এবছর চলনবিলে ১৫০ মেট্রিক টন শুটকি উত্‍পাদন হবে

চলনবিল অঞ্চলের পানি নামতে শুরু করায় জেলেদের জালে প্রতিদিন শতশত টন মাছ ধরা পড়ছে৷ আর এই মাছকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে চলনবিলের তাড়াশ সহ ৯টি উপজেলায় প্রায় ৩ শতাধিক শুটকির চাতাল৷ মত্‍স্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিলের সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহাজাদপুর ,পাবনার চাটমোহর ,ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরম্নদাসপুর, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিস্তীর্ন বিলের পানি নামতে শুরু করেছে৷ পানি নামার সাথে সাথে বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছ টেংরা, পুটি, খলসে, বাতাসী, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শৌল ,গুতম, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈ, সহ নানা প্রজাতির সু-স্বাদু মাছ৷ চলনবিলের হাট-বাজারে কাচাঁ মাছ বিক্রি হয়ে থাকে উত্তরবঙ্গের মধ্যে দেশীয় প্রজাতির মাছের শুটকি তৈরি অসংখ্য চাতাল চলনবিলে মূলতঃ বৃষ্টিহীন আশ্বিন,কার্ত্তিক ও অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত চালু থাকে ৷এ সব চাতালে বিশেষ করে যে মাছ গুলির শুটকি করা হয় সেগুলো হলো টেংরা ,পুটি, খলসে, বাতাসী, চেলা, মলা, ঢ়েলা, টাকি,গুতম, চিংড়ী, টাকি ইত্যাদি মিঠা পানির সু-স্বাদু মাছ৷ চলনবিলের শুটকির কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৷ এর মধ্যে দেশীয় প্রজাতির চলনবিলের চাতালে তৈরি শুটকি সৈয়দপুর,রংপুর,দিনাজপুর,ঢাকা,নারায়নগঞ্জ এমনকি বন্দর নগরী চট্রগ্রামেও উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে৷

স্থানীয়রা জানান, এক দশক আগেও চলনবিলে প্রচুর পরিমান ছোট মাছ পাওয়া যেত৷ আর এ মাছ আশ্বিন থেকে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত এত বেশি পাওয়া যেত যে,এ অঞ্চলে কাচা মাছের চাহিদা পূরনের পর উদ্বত্ত মাছ স্বল্প মূল্যে কিনে শুটকি তৈরি করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে অনেক শুটকি চাতালের মালিক লাখ লাখ টাকা উপার্জন করতেন৷ কিন্তুু সাম্প্রতিক সময়ে চলনবিল অঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় সকল ধরনের মাছই দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়ে গেছে৷ ফলে শুটকির চাতালে মাছের অভাব রয়েছে৷ তার পরেও শুটকির মৌসুমে চলনবিলে এখনও প্রায় ৩শতাধিক অস্থায়ী শুটকি তৈরি করা হচ্ছে৷ ইতিমধ্যে চলনবিলের মাছ পাওয়া যায় এমন স্থানগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শুটকি তৈরির চাতাল মালিকরা আস্থানা গড়েছে৷ তারা স্থানীয় হাট-বাজার থেকে মাছ কিনে চাতাল গুলোতে মাছ শুকানোর কাজ শুরম্ন করেছে৷ এ কাজে চলনবিলের দিন মুজুর নারী-পুরুষ দিন হাজিরায় কাজ করেছেন৷
তাড়াশ এলাকার চাতাল মালিক আহম্মেদ আলী জানান,শুটকি ব্যবসায় অনেক লাভ রয়েছে৷ তা ছাড়া চলনবিলের মাছের শুটকির চাহিদাও ব্যপক্ তবে আগের মত পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যায় না৷ আবার যা পাওয়া যায় তার দাম অনেক বেশি৷ এলাকার শুটকির চাতাল ঘুরে দেখা গেছে,শুটকি তৈরির ভরা মৌসুমকে কাজে লাগাতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ চাতাল গুলোতে টেংরা, পুটি, খলসে ,বাতাসী, চেলা, মলা, ঢেলা ,টাকি, গুতম, চিংরী ,টাকি সহ নানা মাছ চাটাইয়ে শুকানোর জন্য ছিটিয়ে রাখা রয়েছে৷শুটকি তৈরি কাজে নিয়োজিত শ্রমিক আরজিনা খাতুন জানান,প্রতি ৩ কেজি মাছে ১ কেজি শুটকি হয়ে থাকে ৷ যার বাজার মূল্যে প্রকার ভেদে ৪৫০ থেকে ৮৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে৷

অবশ্য শুটকি ব্যবসায়ীরা জানান,শহরাঞ্চলে এর দাম একটু বেশি ৷ চলনবিলে শুটকি তৈরি শুরু হলেও তা বাজারজাত করতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে৷তারা শুটকি তৈরি করে প্যাকেট জাত করে৷ তারপর শুস্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন৷ আবার কেউ কেউ চাতালে তৈরি শুটকি মাছ গুলো ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে চাতাল থেকেই পাইকারদের নিকট বিক্রি থাকেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর