‘উত্তরাধিকার’ দাবি নিয়ে মাঠে সায়রা ও নীনা

স্বামীর সূত্রে উত্তরাধিকারী হতে চান সিলেটের দুই নারী। রাজনীতিতেও চান পাকাপোক্ত অবস্থান। স্বামীর মতো দাপিয়ে বেড়াতে চান ময়দান। এ কারণে দুই জনের স্বামীর মৃত্যুর পর তারা চলে এসেছেন রাতারাতি আলোচনায়। যদিও স্বামীর জীবদ্দশায় তারা ছিলেন অন্তরালে। রাজনীতি কিংবা নেতৃত্ব দেয়ার মতো তাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই। এরপর স্বামীর স্থলাভিষিক্ত হতে দুই জনই মনেপ্রাণে মুখিয়ে আছেন। এর মধ্যে একজন হলেন মৌলভীবাজারের প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী সায়রা মহসিন। আর অপরজন হলেন সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত আব্দুজ জহির চৌধুরীর স্ত্রী নীনা চৌধুরী। প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর স্ত্রী সায়মা মহসিনকে নিয়ে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গেছে মৌলভীবাজারে। খোদ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী বলয়ের নেতারা তাকে নিয়ে সৈয়দ মহসিন আলীর নির্বাচনী মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। আর সিলেটের নীনা চৌধুরী যদিও তেমন শোরগোল করছেন না, তবে তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দিকে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত তার দিকে এলে তিনি হাসিমুখে তা গ্রহণ করবেন বলে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমকে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে, স্বামীর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশকারী দুই নারীকে নিয়ে দলের ভেতরে চলে নানা কৌতূহল। যারা ইতিমধ্যে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসকের চেয়ারে বসার জন্য মুখিয়ে আছেন তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ‘আবেগপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত না নিলে অন্যরা পেতে পারেন দলের সমর্থন। ‘আবেগপূর্ণ’ সমর্থন নিয়ে ভয়ও ঢুকেছে নেতাদের মনে। এ কারণে অনেকেই দুটি পদের জন্য লবিং শুরু করলেও শেষ মুহূর্তে তারা দুই নারীকেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বলে মনে করছেন। মৌলভীবাজার-৩ আসনে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। মন্ত্রী হয়েও সহজ কথা সহজে বলা ও সাদাসিধে আচরণের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য ছিলেন তিনি। দুর্নীতি কিংবা রাজনৈতিক নোংরামি তাকে স্পর্শ করেনি। ফলে সৈয়দ মহসিন আলী শুধু মৌলভীবাজারেরই ছিলেন না গোটা সিলেট বিভাগেই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভরসাস্থল। মৌলভীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে টানা ৩ বার চেয়ারম্যান হওয়া ছাড়াও সৈয়দ মহসিন আলী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত করেন বিএনপির অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানকে। আর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে তিনি মৌলভীবাজার জেলায় আওয়ামী লীগ থেকে একমাত্র পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী তাকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। মন্ত্রী থাকাকালে সহজ কথা সহজে বলার কারণে নানাভাবে সমালোচনার মুখে পড়েন সৈয়দ মহসিন আলী। নানা সমালোচনায় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তিনি সবকিছু সামলে নিয়েছেন সহজে। গত ১৪ই সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দিনের রাজনীতির বিচরণক্ষেত্র মৌলভীবাজার-৩ সদর আসনটি শূন্য হয়ে যায়। এই শূন্যস্থান নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। গোটা সিলেট বিভাগের রাজনীতি এসে মিশে যাচ্ছে এই আসনের উপ-নির্বাচনে। ইতিমধ্যে এই আসন থেকে প্রার্থী হতে ডজনখানেক নেতা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এর মধ্যে মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন প্রয়াত সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী সায়রা মহসিনও। ইতিমধ্যে তাকে নিয়ে মৌলভীবাজারের স্থানীয় রাজনীতিতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকে মত উঠেছে সৈয়দ সায়রা আলীর পক্ষে। এই মতের সঙ্গে একমত সায়রা মহসিনও। তিনি নিজেও স্বামীর আসনে স্থলাভিষিক্ত হতে চাইছেন। এদিকে, গত সোমবার মন্ত্রীর বাড়িতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের এক যৌথ বর্ধিত সভায় সায়রা মহসিনকে প্রার্থী দেয়ার দাবি তোলা হয়েছে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মসুদ আহমদ ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান লোকমানের যৌথ সভাপতিত্বে তিন সহস্রাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তারা সায়রা মহসিনের প্রতি একক সমর্থন ঘোষণা করেন। তবে, দলের সিনিয়র অনেক নেতা জানিয়েছেন, রাজনীতিতে স্বামীর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সুযোগ খুব কম। এর কারণ আওয়ামী লীগ বড় দল। এখানে নেতা কিংবা প্রার্থীর অভাব নেই। সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রীর চেয়ে আরও ভাল ভাল প্রার্থী রয়েছেন। সুতরাং সবকিছু নির্ভর করবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তবে, মহসিন আলীর স্ত্রী সায়রা বানু এবার ভোটের মাঠে অনেকটা ফ্যাক্টর হয়ে উঠবেন এটা মনে করছেন স্থানীয় নেতারাও। ওদিকে, সিলেটের জেলা পরিষদের নতুন প্রশাসক নিয়োগ নিয়েও আওয়ামী লীগে চলছে তোলপাড়। ইতিমধ্যে প্রশাসক প্রার্থী নিয়ে দলের ভেতরে ভেতরে বিভক্তিও চলছে। আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসকের পাশাপাশি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ নিয়ে ফয়সালা হয়ে গেছে। ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবেই দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম রয়েছেন অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। কিন্তু ফয়সালা হচ্ছে না জেলা পরিষদের প্রশাসক পদ নিয়ে। ইতিমধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সহ-সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাবেক সভাপতি আ ন ম শফিকুল হক তিনজনই নিজেরা নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। এই অবস্থায় স্বামীর উত্তরাধিকার হতে চান প্রয়াত আব্দুজ জহির চৌধুরীর স্ত্রী নীনা চৌধুরীও। জেলা পরিষদের প্রশাসক হতে আগ্রহীদের তালিকায় এবার নাম ওঠে এসেছে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির নাম। স্বামীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এই চেয়ারে বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। সিলেটে মহিলা আওয়ামী লীগে যে কয়েকজন নেত্রী রাজনীতিতে সক্রিয় তার মধ্যে অন্যতম নীনা চৌধুরী। নিঃসন্তান নীনা চৌধুরী রাজনীতি নিয়েই জীবনের বাকি সময় কাটিয়ে দিতে চান। স্বামীর মতো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেই পার করে দিতে চান বাকি জীবন। নীনা চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি শেখ হাসিনার আস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শেখ হাসিনা তাকে কোন দায়িত্ব দিলে তিনি তা আস্থার সহিত পালন করতে প্রস্তুত আছেন। এদিকে, দলীয় ফোরামেও ইতিমধ্যে নীনা চৌধুরীকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আর তার সম্মতির কারণে ইতিমধ্যে লবিং শুরু করা নেতারাও অনেকটা বেকায়দায় রয়েছেন। তবে, সিলেট ও মৌলভীবাজারের এই দুটি পদ নিয়ে দুই নেতার দুই স্ত্রীর প্রতি দলের কিংবা দলীয় প্রধানের সমর্থন এলে সেটি ‘আবেগপূর্ণ সমর্থন’ হবে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। এর কারণ দুই বর্ষীয়ান রাজনীতিককে শূন্য আসন পূরণ করতে হলে নিজ দলের ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাদের প্রতি সমর্থন দেয়াকে ইতিবাচক হবে বলে মনে করছেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর