বিএনপিকে দেয়া কথা রাখলো না জামায়াত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) থেকে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনার কথা জানিয়েছিল জামায়াত। এমনকি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও জামায়াতের প্রচারনার বিষয়টি একাধিকবার সাংবাদিকদের জানান। জামায়াত মাঠে নামার ঘোষণাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সজাগ ছিলেন। বিন্তু বৃহস্পতিবার সারাদিন নির্বাচনী প্রচারনায় জামায়াতের নেতা থেকে শুরু করে কোন কর্মীকেও দেখা যায়নি। এমনকি জামায়াতের ছাত্রসংগঠন শিবিরকেও দেখা যায় নি।

রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, আশ্বাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত বিএনপির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে জামায়াত। তারা নির্বাচনী প্রচারনার কথা দিলেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখলো না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে রাজশাহীতে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য দেখা দেয়। জামায়াতের পক্ষ থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ভোটে নির্বাচন করার কথা জানানো হয়। পরে এই শর্ত তুলে নেয় জামায়াত। এ ঘটনার কিছুদিন পরেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) নির্বাচন করার কথা জানানো হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে। জামায়াতের এমন বক্তব্যে বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। এই আসনটিতে দীর্ঘদিন থেকে গণসংযোগ করে আসছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। জামায়াতের এমন মন্তব্যে তার অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এরপরও বিষয়টি চাপা দিয়ে বিএনপি নেতারা দাবি করতে থাকেন জামায়াত তাদের সঙ্গে আছেন। সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের জানান ২৬ জুলাই থেকে জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারনায় নামবে। একই কথা জানান মহানগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুও।

বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করে আওয়ামী লীগও। বুধবার (২৫ জুলাই) জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের প্রতিহত করারও ঘোষণা দেয়। বিশেষ করে ২০১৩ -১৪ সালে রাজশাহীতে জামায়াত -বিএনপির যে তান্ডব, এটি মাথায় রেখে নির্বাচনের দিন সহিংসতা করতে পারে এমন আশঙ্কা করে আওয়ামী লীগ নেতারা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম কামাল বলেন, জামায়াত বিএনপি নির্বাচন সহিংসতা করে ভন্ডুল করার ষড়যন্ত্র করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশপাশি দলীয় নেতাকর্মীকে সজাগ থাকার আহবান জানান তিনি।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পুরো মহানগরী কোথাও জামায়াত বা শিবিরের কোন কর্মীকে ধানের শীষের প্রচারনায় দেখা যায়নি। নগরীর বুলনপুর থেকে শুরু করে নওদাপাড়া, মেহেরচন্ডি, বিনোদপুর, সাগরপাড়া, শালবাগান, শিরোইলসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গেলেও তাদের কোন প্রচারনা চোখে পড়েনি। বৃহস্পতিার বুলবুল প্রচারনা চালান নগরীর শালবাগান এলাকা থেকে শুরু করে শাহমুখদুম থানা এলাকা পর্যন্ত। কিন্তু তার প্রচারনাতেও দেখা মেলেনি জামায়াত বা শিবির নেতাকর্মীদের।

জামায়াতের নির্বাচনী প্রচারে অংশ না নেয়ার বিষয়ে জামায়াতের কোন নেতা কথা বলতে রাজি হননি। আর এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ও বুলবুলের প্রধান এজেন্ট তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, আমি জানি না তারা কিভাবে কাজ করছে। এ বিষয়ে আমাকে জেনে জানাতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকেও জামায়াতের কোন নেতা তাদের সঙ্গে ছিলেন না।

জামায়াতের নির্বাচনী প্রচনায় অংশ নেয় না নেয়ার বিষয়টি কেমনভাবে দেখছেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী এ গোষ্টিটি সম্পর্কে আমরা সচেতন। এরা প্রকাশ্য না নামলেও তারা নির্বাচনে সহিংসতা চালানোর ষড়যন্ত্র যে করছেনা তা কোনভাবেই বলা যাবে না। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে এমনকি কেন্দ্রগুলোতেও জামায়াত শিবির যেন কোন প্রকার নৈরাজ্য করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ থাকবো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াত কি করলো এটা আমাদের দেখার বিষয় না। বর্তমানে নৌকার জোয়ার শুরু হয়েছে, তা আগামি ৩০ তারিখে ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের উপ- প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ লেমন বলেন, জামায়াত প্রচারে নামলেও তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে প্রতিহত করা হবে। নৈরাজ্য সৃষ্টির কোন সুযোগ দেয়া হবে না তাদের।

প্রসঙ্গত, সিটি নির্বাচনে বিএনপিকে জামায়াতের সমর্থন দেয়া না দেয়া বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলম ইমন তার ফেসবুকে লেখেন ‘২০১৩ সালে জামায়াত-শিবির বুলবুল ভাই নির্বাচনী মাঠে ছিল অথচ এবার ২০১৮ সালে নাই কেন? এই ব্যর্থতা কার? রাজশাহী বিএনপির ঘাটি হওয়া সত্বেও জামায়াতের সঙ্গ বিহীন বুলবুল ভাই বিজয়ী হওয়া তো দুরের কথা ঠিক মত প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসতে পারবে কি না তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বিএনপির বর্তমান কার্যক্রমের ফলে অগ্রিম শুভেচ্ছা রাসিকের আগামী মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ভাইকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর