আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার বাইরেও

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকালও সারা দেশের জেলায় জেলায় স্কুল শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে। বিভিন্ন বিভাগ থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর—
বরিশাল : বরিশালে বৃষ্টিতে ভিজে মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একটি ট্রাক এবং বিআরটিসির বাস ভাঙচুর করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভকালে মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে গেলে পুলিশের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।
গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় মহাসড়কে জড়ো হয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ২টি যানবাহন ভাঙচুর করে। এ ছাড়া বিভাগের সবকটি জেলায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরের গোলপাহাড় মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেছে। ফলে সড়কে এলোমেলো কোনো যানবাহন ছিল না। রিকশা, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার ও গণপরিবহন সুশৃঙ্খলভাবে চলেছে। কোনো চালক কাউকে ওভারটেক করতে চায়নি। যান চলাচলের গতি ধীর হলেও ছিল শৃঙ্খলা। কারও বিরুদ্ধে কোনো উচ্চবাচ্য ছিল না। গতকাল দিনভর ছিল এ চিত্র। সকাল থেকে নগরীর ওয়াসার মোড়, প্রবর্তক মোড়, গোলপাহাড় মোড়, জিইসি এবং দুই নম্বর গেট এলাকায় পরিবহনের চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করেছে তারা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরে ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে নগরের এসব মোড়ে সমবেত হয়।  নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় অবস্থায় নেয় ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজ, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ও শ্যামলী পলিটেকনিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী।
সেখানেও একই উপায়ে যানবাহনের কাগজপত্র দেখছিল শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ওয়াসার মোড়ে অবস্থান নিয়েছে বি এ এফ শাহীন কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কলেজ, বিজ্ঞান কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সরকারি সিটি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এ সময় আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা ছিল নিষ্ক্রিয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওয়াসার মোড় এলাকায় একটি বাস ভাঙচুর করে। এরপর সেখান দিয়ে চলাচলকারী একটি পুলিশ ভ্যানকে থামানোর চেষ্টা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গাড়ি না থামালে সেটি লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়লে ভ্যানের চালক পুলিশ সদস্য আহত হয়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, যানবাহন ও চালকের লাইসেন্স আছে কিনা- তা দেখার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীরাই পালন করছে জনগণের করের টাকায় সরকারের বেতনভোগী পুলিশের দায়িত্ব। এটি আমাদের জন্য দুঃখের। আন্দোলনরত এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, ‘আমাদের দাবি নিরাপদ সড়ক। আমরা চাই আর কোনো মায়ের বুক খালি না হোক। যদি চালকের লাইসেন্স না থাকে, গাড়ির ডকুমেন্ট ঠিক না থাকে, ফিটনেস না থাকে তবে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’ এ ছাড়াও বিভাগের সবকটি জেলায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে।
রংপুর : সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও গতকাল সকালে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে রংপুর নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা মেডিকেল মোড় এলাকায় বেলা ১১টা থেকে দুই ঘণ্টা রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক  অবরোধ করে রাখে। এতে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে। সকালে কয়েকশ শিক্ষার্থী রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর মেডিকেল কলেজসহ নগরীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ছুটে এসে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়। তখন পুলিশ পিছু হটে যায়। একইভাবে বিভাগের সবকটি জেলায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে।
খুলনা : নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে মহানগরীর শিববাড়ী মোড়ে অবস্থান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে শিববাড়ী মোড়সহ আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ২টা থেকে শিক্ষার্থীরা গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করতে শুরু করে। একটি প্রাইভেট কারের কাগজপত্র দেখতে চাইলে চালক দ্রুত গাড়িটি নিয়ে পালাতে চেষ্টা করে। এ সময় সড়কে হোঁচট খেয়ে আন্দোলনরত ৫ শিক্ষার্থী ও ট্রাফিক পুলিশ আবু সোলায়মান আহত হয়। পরে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া করে কাগজপত্রবিহীন প্রাইভেট কারটি (খুলনা মেট্রো-চ-১১-০২৭১) আটক করে। বিভাগের সবকটি জেলায়ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে।
রাজশাহী : রাজশাহীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় তারা নিরাপদ সড়ক চাই স্লোগানে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি জানিয়ে শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করে। বিভাগের সবকটি জেলায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে।
সোহেল তাজের সমর্থন : নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। গতকাল নিজের ফেসবুক পেজে তিনি বলেন, ‘আমি আমার শিক্ষার্থী ভাইবোন, অভিভাবক এবং সব সাধারণ মানুষের নিরাপদ সড়কের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি ও সমর্থন জানাচ্ছি। নিরাপদ সড়ক এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়ে আমি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। এ বিষয় নিয়ে আমি বেশ কিছু উদ্যোগও নিয়েছিলাম। প্রয়োজনে আমি সরকারকে এর সমাধানে সহায়তা করতে প্রস্তুত। ২০১০ সালে আমি বলেছিলাম, সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি নীরব সুনামি।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর