিকভাবে গণসংযোগ করে চলেছেন। পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রমে।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান অ্যাডভোকেট বাদল ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অত্যন্ত মেধাবী ও বঙ্গন্ধুর আদর্শের আজীবন সংগ্রামী রাজনীতিক মোখলেছুর রহমান বাদলকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন তার সমর্থকেরা।

পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনুর সমর্থকরা বলছেন, রফিকুল ইসলাম রেনু তৃণমূলের একজন পোড় খাওয়া নেতা। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সদর ইউনিয়নের একাধিকবারের চেয়ারম্যান, সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সব সময়ে জনতার কাতারেই রয়েছেন। তৃণমূলের একজন পরীক্ষিত নেতা হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে তাঁর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এছাড়া ওয়ান ইলেভেনের সময়ে দলের চরম দুঃসময়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যখন কারাবন্দী হন, পাকুন্দিয়ায় প্রথম প্রতিবাদ মিছিল বের করেন রফিকুল ইসলাম রেনু। আওয়ামী লীগের মাঠের নেতা হিসেবে তাঁর অবদান বিবেচনায় রফিকুল ইসলাম রেনুই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন সমর্থক নেতাকর্মীরা।

মনোনয়নের এই লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক ও আওয়ামী লীগ নেতা মঈনুজ্জামান অপুও। তাদের সমর্থকেরা মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর