সাহসী কাউন্সিলর চান ভোটাররা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাদক, সন্ত্রাস আর ছিনতাইকারীদের দৈরাত্ম রাজশাহী নগরীর ২৭ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রায় সময়ই ওয়ার্ড দুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি থাকে। এতে জনমনে বিরাজ করে অজানা আতঙ্ক। তাই এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটাররা চাইছেন, এমন কাউকে কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে, যিনি এলাকার এসব সমস্যা সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করতে পারবেন। নগরীর শিরোইল শান্তিবাগ, বালিয়াপুকুর এবং ওপর ভদ্রাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি মহল্লা নিয়ে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এলাকাটির আতঙ্ক ‘বাইক বাহিনী’। প্রায়ই মোটরসাইকেলে করে ছিনতাইকারীরা এ এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। আছে মশার দাপট। এ ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ১২০ জন। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হতে চান পাঁচজন।

তারা হলেন- আনোয়ারুল আমিন আযব (টিফিন ক্যারিয়ার), নুরুল হুদা সরকার (ঠেলাগাড়ি), মনিরুজ্জামান (ঘুড়ি), মাহমুদ হোসেন (লাটিম) ও সফিউর রহমান (ট্রাক্টর)। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা আনোয়ারুল আমিন বর্তমান কাউন্সিলর। আর আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হুদা সরকার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে চারটি মামলা বিচারাধীন। কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিনের বিরুদ্ধেও আছে চারটি মামলা। তাই এলাকার উন্নয়নে তিনি সময় দিতে পারেননি বলে অভিযোগ আছে।

কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন বলেন, আমার ওয়ার্ডে কিছু সমস্যা রয়েছে। দায়িত্ব পালনকালে এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। বর্তমানেও কিছু রাস্তা এবং ড্রেনের কাজ চলছে। তবে সিটি করপোরেশন থেকে অর্থ বরাদ্দ কম পাবার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নাগরিক সুবিধা বাড়াতে অনেক কাজ করতে পারিনি। তবে এবার নির্বাচিত হলে আগামীতে এসব কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।

সাবেক কাউন্সিলর নুরুল হুদা সরকার বলেন, আমি দায়িত্ব পালনকালে ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট এবং ড্রেন নির্মাণসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। কিন্তু বর্তমান কাউন্সিলর এসব সংস্কারে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে নাগরিক দুর্ভোগ আর ভোগান্তির মধ্যে বাস করছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। আশা করছি, অতীত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভোটাররা এবার আমাকে নির্বাচিত করবেন।

আনোয়ারুল আমিন ও নুরুল হুদার পাশাপাশি এ ওয়ার্ডের অন্য দুই প্রার্থী মাহমুদ হোসেন ও সফিউর রহমানের নামও ভোটারদের আলোচনায় রয়েছে। তবে ভোটাররা বলছেন, কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন আযব, সাবেক কাউন্সিলর নুরুল হুদা সরকার এবং মনিরুজ্জামানের মধ্যেই ভোটযুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাকবে। এ তিন প্রার্থীর যেকোনো একজনকে বেছে নেবেন তারা।

এ ওয়ার্ডের ওপর ভদ্রা এলাকার কলেজশিক্ষক আফসার হোসেন বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে মাদকদ্রব্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রুত বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। পাশাপাশি দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে ময়লা জমে মশার উৎপাত থাকে। এসব সমস্যা যিনি সমাধান করতে পারবেন তিনি তাকেই ভোট দেবেন।

এদিকে নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডেও ভোটের প্রচারের শেষ মুহুর্তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নিজের প্রতীকে ভোট প্রার্থনায় তারা যাচ্ছেন এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি। চাইছেন ভোট, দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। নগরীর পূর্ব পাশের কাজলা, বাজে কাজলা, ধরমপুর, বিনোদপুরসহ আশপাশের আনেকগুলো মহল্লা নিয়ে বিশাল এই ওয়ার্ডের অবস্থান। এখানে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন আটপ্রার্থী।

তারা হলেন-আশরাফুল হাসান বাচ্চু (টিফিন ক্যারিয়ার), লিয়াকত আলী (লাটিম), রফিকুল ইসলাম (রেডিও), মাইনুল হক মানা (কাঁটা চামচ), ফারুক হোসেন (ঠেলাগাড়ি), আব্বাস উদ্দিন আবদুল্লাহ (ট্রাক্টর), একেএম জামান জুয়েল (মিষ্টি কুমড়া) ও আনসার আলী (ঘুড়ি)। এদের মধ্যে আশরাফুল হাসান বাচ্চু ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে মামলা আছে তিনটি। এছাড়া অন্য প্রার্থীদের মধ্যে আনসার আলীর  বিরুদ্ধে সাতটি এবং রফিকুল ইসলামের আছে ১৪টি মামলা।

ওয়ার্ডটিতে মাদকদ্রব্যের ছড়াছড়িসহ নানা নাগরিক ভোগান্তি রয়েছে। কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান বাচ্চু বলেন, মাদকদ্রব্য নির্মূলে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিরোধীদের সহযোগিতা না পাবার কারণে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। আর কাঁচা ও ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট এবং ড্রেন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আগামীতে নির্বাচিত হলে সকল নাগরিক সমস্যা নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

স্থানীয়রা জানান, এ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম বাচ্চু, মতিহার থানা বিএনপির সভাপতি আনসার আলী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন আব্দুল্লাহর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। জামায়াত সমর্থক লিয়াকত আলীও থাকতে পারেন ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তবে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ভোটারদের ভোট আশরাফুল, আনসার ও লিয়াকতের ব্যালটে ভাগাভাগি হয়ে গেলে এগিয়ে থাকবেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ।

এলাকার ভোটাররা জানান, আব্দুল্লাহ গত সিটি নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু পরাজিত হয়েও তিনি এলাকার মানুষের পাশে থেকেছেন। বিপদে-আপদে সহযোগিতা করেছেন। তার দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও আব্দুল্লাহ এলাকায় কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেননি। অভিযোগ নেই কোনো অপকর্মের। তাই এবার ভোটাররা তার ব্যাপারেই চিন্তাভাবনা করছেন।

আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য মহল্লাগুলো অবহেলিত। গত ভোটে পরাজিত হয়েও আমি বাড়ি ঢুকে যাইনি। মানুষের পাশে থেকেছি। সাধ্যমতো তাদের সেবা করার চেষ্টা করেছি। এ কারণে তারা আমাকে নির্বাচিত করবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

ধরমপুর মহল্লার স্কুলশিক্ষক পারভিন খাতুন বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরেই অবহেলিত। ওয়ার্ডে কাঁচা ও ভাঙা রাস্তা, মাদকদ্রব্যের ছড়াছড়িসহ নানান ধরনের নাগিরক ভোগান্তি রয়েছে। ছিনতাইকারীদের দৈরাত্মে রাস্তায় বের হতেও ভয় পাই। আমি চাই, এলাকায় এমন একজন সাহসী ব্যক্তি কাউন্সিলর নির্বাচিত হোক, যিনি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।

সূত্রঃ ঢাকাটাইমস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর