আ’লীগে বিভক্তি, বিএনপিতে প্রার্থীজট, স্বস্তি জাতীয় পার্টিতে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কচুয়া উপজেলা নিয়ে চাঁদপুর-১ আসনে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গেছে কয়েক মাস বাকি থাকতেই। ঘোড়গার বিলের ‘কৈ’ এবং কুলের (বড়ই) জনপ্রসিদ্ধ এ আসনটি একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক ছাড়াও নানা অজুহাতে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। করছেন গণসংযোগও। অনেকে আবার গণসংযোগের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি পোস্টার লিফলেট ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন।

প্রার্থী নিয়ে ভোটারদের মাঝেও চলছে নানা হিসাব। এমপি নির্বাচন এলেই উত্তর দক্ষিণ আঞ্চলিকতার সুর ওঠে। আগামী নির্বাচনেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বড় দু’দলে কচুয়া দক্ষিণে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। উত্তরে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে মো. এমদাদুল হক রুমন প্রচার চালাচ্ছেন।

এ আসনে বিশেষ করে নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর কোনো একক দলের প্রভাব লক্ষ করা যায়নি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রয়াত মিসবাহ উদ্দীন খান এমপি হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির অধ্যক্ষ আবুল হাসানাত।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন ও ২০০১ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির আনম এহসানুল হক মিলন। পরে মিলনকে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হন সাবেক আমলা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পরে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন ড. মহীউদ্দীন খান।

আগামী নির্বাচনে এ আসনে বড় দুই দল থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা রয়েছে। আওয়ামী লীগে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিকল্প হিসেবে এলাকায় সরব রয়েছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন।

এদিকে এহসানুল হক মিলনের বিকল্প হিসেবে দু’জন প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। ফলে বড় এই দুই দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। চূড়ান্ত মনোনয়নের আগে এই বিভ্রান্তি কতটুকু কাটবে তা বলার সময় এখনও আসেনি। এ নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা এমদাদুল হক রুমন। তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এমপি হওয়ার আগেই ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেকনোক্রেট কোটায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হন। পরে এমপি হওয়ার পর কচুয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেন তিনি। তার এই উন্নয়ন এখনও কচুয়াবাসীর মুখে মুখে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ মনে করছেন আগামী নির্বাচনে ড. মহীউদ্দীনেরই মনোনয়ন পাওয়া উচিত। ঢাকায় বসবাস করলেও প্রতি সপ্তাহেই তিনি এলাকায় আসছেন। অংশ নিচ্ছেন সভা সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে।

কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী পাটওয়ারী বলেন, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি হওয়ার পর অবহেলিত কচুয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আমার বিশ্বাস আগামীতে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন এবং বিজয়ী হবেন।

অন্যদিকে তৃণমূল উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের পক্ষে সক্রিয়। তিনি সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকায় তিনি সক্রিয়।

পাশাপাশি এলাকায় মহিলা কলেজ, হাসপাতালসহ বেশ কিছু সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। প্রতি সপ্তাহে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সভা সমাবেশ, কর্মী সভা করে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে তিনি গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন বলেও এলাকায় আলোচনা রয়েছে।

এ নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান হাতেমের সঙ্গে। তিনি সাংবাদিককে বলেন, তৃণমূল ও দলীয় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোলাম হোসেনকে মনোনয়ন দেবেন বলে আশাবাদী। তবেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে।

এ নিয়ে কথা হয় গোলাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি সাংবাদিককে বলেন, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের সেবা করার সর্বোচ্চ মাধ্যম। তবে এলাকায় কাজ করতে গিয়ে নানভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। তার পরও কাজ করে যাব। বিচার করবে জনগণ।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন একাধিক মামলার আসামি হয়ে এখন বিদেশে রয়েছেন। তৃণমূল বিএনপি বলছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলনের বিকল্প নেই।

তবে দলের দুর্দিনে ও মিলনের অনুপস্থিতিতে মালয়েশিয়া শাখা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন মাঠে নেমে পড়েছেন। তিনি নানাভাবে নিজের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন ভোটারদের কাছে। মোশাররফ হোসেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। দুর্দিনে কচুয়া বিএনপির সঙ্গে থাকায় তার প্রতি দলের অনেকেই সহানুভূতিশীল। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মো. হুমায়ুন কবির। সম্প্রতি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়ের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তাকে জেলে যেতে হয়। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি প্রকৌশলী আহম মনিরুজ্জামান দেওয়ান মানিক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

কচুয়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান দেওয়ান মানিক বলেন, দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের হয়ে কাজ করে আসছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মূল্যায়ন করবে এবং মনোনয়ন পেলে আসনটি দলকে উপহার দিতে পারব।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, মোশাররফ ভাই দুর্দিনে দল ও নেতাকর্মীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি তিনিই বিএনপির মনোনয়ন পাবেন।

এ ছাড়া এহসানুল হক মিলনের স্ত্রী, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নাজমুন নাহার বেবী, সাবেক এমপি প্রয়াত রফিকুল ইসলাম রনির স্ত্রী শামিমা আক্তার রনি, লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেতা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম মজুমদারও মনোনয়ন তালিকায় রয়েছেন।

একটি সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচনে এহসানুল হক মিলন কোনো কারণে মনোনয়ন না পেলে তার স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবী মনোনয়ন পেতে পারেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কচুয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মো. এমদাদুল হক রুমন একক প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন।

একটি সূত্র বলছে, এ আসনে তার হাত ধরেই জাতীয় পার্টি অনেকটা শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পর এমদাদুল হক রুমনের উদ্যোগে কচুয়ার ১২টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার মধ্যে ৯টি ইউনিয়নে সম্মেলনে মাধ্যমে কমিটি হয়েছে।

এ ছাড়া উপজেলার যুবসংহতি, ছাত্রসমাজ ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন ও ১১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০৫টিতে কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। জানতে চাইলে এমদাদুল হক রুমন জানান, চাঁদপুরের মধ্যে কুচয়ায় জাতীয় পার্টির অবস্থান সবচেয়ে ভালো।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের বৈরিতা ও অসহিষ্ণুতা ভোটারদের জাতীয় পার্টির প্রতি আকৃষ্ট করছে। বেড়েছে জনসমর্থনও। জাতীয় পার্টি যদি জোটগত নির্বাচন করে, তবে অবশ্যই এ আসনের দাবিদার জাতীয় পার্টি।

সূত্রঃ যুগান্তর

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর