হজ পালনে লাভ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। এ হজ পালন করার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা প্রতি বছর হজের মৌসুমে মক্কায় সমবেত হন। লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হয় মক্কার আলোকিত পরিবেশ। হাজীদের ওপর বর্ষিত হয় রহমতের বারিধারা। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সাদা কাপড়ে আবৃত দেহ নিয়ে বাইতুল্লাহর চতুর দিক তাওয়াফ করেন হাজীরা। সেই সঙ্গে হাজরে আসওয়াদকে একবার চুমু বা স্পর্শ করার আশান্বিত হন প্রত্যেক হজ পালনকারী।

মক্কার অদৃশ্য রহমতের জোয়ারে সিক্ত হন হজ পালনকারীরা। হজ মুসলিম উম্মাহর জন্য আত্মশুদ্ধির অনন্য সোপান। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ হয়। এ হজের মধ্যে আর্থিক ও শারীরিক উভয়ের অংশীদারিত্ব রয়েছে। হজ পালনের মাধ্যমে বান্দার সমুদয় গোনাহ ক্ষমা হয়ে যায়, নিষ্পাপ হয়ে যান হজ আদায়কারী। আর কবুল হজের বিনিময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজ পালনকারীকে জান্নাত দান করেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করে এবং তাতে কোনো অশ্লীল কথা বলে না অথবা অশ্লীল কাজ করে না, তাহলে সে হজ থেকে ফিরবে সেদিনের মতো যেন তার মা তাকে প্রসব করেছে।’ (বোখারি : ১৫৪৬)।

আরও বলেন, ‘এক ওমরা অপর ওমরা অবধি সময়ের জন্য কাফফারাস্বরূপ এবং হজে মাবরুর-মকবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (মুসলিম : ৩৩৫৫)।

হজ পালনে দারিদ্র্য ও গোনাহ দূর হয় : কিছু কিছু মুসলমান হজ পালনে নিজের ধনসম্পদ ব্যয় হওয়াকে খুবই ভয় পাই। অথচ হজ পালনের মাধ্যমে বান্দার দারিদ্র্য ও গোনাহ দূরীভূত হয়। কারণ হজ করা মানে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা। সুতরাং হজের জন্য স্বীয় সম্পদ খরচে কৃপণতা করার কোনো কারণ নেই। সাধারণত হাপর যে রকম লোহার ময়লা দূর করে হজ সে রকম বান্দার গোনাহ দূর করে। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরা সঙ্গে সঙ্গে করো। কেননা তা দারিদ্র্য ও গোনাহ দূর করে। যেভাবে হাপর লোহা ও সোনা-রোপার ময়লা দূর করে। কবুল করা হজের সওয়াব জান্নাত ব্যতীত কিছুই নয়।’ (তিরমিজি : ৮১৫)।

হজ বর্র্জনের ভয়াবহ পরিণাম : প্রতিটি কাজের ভালো-খারাপ দুটি দিক থাকে। ভালো কাজ করলে উত্তম প্রতিদান প্রাপ্তি হয়। আর মন্দ কাজ করলে পরিণাম ভোগ করতে হয়। একইভাবে হজেরও ভালো-মন্দ দুটি দিক রয়েছে। শরিয়ত কর্তৃক কোনো প্রকার বাধা না থাকলে অবশ্য হজ পালন করতে হবে। কারণ প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর হজ করা ফরজ। সুতরাং বিনা ওজরে কোনো সামর্থ্যবান মোমিন হজ পালন থেকে বিরত থাকতে পারবে না। যদি কোনো মোমিন হজের নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পরও হজ না করে, তাহলে সে ইহুদি-নাসারা হয়ে মারা যাবে। এটাই হবে হজ বর্জনের ভয়াবহ পরিণাম। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যাকে প্রচ- অভাব অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর রোগ বাধা দেয়নি, অথচ সে হজ না করে মরতে বসেছে, মরুক সে যদি চাই ইহুদি হয়ে, আর চাই নাসারা হয়ে। (দারেমি)।

হজ পালনকারীরা আল্লাহর দাওয়াতি যাত্রী দল: হজ হলো আত্মশুদ্ধির আন্তর্জাতিক দাওয়াতি সমাবেশ। এতে মুসলিম উম্মাহ সমবেত হয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভে নিজেকে সোপর্দ করে দেয় এবং নিজ গোনাহ মার্জনার জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়া করে। তাই আল্লাহ তায়ালা হজ পালনকারীদের সম্মান-মর্যাদায় ভূষিত করেন। আর হাদিসে হজ ও ওমরা পালনকারীদের আল্লাহর দাওয়াতি কাফেলা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘হজ ও ওমরা পালনকারীরা হচ্ছে আল্লাহর দাওয়াতি যাত্রী দল। অতএব তারা যদি তাঁর কাছে দোয়া করে, তিনি তা কবুল করেন এবং যদি তাঁর কাছে ক্ষমা চায় তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে মাজাহ : ৩০০৪)।
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর যাত্রী হলো তিন ব্যক্তি ১. গাজি, ২. হজ পালনকারী ও ৩. ওমরাকারী।’ (নাসাঈ : ২৬৩৭)।

হজে যাত্রাকারী ব্যক্তির পথিমধ্যে ইন্তেকাল হলেও হাজীর সওয়াব পাবেন : অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ হজের উদ্দেশ্যে বের হলেও মাঝপথে শারীরিক রোগে আক্রান্ত হয়ে অথবা কোনো দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। যার দরুন হজ পালন সম্ভব হয় না। এ ধরনের হজগমনকারী ব্যক্তি হজের সওয়াব পাবেন বলে হাদিসে সুসংবাদ শোনানো হয়েছে।

এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ, ওমরা অথবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে, অতঃপর পথিমধ্যে মারা গেছে, তাহলে তার জন্য গাজি, হাজী ও ওমরাকারীর সওয়াব লেখা হবে। (বায়হাকি)।

লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর